সরকার ও সমন্বয়কদের সঙ্গে বিএনপির ‘দ্বন্দ্ব’ কি অনিবার্য ছিল?
বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার এবং তাদের 'প্রধান অংশীজন' ছাত্র সমন্বয়কদের যে একটা দ্বান্দ্বিক বা মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়ে যাবে, সেটি ছিল সময়ের ব্যাপার। এর পেছনে কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দ্বন্দ্বের ভেতর থেকে কী বেরিয়ে আসছে এবং এর পরিণতি কি আরেকটি বড় সংকটের দিকে যাত্রা, নাকি ইতিবাচক কিছু?
গত ২৩ জানুয়ারি দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শহীদ আসাদের ৫৬তম শাহাদতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বেশকিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে নির্বাচনের সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার হবে।'
তার এই বক্তব্যে শুরু হয় তোলপাড়। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট দেন জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি লেখেন, 'বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। ১/১১ এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিলো। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।'
মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্যের বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বস্তুত জুলাই অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলো, তাতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো বিএনপিরও সায় ছিল। কেননা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট দুপুরে সেনানিবাসে এবং সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে মূল ফোকাস ছিল বিএনপি ও জামায়াত—এ কথা বললে ভুল হবে না।
যদিও এই দুটি দল অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হয়নি। মূলত ওই অর্থে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বই এই সরকারে নেই। বরং সরকারটি গঠিত হয়েছে এমন কিছু মানুষকে নিয়ে, যাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কারো কারো দক্ষতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল এবং এখনও আছে। এই সরকার গঠনে স্বজনপ্রীতি, এলাকাপ্রীতি এমনকি যে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনটি গড়ে উঠেছিল, সেই কোটায়ও কেউ কেউ নিয়োগ পেয়েছেন—এই অভিযোগও বেশ জোরালোভাবেই আছে। অর্থাৎ একটি বিরাট অভ্যুত্থানের পরে সত্যি সত্যিই রাষ্ট্রের খোলনলচে পাল্টে দেওয়া, তথা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য যে ধরনের শক্তিশালী সরকার গঠন করা প্রয়োজন ছিল—সেটি শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে।
যে কারণে অনেকেই শুরু থেকে বলছিলেন, একটি শক্তিশালী জাতীয় সরকার গঠন করা দরকার—যেখানে সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তাতে একটি বিরাট সংকটকালে দেশ পরিচালনার কাজটি সহজ হতো।
জাহাজ যখন উত্তাল সমুদ্রে ঝড়ের মধ্যে পড়ে যায়, তখন নাবিক যতই ভালো মানুষ হোন না কেন, তারচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় তিনি ঝড় মোকাবিলা করে জাহাজটি তীরে নিতে পারবেন কি না। এই সময়ের বাংলাদেশের প্রধান প্রশ্নই হলো, যারা ক্রান্তিকালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন, তারা কতটা দক্ষ। কেননা যেকোনো সরকারের জন্য পাঁচ মাস সময় যেমন খুব বেশি নয়, আবার তারা কী করবে বা করতে পারবে—সেটি বোঝার জন্য পাঁচ মাস সময় খুব কমও নয়।
ফলে প্রশ্ন হলো, এই পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার কি জনগণের মনে ইতিবাচক পরিবর্তনের কোনো আশাবাদ তৈরি করতে পেরেছে? দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন?
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরে অসংখ্য মানুষ বেকার হয়েছেন; অনেক কলকারখানা বন্ধ হয়েছে; অনেক মালিক হয় জেলে না হয় পলাতক, তাদেরও নিশ্চয়ই অপরাধ আছে। কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অপরাধ কী? সবশেষ গত বৃহস্পতিবার বেক্সিমকোর ৪২ হাজার কর্মীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়, ৪২ হাজার কর্মী মানে দুই লাখের বেশি মানুষ। এই মানুষগুলোর দায়িত্ব কে নেবে?
এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। দেশীয় উদ্যোক্তারাও ভয়ে থাকেন। তার ওপর আগের সরকারের আমলে সুবিধাভোগী অভিযোগে অসংখ্য মানুষ হয় পালিয়ে আছেন, না হয় চুপচাপ। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ যাতে বেকার না হয়, জীবন-জীবিকা যাতে অনিশ্চয়তায় না পড়ে, মানুষের জীবন যেন আগের চেয়ে দুর্বিসহ না হয়—সরকার সে বিষয়ে কী করছে?
অন্তর্বর্তী সরকার তাদের অগ্রাধিকার ঠিক করেছে এভাবে—
১. বিচার
২. সংস্কার
৩. নির্বাচন
জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলন দমনের নামে যাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসংখ্য মানুষ হত্যার অভিযোগ আছে, সুষ্ঠু তদন্ত ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে তাদের বিচার হতে হবে—এ নিয়ে দ্বিমত নেই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচনী ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্র যেভাবে ধ্বংস হয়েছে, নির্লজ্জ দলীয়করণের মধ্য দিয়ে জনকর্মচারীরা যেভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি অবাধে লুটপাট করে দেশকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছেন—সেখান থেকে দেশকে বের করে নিয়ে আসতে বড় ধরনের সংস্কার এবং কোথাও কোথাও পরিবর্তন লাগবে—তা নিয়েও দ্বিমত নেই।
কিন্তু এর চেয়ে জরুরি হচ্ছে প্রায় ২০ কোটি মানুষের দেশের আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনীতি ঠিক রাখা। দলমত নির্বিশেষে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের পথে কোথাও কোনো অন্তরায় থাকলে সেগুলো দূর করা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কি এগুলো নিশ্চিত করতে পারছে?
এক্ষেত্রে বিরাট চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রশাসনে আগের সরকারের লিগ্যাসি এবং এই সরকার সফল না হোক, এটা অনেকেই চায়। এই চাওয়াটা শুধু দেশের ভেতর থেকে নয়, বাইরে থেকেও প্রবলভাবেই আছে বলে মনে হয়। সুতরাং এমন জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলার মতো দক্ষ জনবল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে এবং গত পাঁচ মাসে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, এমনকি বিভিন্ন সংস্কার কমিশনে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কতজন আছেন—সেই প্রশ্নটি সাধারণ মানুষের মনেও আছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থাকা আরও স্বাভাবিক—যারা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নানাবিধ নির্যাতন, চাপ ও ভয় মোকাবিলা করে টিকেছিল।
উপরন্তু সরকারের প্রধান অংশীদার হিসেবে গণ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এমন কিছু বিষয় সামনে এনেছে, যেগুলো এই সময়ের 'প্রধান' রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব আরও বাড়াচ্ছে।
যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনীতি ঠিক করে একটি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠনই প্রধান আলোচনার বিষয় হওয়ার কথা এবং এই লক্ষ্যেই যেখানে সরকার ও সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা ছিল, সেখানে ঐতিহাসিকভাবে মীমাংসিত এমন কিছু বিষয় সামনে এনে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে, যা এই সময়ে আদৌ প্রয়োজন কি না—তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
অনেকেই মনে করেন এবং সরকারের নানাবিধ কাজকর্মে এটা প্রস্ফুটিতও হয়ে ওঠে, তারা নির্বাচনটি বিলম্ব করতে চায় মূলত তিনটি কারণে—
১. জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যা ও অন্যান্য অপরাধে যুক্তদের বিচার শেষ করা
২. প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার
৩. ছাত্র ও সমন্বয়কদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দলটিকে নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে যথেষ্ট সময় দেওয়া
সরকার হয়তো মনে করে, দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে বিচারের প্রক্রিয়া স্থগিত বা শ্লথ বা বন্ধ হয়ে যাবে। তারা হয়তো মনে করে, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, নির্বাচিত সরকার সেই ধারাবাহিকতা রাখবে না। যদিও বিএনপি শুরু থেকেই বলছে, তারা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য ৩১ দফা রূপরেখা আরও বছর দুই আগেই দিয়েছে। সুতরাং তারা সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে না—সেটি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। যে কারণে দলের শীর্ষ নেতারা বারবারই বলছেন, একটি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম যে সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো সম্পন্ন করেই দ্রুত ভোটের আয়োজন করা দরকার। তাছাড়া একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে সব ধরনের সংস্কার করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি সব ধরনের কাজ করার সাংবিধানিক ও আইনি এখতিয়ারও তাদের নেই। যেহেতু তারা নির্বাচিত নয়, অতএব জনগণের ম্যান্ডেটও তাদের পক্ষে নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থানে শত শত মানুষ প্রাণ দেননি। এটা ঠিক। পক্ষান্তরে এটিও ঠিক, জুলাই অভ্যুত্থানে মানুষ যে দলমত নির্বিশেষে রাস্তায় নেমেছে—তার পেছনে একটি বড় কারণ নির্বাচন। কেননা গত তিনটি নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারেননি।
সংবিধান বলছে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণ ওই মালিকানা প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায় শুধুমাত্র ভোটের সময়। সেই ভোট বা নির্বাচনী ব্যবস্থাটিই যেহেতু ধ্বংস করা হয়েছে, অতএব সে তার রাগ ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য রাস্তায় নেমেছে। তার সঙ্গে নিশ্চয়ই আরও একাধিক কারণ ছিল। কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না, ভোট হচ্ছে অন্যতম প্রধান কারণ। অর্থাৎ মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকারটি ফিরে পেতে চায়।
সুতরাং নির্বাচন হতে হবে এবং সেটা দ্রুতই হতে হবে। সংস্কার ও বিচারের নামে নির্বাচন ঝুলিয়ে রাখলে দেশ আরও বড় সংকটে পড়বে। তবে এটাও ঠিক, অন্তর্বর্তী সরকার খুব সফলতার সঙ্গে সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মনে একটা ইতিবাচক পরিবর্তনের আশাবাদ তৈরি করতে পারলে নির্বাচনের দাবিটি জোরালো হতো না। বিএনপিও নির্বাচনের দাবি তুলে হালে পানি পেতে না।
অনেকেই সন্দেহ করেন, সরকার নির্বাচন বিলম্ব করতে চায় আগামীতে একটি নতুন দলকে ক্ষমতায় আনতে। কিন্তু একটি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-প্রভাব ও চাপমুক্ত এবং সর্বোপরি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হলে কোনো নতুন দল, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত কোনো দল সর্বোচ্চ কতটি আসন পাবে, এমনকি দলের শীর্ষ নেতারাও জয়ী হতে পারবেন কি না—সেটি বিরাট প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানের শেষদিকে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমেছিলেন, সেই অনুভূতি ও উত্তেজনায় ছাত্রদের গঠিত দলকে মানুষ দলে দলে ভোট দেবে—বিষয়টি এত সহজ নয়। তবে এটা ঠিক, তরুণদের একটি বিরাট অংশের সমর্থন এই নতুন দলের প্রতি থাকবে। কিন্তু সেই সমর্থন বলে তারা বিপুল সংখ্যক আসনে জয়ী হয়ে যাবে বা সরকার গঠন করে ফেলবে—সেটি ভাবার কারণ নেই।
এসব কারণেই বিএনপির সঙ্গে সরকার ও ছাত্রনেতাদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, যা এখন দ্বান্দ্বিক অবস্থা তৈরি করছে বলে প্রতীয়মান হয়। এটি অব্যাহত থাকলে সংঘাতও অনিবার্য।
সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় বিএনপির একসময়ের মিত্র জামায়াতের সঙ্গেও তাদের দূরত্ব স্পষ্ট হয়েছে। এটি আরও বাড়বে। কেননা রাজনীতি ও ভোটের মাঠে এখন কার্যত আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ না থাকলে জামায়াতকে সঙ্গে নেওয়ার প্রয়োজন বিএনপির নেই।
একইভাবে জামায়াতও হয়তো ভাবছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিকেও তাদের দরকার নেই। বরং তারা অন্যান্য ইসলামিক দলগুলোকে একটি প্লাটফর্মে এনে বৃহত্তর জোট করে বিএনপির বিকল্প শক্তি হয়ে উঠবে। তার সঙ্গে ছাত্রদের গঠিত দল যদি থাকে, তাহলে সেটি আরও বড় রাজনৈতিক শক্তি হবে—তখন বিএনপি একা হয়ে যাবে। এমন সমীকরণ তাদের ভেতরে আছে বলে মনে হয়।
যদি তাই হয়, তাহলে বিএনপিকে আগামী দিনে শুধু ছাত্র সমন্বয়ক বা তাদের দল নয়, বরং আরও বড় শক্তির মোকাবিলা করতে হবে—যাদের পেছনে থাকবে সরকার।
মোদ্দা কথা, এমন দ্বান্দ্বিক বা সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ কারো জন্যই কাম্য নয়। দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বরং গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে দেশে বাস্তবসম্মত পরিবর্তনের যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এটিকে কাজে লাগানো দরকার। সরকারের উচিত দ্রুত তাদের উপদেষ্টা পরিষদে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দক্ষদের নিয়োগ দেওয়া। যে কাজটি আপনি নিজে করতে পারবেন না, সেটি যিনি পারবেন তাকে দায়িত্ব দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
আর সংস্কার যেহেতু একটি চলমান প্রক্রিয়া, এই অজুহাতে অনির্দিষ্টকাল সময়ক্ষেপণেরও সুযোগ নেই। বরং মৌলিক জায়গাগুলো ঠিক করে সংস্কারের জন্য এমন একটি রাজনৈতিক সনদ প্রস্তুত করা, যেটি পরবর্তীতে সবাই মেনে চলবেন।
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই—এটি যেমন সত্য, তেমনি কিছু মৌলিক বিষয়ে এখন রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা সম্ভব না হলে দেশ আরও বড় সংকটে পড়ে যাবে।
আমীন আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক
Comments