মিরপুর টেস্টে না থেকেও প্রবলভাবে আছেন সাকিব

বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সংবাদ সম্মেলনে বেশিরভাগ প্রশ্নই সাকিব আল হাসানকে ঘিরে। সাকিবকে নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব দিতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এইডেন মার্করামকেও। দুই অধিনায়কের কথাবার্তা শেষ হতেই আবার সাকিবকে নিয়ে উত্তাপ ছড়ালো স্টেডিয়ামের বাইরের আঙিনায়। এই উত্তাপ রীতিমতো মারামারি পর্যন্ত গড়াল।
সোমবার সকাল ১০টা থেকে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজের প্রথম টেস্ট। তবে খেলা নিয়ে আলাপ সামান্যই। পুরো মাঠের আবহ জুড়ে সাকিবের না থাকা। না থেকেও তিনি তাই আছেন প্রবলভাবে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাংসদ থাকায় সাকিব বর্তমান ক্ষমতাসীন সমর্থকদের রোষনলে আছেন। দেশের বাইরে বাংলাদেশের হয়ে এই সময়ে খেলতে পারলেও দেশে অবসর নেওয়ার ইচ্ছাপূরণ হয়নি তার। প্রেক্ষাপট সবারই জানা।
বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা সবাই সাকিবকে ঘরের মাঠ থেকেই বিদায় দিতে চেয়েছিলেন, তাদের কিছু পরিকল্পনাও ছিলো। সেটা না হওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন শান্ত। হওয়াটা উচিত ছিলো বলেও জানিয়েছেন অকপটে। তার শক্ত মন্তব্যে বোঝা যায় সাকিবকে আসতে না দেওয়া সমর্থন করেনি বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম।
শান্ত অবশ্য বলছেন এখন খেলার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন তারা। সাকিবের অবসর রেখে দিচ্ছেন পেন্ডিং হিসেবে।

সাকিবের পক্ষে ও বিপক্ষে দুই দলের অবস্থান ঘিরে কদিন ধরেই মিরপুরে উত্তেজনা চলছিল। রোববার সেটা চরম রূপ নেয়। দুপুরে যখন দক্ষিণ আফ্রিকা দল মিরপুরের মাঠে অনুশীলন করছিল বাইরে তখন সাকিব ভক্তরা পালন করছিলেন অবস্থান কর্মসূচি। বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থাকলেও ঘটনা মোড় নেয় অপ্রীতিকর দিকে। সাকিব ভক্তদের উপর আচমকা বাঁশ নিয়ে হামলা চালায় বহিরাগত কয়েকজন। পরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতেও ধাওয়া খায় সাকিব ভক্তরা। ওই এলাকা তখন দখলে নেয় সাকিব বিরোধীরা। বিক্ষিপ্ত হয়ে সরে যাওয়ার পর বিকেলের দিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাকিবের সমর্থনে বেশ কিছু লোক জড়ো হয়ে অবস্থান নেয় স্টেডিয়াম গেইটের দিকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই পরিস্থিতি।
এই আবহে ক্রিকেট, উইকেটের ধরণ, দুই দলের সমন্বয় নিয়ে আলাপ পড়ে গেছে পেছনের দিকে। না হলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবারের মতন টেস্টে হারানোর দারুণ সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা যেত। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১৪ টেস্ট খেলে ১২ হার আর বৃষ্টির কারণে দুই ড্র আছে বাংলাদেশের। এবার সেই পরিসংখ্যান বদলানোর সম্ভাবনা প্রবল।
সাকিব না থাকলেও বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ সহায়ক উইকেটে যথেষ্ট শক্তিশালী। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান দলে অভিজ্ঞতার ঘাটতিও বাংলাদেশকে রাখছে এগিয়ে। বাংলাদেশের মাঠে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে এই দলের কেবল টেম্বা বাভুমার, প্রথম টেস্টে চোটের কারণে তিনি আবার খেলতে পারছেন না।
দলের তিন অভিজ্ঞ তাই মার্করাম, কেশব মহারাজ আর কাগিসো রাবাদা। বাকিরা কেবল সম্ভাবনাময়।
শান্ত তাই নিজেদের এগিয়ে রেখে জেতার ব্যাপারে জোর গলায় কথা বলছেন, 'আমি বিশ্বাস করি অবশ্যই জেতা উচিত। দল খুব ভালো আমাদের। যদি আমরা ভালোভাবে আমাদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে পারি, আমাদের প্রক্রিয়ায় থাকতে পারি, এবার আমার মনে হয় ফলাফল ভিন্ন হবে (আগের চেয়ে)।'

উপমহাদেশের মাঠে সর্বশেষ ১৮টা টেস্ট হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই ক্রমাগত হারের ধারা বদলানো বাংলাদেশের মাঠে বেশ চ্যালেঞ্জের, এটা জানেন মার্করাম তবে আশাও জারি রাখছেন তিনি, 'আমরা অবশ্যই জেতার জন্য এসেছি। ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই। টেস্টে ইউনিট হিসেবে আমাদের স্কিল খুব ভালো। আমাদের জন্য এটা নতুন কন্ডিশন। সেশন ধরে ভালো খেলতে হবে। কাজটা কঠিন হলেও রোমাঞ্চকর ব্যাপার এটাই।'
Comments