আইপিএল

গিলের বিস্ফোরক সেঞ্চুরি ও মোহিতের ৫ উইকেটে ফাইনালে গুজরাট

ছবি: আইপিএল

ঝড় তুলে সবশেষ চার ম্যাচে তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিলেন ওপেনার শুবমান গিল। এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের কাঁধে চেপে রানের পাহাড় গড়ল গুজরাট টাইটান্স। জবাব দিতে নামা মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে লম্বা সময় পর্যন্ত লড়াইয়ে রাখলেন সুরিয়াকুমার যাদব, তিলক ভার্মারা। তবে পেসার মোহিত শর্মা শেষদিকে দ্রুত ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বড় জয় পাইয়ে দিলেন গুজরাটকে। এতে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা টানা দ্বিতীয়বারের মতো জায়গা করে নিল আইপিএলের ফাইনালে।

শুক্রবার আহমেদাবাদে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ৬২ রানে জিতেছে হার্দিক পান্ডিয়ার গুজরাট। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৩৩ রান তোলে তারা। লক্ষ্য তাড়ায় ১০ বল বাকি থাকতে ১৭১ রানে অলআউট হয় রোহিত শর্মার মুম্বাই।

একই ভেন্যুতে আগামী রোববার অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা আইপিএলের এবারের আসরের ফাইনাল। সেখানে গুজরাট মুখোমুখি হবে চারবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের।

ছবি: আইপিএল

আসরের সর্বোচ্চ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাইয়ের বিপক্ষে গিল খেলেন ১২৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। মাত্র ৬০ বল মোকাবিলায় ২১৫ স্ট্রাইক রেটে তিনি মারেন ৭ চার ও ১০ ছক্কা। অভিজ্ঞ মোহিত ৫ উইকেট নেন ১০ রান খরচায়। ইনিংসের ১৫তম ওভারে আক্রমণে গিয়ে মোটে ২.২ ওভার হাত ঘোরান তিনি।

পাওয়ার প্লেতেই বড় পুঁজির ভিত পেয়ে যায় গুজরাট। ৬ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ওঠে বিনা উইকেটে ৫০ রান। সপ্তম ওভারে পীযুষ চাওলার বলে ঋদ্ধিমান সাহা স্টাম্পড হলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।

আরেক ওপেনার গিল শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। ৩২ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ফিফটি তুলে নেন এই ডানহাতি ব্যাটার। এর আগে অবশ্য ব্যক্তিগত ৩০ রানে একবার জীবন পান তিনি। ক্রিস জর্ডানের বলে মিড অন ডাইভ দিয়েও তার ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হন টিম ডেভিড। একাদশ ওভারে ফের বেঁচে যান গিল। তখন তার রান ছিল ৫৮। তার দেওয়া ফিরতি ক্যাচ ছাড়েন ক্যামেরন গ্রিন। তবে বল ভীষণ দ্রুত ছুটে আসায় সুযোগটি লুফে নেওয়া নিঃসন্দেহে ছিল দুরূহ।

এরপর তেড়েফুঁড়ে ব্যাট চালাতে থাকেন ২৩ বছর বয়সী গিল। মুম্বাইয়ের পেসার আকাশ মাধওয়ালকে পরের ওভারে মারেন ৩ ছক্কা। চাওলা আক্রমণে ফিরলে তিনি তুলে নেন ১ চার ও ২ ছয়। পঞ্চদশ ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে এবারের আইপিএলে তৃতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ নেন গিল। সেজন্য তার লাগে মাত্র ৪৯ বল।

অন্যপ্রান্তে সাই সুদর্শনও চালিয়ে খেলতে থাকেন। তবে গিলের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের পাশে তার আলাদা করে নজরে পড়া ছিল কঠিন! দ্বিতীয় উইকেটে তারা মাত্র ৬৪ বলে আনেন ১৩৮ রান। ১৭তম ওভারে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। মাধওয়ালকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শেষ হয় গিলের স্মরণীয় ইনিংস। এবার ক্যাচ লুফে নিতে আর কোনো ভুল করেননি ডেভিড।

গুজরাটের সংগ্রহ ২৩৩ পর্যন্ত নিয়ে যেতে এরপর ভূমিকা রাখেন অধিনায়ক হার্দিক। তিনি ১৩ বলে সমান ২টি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ২৮ রানে। রিটায়ার্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফেরা সুদর্শনের ব্যাট থেকে আসে ৩১ বলে ৪৩ রান। বলাই বাহুল্য যে মুম্বাইয়ের বোলাররা ভীষণ খরুচে ছিলেন। গ্রিন ৩ ওভারে দেন ৩৫ রান। মাধওয়ালের ৪ ওভারে আসে ৫২ রান। সমান ওভারে জর্ডানের খরচা ৫৬ রান। চাওলার ৩ ওভারে ওঠে ৪৫ রান।

ফিল্ডিং চলাকালে দুর্ভাগ্যবশত সতীর্থ জর্ডানের কনুইয়ের গুঁতো খেয়ে মাঠ ছাড়েন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ইশান কিশান। কয়েক ওভার পর অধিনায়ক রোহিতও বেরিয়ে যান আঙুলে বল লেগে ব্যথা পাওয়ায়। তবে রোহিত ব্যাটিংয়ে নামলেও ইশানকে আর পাওয়া যায়নি। তার অনুপস্থিতি ভুগিয়েছে বড় লক্ষ্য পাওয়া মুম্বাইকে।

শুরুতেই তিন ওভারের মধ্যে ২ উইকেট খুইয়ে বিপাকে পড়ে মুম্বাই। নেহাল ওয়াধেরা গ্লাভসবন্দি হন ঋদ্ধিমানের। টপ এজ হয়ে রোহিত ধরা পড়েন জশ লিটলের হাতে। দুই ওপেনারকেই বিদায় করেন মোহাম্মদ শামি। মাঝে হার্দিকের বলে কনুইতে আঘাত পেয়ে আহত অবসরে যান গ্রিন।

কালক্ষেপণ না করে সুরিয়াকুমার ও তিলক পাল্টা আক্রমণে মনোযোগী হন। শামির করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ৪টি চার ও ১টি ছক্কাসহ মোট ২৪ রান আনেন তিলক। কিন্তু তার তাণ্ডব স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। পাওয়ার প্লের শেষ ডেলিভারিতে রশিদ খান বোল্ড করেন তাকে। তখন মুম্বাইয়ের রান ৩ উইকেটে ৭২।

তিলকের সঙ্গে সুরিয়াকুমার ২২ বলে ৫১ রান যোগ করার পর ক্রিজে ফেরা গ্রিনের সঙ্গে গড়েন ৩২ বলে ৫১ রানের জুটি। এতে শুরুর চাপ সামলে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে যায় মুম্বাই। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আশা বাড়তে থাকে একটু একটু করে। গ্রিনের স্টাম্প লিটল উপড়ে নেওয়ার পর সুরিয়াকুমার আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। ৩৩ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণের পর আরও বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। তাছাড়া, উইকেটে আসার অপেক্ষায় ছিলেন ডেভিড, জর্ডানরা। ফলে শেষ ৬ ওভারে মুম্বাইয়ের সামনে ৮৫ রানের কঠিন সমীকরণ থাকলেও গুজরাটের শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ তৈরি হচ্ছিল।

সব অনিশ্চয়তা এরপর যেন এক ফুঁতে উড়িয়ে দেন মোহিত। রোমাঞ্চের সম্ভাবনায় ঢেলে দেন জল। নিজের তৃতীয় বলেই ধরেন শিকার। আগের ডেলিভারিতেই ছক্কা মারার পর প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন সুরিয়াকুমার। ওই ওভারের পঞ্চম বলে বিদায় নেন ইশানের কনকাশন বদলি বিষ্ণু বিনোদ। রশিদ পরের ওভারে বিপজ্জনক ডেভিডকে ঝুলিতে নেওয়ার পর মোহিত ফের ধরেন জোড়া শিকার। লং অফে ক্যাচ দেন জর্ডান, লং অনে চাওলা। ১৯তম ওভারে প্রতিপক্ষের ইনিংস গুটিয়ে দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট পূর্ণ করেন মোহিত।

প্রবল ব্যাটিং ধসে ১৬ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় মুম্বাই। তাদের হয়ে সুরিয়াকুমার সর্বোচ্চ ৬১ রান করেন ৩৮ বলে। তিনি মারেন ৭ চার ও ২ ছক্কা। এছাড়া, তিলক ১৪ বলে ৪৩ ও গ্রিন ২০ বলে ৩০ রান করেন। বাকিরা কেউ দুই অঙ্কে যেতে পারেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshis worry amid US immigration crackdown

The United States has deported at least 31 Bangladeshis after President Donald Trump took a tough immigration policy.

4h ago