নির্বাচকরা বলছেন ‘বিশ্রামে’ মাহমুদউল্লাহ, আসলেই কি তাই?

Mahmudullah
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

কদিন আগে ইঙ্গিতটা চট্টগ্রামেই মিলেছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যর্থতায় মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে দলের জায়গা যে  নড়ে গেছে তা টের পাওয়া যাচ্ছিল স্পষ্ট। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানিয়ে দিয়েছিলেন, আয়ারল্যান্ড সিরিজে কিছু জায়গা বাজিয়ে দেখতে চায় বাংলাদেশ, খোঁজ করতে চায় নতুন কিছুর। বিতর্ক এড়াতে 'বিশ্রাম' নামক নিরাপদ শব্দের আশ্রয়ও নিয়ে রাখা হয়েছিল। দল ঘোষণার পর নির্বাচকরাও বলছেন বিশ্রামে মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু আসলেই কি তাই?

টি-টোয়েন্টি দলের অনুশীলনের সময় চট্টগ্রামে দল সংশ্লিষ্ট এক সদস্য বলছিলেন,  'দেখেন, কতটা ফুরফুরে লাগছে দলটাকে, কেমন ঝরঝরে। ওয়ানডের সময় দেখেছেন একটু আড়ষ্টতা ছিল সবার।' ওয়ানডে দলে আড়ষ্টতার পেছনে দু'একজনের দিকে ইঙ্গিত। আরেকটু স্পষ্ট  করে বললে, মাঠে মাহমুদউল্লাহর শরীরী ভাষা এবং ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে মোটেও খুশি ছিল না টিম ম্যানেজমেন্ট।

অফিসিয়াল বয়স পেরিয়েছে ৩৭। বাংলাদেশের বাস্তবতায় দু'এক বছর বাড়িয়ে নিয়ে কেউ হিসেব করলেও ভুল বলার অবস্থা থাকে না। পড়তি সময়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তিন ম্যাচে তার রান ৩১, ৩২ ও ৮। প্রথম ম্যাচে ৪৮ বলে করেছিলেন ৩১, পরের ম্যাচে ৩২৭ রান তাড়ায় পরিস্থিতির বিপরীতে গিয়ে করেন ৪৯ বলে ৩২। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এমন খেলার পরই তাই তার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশেষ করে জেতার তাড়না দেখাতে না পারার যে অ্যাপ্রোচ তিনি দেখান সেটাই সবচেয়ে আপত্তিকর লেগেছে সবার।

ওই দিন ম্যাচ শেষে মাঠ ছাড়ার আগে রাজ্যের অন্ধকার মুখে ছিল মাহমুদউল্লাহর। বাসে উঠার অপেক্ষা করতে যেন দাঁড়িয়ে থাকতেই কষ্ট হচ্ছিল তার। জানা গেছে, সেদিনই আয়ারল্যান্ড সিরিজে তাকে না রাখার বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়। বিদায়ের একটা আভাস পেয়ে মাহমুদউল্লাহ ছিলেন বেশ অস্বস্তিতে।

অভিজ্ঞ সিনিয়র ক্রিকেটার হওয়ায় তার বেলায় 'বাদ' শব্দটি ব্যবহার করতে চায়নি বিসিবি। এমন একজনকে বাদ দিলে বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির বাস্তবতায় পড়তে হবে বিতর্কে। এই বিতর্কও এড়াতে চেয়েছিল বোর্ড। আবার তার জায়গায় সুযোগ পাওয়া তরুণরা যদি কোন কারণে ব্যর্থ হন, তখন তাকেই আবার ফেরানো লাগতে পারে। 'বিশ্রাম' শব্দ ব্যবহারে প্রয়োজনে ফেরানোর ক্ষেত্রেও প্রুশ্নের মুখে পড়তে হবে না।

রোববার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতার আমেজের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দল দেয় বিসিবি। তাতে সবচেয়ে বড় খবর মাহমুদউল্লাহর না থাকা। কারণ ব্যাখ্যায় নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন অবশ্য বলেন,  'মাহমুদউল্লাহকে আসলে আমরা বিশ্রাম দিয়েছি। আশা করি সে ইতিবাচকভাবে নিবে। যেটা চিন্তা ছিল আমাদের নতুন কাউকে কাউকে দেখার ব্যাপার ছিল। এই সিরিজটাই আমাদের সে সুযোগ। আমরা কিছু পজিশনে দেখতে চাই। টিম ম্যানেজমেন্টেরও সেরকম পরিকল্পনা।'

এর আগে চট্টগ্রামে বোর্ড প্রধান জানিয়ে দিয়েছিলেন, আয়ারল্যান্ড সিরিজে ও তার পরের সিরিজে কিছু অদল বদল করবেন তারা। তবে কাউকে বাদ দেওয়া হবে না। 'বাদ' শব্দটা ব্যবহার করে যেন ভুল ব্যাখ্যা না দেওয়া হয়। আঁচ করে নেওয়া যায় এসব কিছুই আসলে নিরাপদ পথে হাঁটার প্রক্রিয়া।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই দলের সবচেয়ে 'খারাপ' ফিল্ডার ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মাঠে তাকে লুকিয়ে রাখা ছিল কঠিন। বাউন্ডারি ছেড়েছেন একাধিক। শ্লথ গতি ও রিফ্লেক্সের কারণে তার হাতে বল রেখে বাড়তি রান নিতে পেরেছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা।

অথচ দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেওয়া কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সবচেয়ে জোর দিচ্ছেন ফিল্ডিংয়ের উপর। বাংলাদেশকে এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং দল বানাতে চান তিনি। মাহমুদউল্লাহর মতোন কাউকে রেখে সেই লক্ষ্য যে পূরণ কঠিন, তা অনুমেয়।

ফিল্ডিংয়ে পিছিয়ে থাকা পেসাররাও এখন অনুশীলনে বাড়তি খাটছেন। হাসান মাহমুদ আগের দিন জানিয়ে গেছেন তাদের তাগিদ ও কোচের বার্তা। চলতি বছর ভারতে হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে ফিল্ডিংয়ে লুকিয়ে রাখা ব্যক্তির সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ।

ইংল্যান্ড সিরিজের আগে একটি ক্রিকেট ওয়েবসাইটে আলোচিত সাক্ষাতকার দেন বিসিবি সভপতি। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল ইস্যু ছাড়াও সেখানে ছিল মাহমুদউল্লাহর বিষয়। এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের অবসর পরিকল্পনা জানাতে চেয়েছিলেন তিনি। তার ফিল্ডিং নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটা তাই ছিল মাহমুদউল্লাহর জন্য বড় পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় 'পাশ' করতে না পারায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দেখা যাচ্ছে ভিন্নতা। 

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে মাহমুদউল্লাহর জায়গায় মিডল অর্ডারে খেলবেন তৌহিদ হৃদয়, এই জায়গায় তার ব্যাকআপ ইয়াসির আলি রাব্বি। বিপিএলে পারফর্ম করে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া হৃদয় এরমধ্যে নজর কেড়েছেন। ব্যাটিংয়ে আগ্রাসী অ্যাপ্রোচ আর দুর্বার ফিল্ডিং দিয়ে তিনি গুড বুকে। ইয়াসিরের সময়টা বিপিএলে ভালো না গেলেও ওয়ানডের জোর বিবেচনায় তিনি। এই দুজনের কেউ ভালো করে ফেললে মাহমুদউল্লাহর দিকে আর পিছু ফিরে তাকাবে না টিম ম্যানেজমেন্ট। তখন তাকে দেওয়া 'বিশ্রাম' হয়ে যেতে পারে অনির্দিষ্টকালের।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

18h ago