দিল্লির সেই দুই প্রধান চরিত্রকে ছাড়া ওয়ানডে লড়াইয়ে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা
ফাল্গুন মাসের শেষ দিক, চৈত্র দাবদাহের আঁচ এই সময়েই মেলে। চট্টগ্রামে তবু এখনো শীতের আভা। রোদের আলোয় নেই তীব্র ঝাঁজ। বসন্তের আয়েশি আবহাওয়ার সঙ্গে প্রায় হুবহু মিল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে সিরিজেরও। দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস আছে প্রবল তবে সিরিজের আবহে নেই তেমন কোন উত্তাপ।
হাইপ কমে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বললেন, একম্যাচ জিতলে সব ঠিক হয়ে যায়, আবার খারাপ করলে হয় উল্টো। তবে ওয়ানডে সিরিজে উত্তাপ না থাকার কারণ হিসেবে রোজাও হতে পারে বলে মত তার। কারণ অবশ্য আরেকটা আছে। চলতি বছরটাই তো ওয়ানডের নয়।
জুন মাসে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই তো চলমান আছেই। এই বছরে তাই ওয়ানডের সূচিতে তেমন খেলাই রাখেনি আইসিসি। গত বছর বাংলাদেশ যেখানে ৩২টি ওয়ানডে খেলেছে, এই বছর খেলবে স্রেফ ৬টি। বাংলাদেশ তাও ৬টি খেলবে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারতের এমন কোন সূচিও নাই আপাতত।
এসব কারণেই কিনা সিরিজ শুরুর আগের দিন চট্টগ্রামে দর্শকদের কোন আগ্রহ পাওয়া গেল না। টিকেট কাউন্টার সারাদিনই ছিলো ফাঁকা। ধারণা করাই যায় রোজার মাসে বুধবার দুপুরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে খুব বেশি লোকের উপস্থিতি থাকবে না।
সামনে টুর্নামেন্ট নেই, ওয়ানডে সুপার লিগও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সাধারণ দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের আবেদন ক'দিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছে। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ টিকে থাকার মতন কিনা এই আলাপ সাম্প্রতিক সময়ে জোরালো।
বাংলাদেশ তাও ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পারবে, অন্তত এক বছরের পরের পরিকল্পনা এখনই নেওয়া যায়। শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও নেই। এই সিরিজে তবে কি প্রেরণা পাবেন তারা? কোচ ক্রিস সিলভারউডের মতে, 'আমার মনে হয় প্রেরণা হচ্ছে দেশের জন্য খেলা। আপনি দুটি তীব্র ভাবাবেগ সম্পন্ন জাতিকে লড়তে দেখবেন। আমার মনে হয় জার্সি পরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা প্রেরণার জন্য যথেষ্ট। এটাই আমাদের ড্রেসিংরুম অনুভব করছে।' বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্তও আলাদা কিছু মনে করেন না।
অবশ্য তারা না বললেও চলছে, আরেকটি প্রেরণা হচ্ছে দুই দলের মধ্যকার গত ক'বছরের ঝাঁজ। নাগিন ড্যান্স, টাইমড আউট বির্তকের রেশ নিয়ে এখনো দুই দলের খেলোয়াড়র টানটান উত্তেজনা। টি-টোয়েন্টি সিরিজে উইকেট নিয়ে শরিফুল ইসলামকে টাইমড আউট উদযাপন মেতে থাকতে দেখা যায়। শ্রীলঙ্কা পরে সিরিজ জিতে গোটা দল নিয়ে করেছে এই উদযাপন। ওয়ানডে জিতলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা আবার বদলা খোঁচায় ঝাল মেটাতেই পারেন। তাতে করে নিষ্প্রাণ আবহে গমগমে প্রাণের স্পন্দন ফিরবে।
বিশ্বকাপে দিল্লিতে দুই দলের সর্বশেষ ওয়ানডেতেই ঘটেছিল ইতিহাসের প্রথম টাইমড আউটের ঘটনা। সেই ঘটনার যিনি শিকার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস নেই ওয়ানডে দলে। ওই ম্যাচের বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নেই পুরো সিরিজেই। মূল দুই চরিত্র না থাকলেও টাইমড আউটের ঘটনার নিশ্চিতভাবেই থাকবে। সেটা হয়ত উদযাপনে কিংবা অন্য কোনভাবে।
এমনিতে কম গুরুত্বের সিরিজ হলেও স্বাগতিকদের অবশ্য বেশ কিছু দিক থেকে প্রাপ্তির জায়গা আছে। সাকিবদের প্রজন্মের বাইরে গিয়ে তিন সংস্করণে স্থায়ী অধিনায়ক হয়েছেন শান্ত। নেতৃত্বে তিনি কতটা আস্থার ছবি দেখান, তার উপর নির্ভর করছে দলের আগামী। একটা নির্দিষ্ট ব্যাটিং অর্ডার খুঁজে নেওয়া, অপেক্ষাকৃত তরুণদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকায় দেখার চাহিদাও আছে।
চলতি বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পেলেও ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত একটা পরিকল্পনা এঁকে রাখছেন শান্ত। সেখানে আছে দলীয় ঐক্যর সুর। প্রশ্ন উঠতে পারে এতদিন তাহলে এর ঘাটতি ছিলো? দুই শীর্ষ ক্রিকেটার সাকিব ও তামিমের মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্যে যে পর্যায়ে এসেছে তাতে প্রশ্নটা বেশ নায্য।
এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে চাইছেন শান্ত। আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়েও দিলেন তা। সতীর্থ কারো খারাপ সময় গেলে প্রবলভাবে তার পাশে থাকার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন তিনি, 'সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দল হিসেবে আমরা খেলছি কিনা। আমরা জিতি কিংবা হারি। নিউজিল্যান্ড সিরিজটা যখন আমরা খেললাম আমরা দল হিসেবে খেলতে চেয়েছি। প্রত্যেকটা ম্যাচ যেকোনো পরিস্থিতিতে জিততে চেয়েছি। পরের বিশ্বকাপ আসা পর্যন্ত এটাই পরিকল্পনা থাকবে যে দল হিসেবে কতটা ভালো খেলছি এবং একজন আরেকজনকে কতটা সমর্থন দিচ্ছি। বিশেষ করে কারো যদি খারাপ সময় যায় ওই খেলোয়াড়কে আমরা কীভাবে ব্যাক করছি। পরের তিন বছরে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা একসঙ্গে কতটা আছি।'
বুধবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় শুরু হতে যাওয়া সিরিজে জেতার বাইরেও বাংলাদেশের তাই প্রাপ্তির খোঁজ আছে।
Comments