স্টাম্প ভাঙার পর আম্পায়ারিং নিয়ে ক্ষোভ প্রতিপক্ষের উপরও ঝাড়লেন হারমানপ্রিত
ম্যাচ শেষ হয়ে তখন পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন চলছে, তবে ক্ষুব্ধ ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউর তখনও যেন ফুঁসছেন। হারের পেছনে অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়ায় 'প্যাথেটিক আম্পায়ারিং' বলার পরও তার মেজাজ শান্ত হয়নি। দুই দলের একসঙ্গে ছবি তোলার সময়ও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর মন্তব্য করে বসেন তিনি। তার আচরণে হতভম্ব বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি আরও কয়েকটি ছবি তোলার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে চলে যান ড্রেসিংরুমে।
শনিবার ভারত ও বাংলাদেশ দলের মেয়েদের মধ্যকার সিরিজ নির্ধারনী তৃতীয় ওয়ানডে হয়েছে টানটান উত্তেজনাময়। তাতে ২২৫ রান করে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায় ম্যাচ টাই করে ফেলেছে। কিন্তু ম্যাচের এই ফল ছাপিয়ে সকল নজর নিজের দিকে নিয়ে গেছেন ভারত অধিনায়ক।
এই ম্যাচে রান তাড়ায় নেমে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ দেখিয়েছে ভারতীয় দল। শুরুটা করেন স্বস্তিকা ভাটিয়া, নিজের আউটের সিদ্ধান্তে দেখান প্রতিক্রিয়া। আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর ধারাবাহিকতা থাকে শেষ অবধি পর্যন্ত। মারুফা আক্তারের বলে শেষ ব্যাটার মেঘনা সিংয়ের কট বিহাইন্ড সিদ্ধান্ত কিছুটা সময় নিয়ে দেন আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। মাঠ না ছেড়ে তখন আপত্তি জানান ভারতের দুই ব্যাটার। সবচেয়ে বড় ঘটনার জন্ম দেন ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রিত। নিজের আউটের সিদ্ধান্ত না মেনে ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভেঙে ফেলেন তিনি।
নাহিদা আক্তাররের বলে এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলে হারমানপ্রিত ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভেঙে ফেলেন। আম্পায়ারকেও ব্যাটে লাগার কথা ঈশারা করে ফুঁসতে ফুঁসতে বের হয়ে যান। যদিও রিপ্লেতে পরে দেখা যায় বল তার ব্যাটে লাগলেও আউট, কারণ বল স্লিপে ক্যাচ নিয়ে নেন ফাহিমা। এলবিডব্লিউর আউটও বদলে পরে দেওয়া হয় ক্যাচ দেওয়া হয় স্কোরকার্ডে।
ম্যাচের এসব উত্তপ্ত অবস্থার রেশ ধরে ৩৪ পেরুনো এই সিনিয়র ক্রিকেটার পুরস্কার বিতরণী আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতার মাঝেও নিজের মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি। উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আজকের খেলা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ক্রিকেটের বাইরেও আজ যে ধরণের আম্পায়ারিং হলো এটা খুব অবাক করার মতন। পরেরবার বাংলাদেশে আসার আগে এই ধরণের আম্পায়ারিং হবে এটা ধরে নিয়ে সেভাবে প্রস্তুত হয়ে আসা নিশ্চিত করতে হবে।' ভারতীয় হাইকমিশনার মাঠে উপস্থিত থাকার পর তাকে পুরস্কার বিতরনী আয়োজনে কেন রাখা হয়নি এমন অদ্ভুত প্রশ্নও তুলতে দেখা যায় তাকে।
পুরস্কার বিতরণী মঞ্চের পাশে উপস্থিত বাংলাদেশ দল, কোচিং স্টাফ ও বিসিবির কর্মকর্তাদের যেন বিশ্বাসীই হচ্ছিল না! কী বলছেন এসব হারমানপ্রিত! বিসিবির প্রভাবশালী এক কর্মকর্তা বাংলাদেশের কোচকে বলছিল, 'ও তো পরিস্কার আউট ছিল, তারপর এমন বলছে কেন?'
ঘটনার তখনো আসলে শেষ না। এই ম্যাচ টাই হওয়ায় সিরিজ শেষ হয় সমতায়। ট্রফি নিয়ে ছবি তোলার জন্য তাই ডাকা হয় দুই দলকেই। দুই অধিনায়ক ট্রফি নিয়ে ছবি তোলার পর ডাকা হয় দুই দলের সব ক্রিকেটারদেরও। তখন হারমানপ্রিত বলে উঠেন, 'আম্পায়াররা কোথায়? আম্পায়ারদেরও ডাকুন।' জ্যোতিদের উদ্দেশ করে বলেন, 'তোমরা তো ম্যাচ জিতনি, আম্পায়ার জিতিয়েছে।'
এমন মন্তব্য হতভম্ব ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন বাংলাদেশ অধিনায়ক জ্যোতি। বিসিবির শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে এসে বলেন, 'আমি আর ছবি তুলব না।' পুরো দলকে নিয়ে তিনি তখন ড্রেসিংরুমে ফিরে যান। উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে সিরিজের ট্রফিও বেশ কিছু সময় পড়ে থাকে মাটিতে।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে হারমানপ্রিতের স্টাম্প ভাঙার ঘটনাকে 'হিট অব দ্য মোমেন্টে' ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হিসেবে আখ্যা দেন সহ-অধিনায়ক স্মৃতি মান্ধানা। তবে পুরস্কার বিতরিনী আয়োজনে যা হয়েছে তা অন ক্যামেরায় না হওয়ায় সেটাকে আমলে না নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ অধিনায়ক জ্যোতি জানান তাদের এমন কিছু বলা হয়েছে তাতে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছিল না, 'দেখেন আমি বলব ও যেটা করেছে ওর ব্যাপার। তবে আমি বলব একজন খেলোয়াড় হিসেবে সে আরেকটু ভদ্রভাবে কথা বলতে পারত।'
'কিছু কথা হয়েছে যা এখানে বলা সম্ভব না। যা হয়েছে তাতে আমার কাছে মনে হয় না, দল নিয়ে আমি ওখানে থাকি। কিছু কথা ছিল তাতে মনে হয়েছে আমার ওখানে থাকা ঠিক হবে না দল নিয়ে। কারণ ক্রিকেট একটা সম্মানের জায়গায়। একটা শৃঙ্খলার জায়গায়, এটা ভদ্রলোকের খেলা।'
Comments