‘অতিরিক্ত খেলে’ কাহিল হয়ে পড়ার শঙ্কায় শরিফুল?
সিলেট টেস্টের আগে দলের দুদিনের অনুশীলনে ছিলেন না শরিফুল ইসলাম। ফিটনেসের অবস্থা বুঝতে তিনি ছিলেন ঢাকায়। কোন চোট না থাকায় দলের সঙ্গে ম্যাচের আগের দিন যোগ। ধারণা করা হচ্ছিলো বাঁহাতি পেসারকে হয়ত এই টেস্টে বিশ্রামে রাখা হবে। তবে প্রধান কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে জানিয়ে দেন খেলার আগে সতেজ রাখতেই তাকে অনুশীলনে নামাবো হয়।
সিলেটে সবুজ উইকেটে শরিফুলকে নিয়েই তাই নামে বাংলাদেশ। তবে তার কাছ থেকে প্রত্যাশার পুরোটা পাওয়া যায়নি। বরং ম্যাচের কোন কোন ধাপে বাঁহাতি পেসারকে মনে হয়েছে কিছুটা ক্লান্ত। খালেদ আহমেদ, নাহিদ রানাদের আলো ছড়ানোর মাঝে দুই ইনিংসে তিনি নেন একটি করে উইকেট।
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে থেকেই টানা খেলার মধ্যে আছেন শরিফুল। বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম এন্ড অ্যাওয়ে দুই সিরিজেই খেলেছেন। এই সময়ে সব সংস্করণ মিলিয়ে জাতীয় দলের ২৪ ম্যাচের ২৩টিতেই মাঠে ছিলেন তিনি। বিপিএলে দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে খেলেছেন ১২ ম্যাচ। বিপিএলের পর পরই শুরু হওয়া শ্রীলঙ্কা সিরিজে এখন পর্যন্ত সব ম্যাচে মাঠে দেখা গেছে তাকে।
শরিফুলের উপর কি চাপ একটু চাপ বেশি হয়ে গেছে কিনা এই প্রশ্ন উঠতে পারে। সূত্রের খবর, পেসারদের ফিটনেস পর্যবেক্ষণ করা সফটওয়্যার ক্যাটাপোল্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে শরিফুলের প্রয়োজন বিশ্রাম।
তাসকিন আহমেদ পিঠের চোটের কারণে টেস্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। ইবাদত হোসেন আছেন চোটে। মোস্তাফিজুর রহমান অনেকদিন ধরেই আর টেস্টে নেই। তিন সংস্করণে খেলা একমাত্র পেসার এখন তাই শরিফুল। বাঁহাতি এই পেসার পারফরম্যান্স দিয়েই নিজেকে করেছেন অপরিহার্য। তবে তার কাছ থেকে সেরাটা পেতে হলে যত্ন করে তাকে ব্যবহার করা জরুরি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টে শরিফুলকে খেলানো আদর্শ হবে কিনা এই প্রশ্ন উঠছে। ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমুল আবেদিন ফাহিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার পর্যবেক্ষণে শরিফুলের একটা বিশ্রাম প্রাপ্য , 'প্রথম টেস্টে তাকে কিছুটা ক্লান্ত মনে হয়েছে। সে চেষ্টা করছিলো, কিন্তু তার শরীর সেভাবে সাড়া দিচ্ছিলো না। হয়ত সে শতভাগ দেওয়ার জায়গায় নেই। সে অবশ্যই অতিরিক্ত খেলে ফেলছে।'
'আমরা হয়ত ভাবি এক-দুই ম্যাচ ক্রিকেটারদের জন্য বর কিছু না। কিন্তু ধীরে ধীরে এটা শ্রান্তি বাড়িয়ে ফেলে, যেটা আমরা খেয়াল করি না। অতিরিক্ত খেলা শরিফুলের ক্ষতি করতে পারে।'
টেস্ট স্কোয়াডে এখন সবচেয়ে সিনিয়র পেসার খালেদ আহমেদ। তার অভিজ্ঞতাও কেবল ১৩ টেস্টের। ১০ টেস্ট খেলা শরিফুল তার পরেই। বাকি দুজনের মধ্যে নাহিদ রানার সিলেটেই অভিষেক হয়েছে। অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা আরেক পেসার মুশফিক হাসান ছিটকে যাওয়ায় আনা হয়েছে টেস্ট না খেলা হাসান মাহমুদকে।
শরিফুল না খেললে তাই পেস আক্রমণ আরেকটা শক্তি হারাবেই। তবে চট্টগ্রামের উইকেটে যদি স্পিনারদের সহায়তা বেশি থাকে তাহলে একজন পেসার কম খেলিয়েও কাজ সারতে পারে বাংলাদেশ।
প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শরিফুলের বিষয়টা ম্যাচের আগের দিন আলোচনা করে ঠিক করবেন, 'প্রতিটা খেলার আগেই ফিজিও, ট্রেনার সবার কাছেই টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে ফিডব্যাক যায়। কোন খেলোয়াড় কতটুকু ফিট বা কারো বিশ্রাম প্রয়োজন কিনা। সেভাবেই রেসপন্স করে টিম ম্যানেজমেন্ট। আমাদের কাছেও একটা কপি আসে। আমারা মূলত সেরা এভেইলেবল খেলোয়াড়দের ভিত্তিতে একটা দল দেই। একাদশটা আমরা ছেড়ে দেই কোচ ও অধিনায়কের উপর।'
'তবে হ্যাঁ যেটা বললেন সেই (শরিফুল) ব্যাপারের পর্যবেক্ষণ যে নেই তা না। আছে আমাদেরও। কাল (শুক্রবার) দলের সঙ্গে এসব কিছু নিয়েই আলাপ হবে। চট্টগ্রামে আমাদের সিরিজ সমতা ফেরার একটা ব্যাপার যেমন আছে আবার আমাদের মাথায় আছে সামনে সাদা বলের অনেক ম্যাচ, বিশ্বকাপও আছে। দেখা যাক কি করা যায়।'
Comments