যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারল না বাংলাদেশ
ব্যাটারদের ব্যর্থতায় লড়াইয়ের জন্য পুঁজি মিলল সাদামাটা। এরপর শেষ ২৪ বলে ৫৫ রানের সমীকরণ রক্ষা করতে পারলেন না বোলাররা। কোরি অ্যান্ডারসন ও হারমিত সিংয়ের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সামনে স্রেফ উড়ে গেলেন তারা। ফলে শক্তির বিচারে অনেক পিছিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের কাছে ধরাশায়ী হলো বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথম দেখাতেই তাদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের স্বাদ পেল যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার টেক্সাসের হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে হেরেছে আমেরিকানদের কাছে। টস হেরে আগে ব্যাট করে টাইগাররা পায় ৬ উইকেটে ১৫৩ রানের সংগ্রহ। জবাবে ৩ বল বাকি থাকতে ১৫৬ রান তুলে স্মরণীয় জয়ের উল্লাসে মাতে স্বাগতিকরা। অথচ ১৫তম ওভারে ৯৪ রানে পড়ে গিয়েছিল তাদের পঞ্চম উইকেট।
হারমিত দুই চার ও তিন ছক্কায় স্রেফ ১৩ বলে খেলেন ৩৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। নিউজিল্যান্ড থেকে অবসর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দলে নাম লেখানো অ্যান্ডারসনের ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে দুই ছক্কায় ৩৪ রান। দুজনই থাকেন অপরাজিত। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মাত্র ২৮ বলে আসে ৬২ রান।
স্রেফ ২৬তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিঃসন্দেহে এটি তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে আইসিসির টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে কেবল একটি জয়ই পেয়েছিল তারা, ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। অন্যদিকে, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই হার বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে দিতে পারে বড় ধাক্কা।
ডেথ ওভারে বাংলাদেশের বোলিং ছিল ছন্নছাড়া। ১৭তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান দুই ছক্কাসহ দেন মোট ১৭ রান। দুটিই মারেন ভারতে জন্ম নেওয়া বাঁহাতি হারমিত। তখন থেকেই একটু একটু করে ম্যাচ ফসকে যেতে শুরু করে সফরকারীদের আঙুল থেকে। পরের ওভারে শরিফুল ইসলাম ১৪ রান খরচ করেন। ওই ওভারে একটি করে চার ও ছক্কা হাঁকান হারমিতই।
মোস্তাফিজ আক্রমণে ফিরলে তার পঞ্চম বল সীমানাছাড়া করার পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের করা শেষ ওভারের প্রথম বলেও আধা ডজন রান আনেন অ্যান্ডারসন। ফলে ৬ বলে ৯ রানের সমীকরণ নেমে আসে ৫ বলে ৩ রানে। অ্যান্ডারসন পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দেন হারমিতকে। তিনি এক্সট্রা কভার দিয়ে চার মেরে শেষ করে দেন খেলা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভালো শুরুর পর বাংলাদেশ প্রথম উইকেট পায় ভাগ্যের ছোঁয়ায়। রানআউট হয়ে ১০ বলে ১২ রান করে বিদায় নেন আমেরিকান অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল। তখন ইনিংসের চতুর্থ ওভার। পরের উইকেটের জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় নবম ওভার পর্যন্ত। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন দলকে ব্রেক থ্রু দেন অ্যান্ড্রিস গুসকে মোস্তাফিজের ক্যাচ বানিয়ে। তিনে নামা গুসের সংগ্রহ ১৮ বলে ২৩ রান।
দলীয় ৬৫ রানে গুস বিদায় নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের রানের চাকা টেনে ধরে বাংলাদেশ। সেই চাপ প্রয়োগ কাজে লাগে। দ্বাদশ ওভারে জোড়া শিকার ধরেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজ। তিনি সাজঘরে ফেরান ২৯ বলে ২৮ করা ওপেনার স্টিভেন টেইলর ও ১২ বলে ৪ করা অ্যারন জোনসকে। এরপর আরেক বাঁহাতি পেসার শরিফুল টিকতে দেননি নিতিশ কুমারকে। ১০ বলে ১০ রান করেন নিতিশ কুমার।
বাংলাদেশের বোলারদের সাফল্যের ইতি ঘটে ওখানেই। শেষ ৫ ওভারের দুটি করেন মোস্তাফিজ, দুটি অফ স্পিনার মাহমুদউল্লাহ। বাকিটিতে হাত ঘোরান শরিফুল। তবে বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসানের এক ওভার বাকি থাকলেও তাকে আক্রমণে আনেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্রিজে দুই বাঁহাতি অ্যান্ডারসন ও হারমিত থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে সেই কৌশল খাটেনি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের পাশাপাশি শান্ত ও সাকিব থিতু হতে না পারলে মাত্র ৬৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই বিপাক থেকে তারা উদ্ধার পায় পঞ্চম উইকেটে ৪৭ বলে ৬৭ রানের জুটিতে। মাহমুদউল্লাহ ত্রিশের ঘরে পৌঁছে আউট হলেও তাওহিদ হৃদয় থামার আগে করেন ফিফটি। এতে টাইগারদের পুঁজি দেড়শ ছাড়ালেও জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি।
চারে নেমে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি হাফসেঞ্চুরির স্বাদ নেন হৃদয়। তবে ৪১ রানে মাঠ ছাড়তে পারতেন। ক্যাচ দিয়েও নো বল হওয়ায় বেঁচে যান। পরে ৪০ বলে ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শের পর তিনি করেন ৫৮ রান। তার ৪৭ বলের ইনিংসে ছিল চারটি চার ও দুটি ছক্কা। ছয়ে নামা মাহমুদউল্লাহ করেন ৩১ রান। ২২ বল মোকাবিলায় দুটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন তিনি।
Comments