‘ভেতরে আসা বল নিয়ে একটু বেশি সতর্ক লিটন’
দিলশান মাধুশঙ্কার বলে এই নিয়ে তিনবার আউট হলেন লিটন দাস। এই সিরিজেই হলেন টানা দুবার। দুবারই খুলতে পারলেন না রানের খাতা। শুধু মাধুশঙ্কা নন, ওয়ানডেতে বাঁহাতি পেসারদের বিপক্ষে ৩৫ ইনিংসে লিটন কাবু হন ১৭বার। ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মতে হয়ত ভেতরে আসা বল নিয়ে একটু বেশি ভেবে ফেলছেন ডানহাতি ব্যাটার।
ওয়ানডেতে বাঁহাতি পেসারদের বিপক্ষে লিটনের গড় ১৪.৯, স্ট্রাইকরেট ৬৮.৫। আউট হয়েছেন ১৭বার। বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ফাহিম মনে করেন অনেক সময় বেশি সতর্কতা থেকেও বিপদ বেড়ে যায়, 'যে বলটা ভেতরে আসে (বাঁহাতি পেসারদের) সেই বলটা নিয়ে সে একটু বেশি সচেতন বা বেশি সতর্ক হয়। এমন হতে পারে।'
শুক্রবার চট্টগ্রামে শর্ট মিড উইকেট রেখে লিটনকে ওভার দ্য উইকেটে বল করছিলেন মাধুশঙ্কা। ভেতরে ঢোকা বল ফ্লিকের মতন করতে গিয়ে সেই ফিল্ডারের হাতেই ক্যাচ দেন তিনি। আগের ম্যাচে অফ স্টম্পের বাইরের বল টেনে বোল্ড হয়ে ফেরেন খালি হাতে। ওয়ানডেতে এই নিয়ে ১৪বার শূন্য রানে আউট হন লিটন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকেই ৭ বার।
ফাহিমের পর্যবেক্ষণ ওয়ানডেতে লিটনের ইনিংসের শুরুতে কাজ করছে আড়ষ্টতা, সেটা তৈরি হয়েছে আত্মবিশ্বাসের অভাবে, 'ক্যাজুয়ালি ঠিক না, ও নিজেও সচেতন। হয়ত বেশি সচেতন হয়ে যায়। ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাস খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। শুরুতে বল যখন স্যুইং করে তখন ব্যাপারটা জটিল হয়ে যায় আরও। নির্দিষ্টভাবে কী সমস্যা সেটা বলাটা তো সহজ না। হয় না যার নিজের উপর আস্থা আছে একদম খেলার ভেতরে ঢুকে যায়। হাত-পা ঠিকমতো চলে, ঠিক জায়গায় শরীরের ওজনটা থাকে, শরীরের দৃঢ়তা যেটা বলি, কোমলতা যদি বলে সেটা একটা জায়গায় থাকে। যখন সে রান করবে না তখন ওই জায়গাগুলো তত নিখুঁত থাকবে না। '
'যে বলটায় সে গতকাল আউট হল ওই বলটা তার সফট হ্যান্ডে নিচে খেলা কঠিন ব্যাপার ছিলো না। ওই যে শরীরটা একটু শক্ত হয়ে গেছে, আড়ষ্ট হয়ে গেছে। তার পুরো নিয়ন্ত্রণটা যে দরকার সেটার ঘাটতি আছে।'
গত ৩ বছরে সব সংস্করণ মিলিয়ে দলের সবচেয়ে বেশি ৩৯০১ রান লিটনের। শুধু ওয়ানডে ধরলে লিটন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১৪৪৮), মুশফিকুর রহিম সর্বোচ্চ ১৪৮৯। টি-টোয়েন্টিতে লিটনই সর্বোচ্চ (১১১৮), টেস্টেও তার রানই গত তিন বছরে সবার থেকে বেশি (১৩৩৫)। টেস্টে গত তিন বছরে লিটনের গড় ৪৬.০৩, কুড়ি ওভারে ২৪.৩০ গড় আর ১২৭.১৮ স্ট্রাইকরেটও বাকিদের থেকে বেশি।
ওয়ানডেতে গত তিন বছরে ৩১.৪৭ গড়ে ১৪৪৮ করেছেন। গত বিশ্বকাপেও ছিলেন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ধরলে ২৯ ইনিংসে লিটনের গড় ২৬.০৪। এই সময়ে ৫ ফিফটি করলেও সেঞ্চুরি পাননি। বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চারে নেমে রান পাননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওপেনিংয়ে ফিরে দুই ম্যাচেই ০। ওয়ানডে থেকে লিটনকে বাদ দেওয়ার দাবিও করছেন কেউ কেউ।
নাজমুল আবেদিন অবশ্য এসব কথায় একমত নন। তিনি মনে করেন এই সময়ে লিটনের পাশে থাকা উচিত পুরো দলেরই, 'লিটন উঠতি না, সে সত্যিকার অর্থে একজন ভালো মানের খেলোয়াড়। লিটনকে আমরা ব্যবহার করতে না পারলে বড় ক্ষতি বা লিটন যদি নিজেকে ঠিকমতো উপস্থাপন করতে না পারে। আমার মনে হয় ওর পাশে থাকাটা খুব জরুরি দলের। বিশেষ করে দলের সবার। যদি ধরে নিতে হয় ও আরও খানিকটা ফেইল করবে, ওর গুছিয়ে নিতে সময় লাগবে।'
'আমি যেটা বললাম না ব্যাপারটা মেন্টাল গেইম। যত বেশি চাপ দিব আমরা বাইরে থেকে ওর জন্য কঠিন হবে। আমার মনে হয় ও একবার রান করা শুরু করলে ও নিজেই অনুভব করবে, নিজের অজান্তের হাত-পা ঠিকমতো চলা শুরু করবে। স্টিফনেসের কথা যদি বলি সফটনেসের কথা যদি বলি এগুলো এমনিতেও কাজ করা শুরু করবে।'
Comments