এত রাজনৈতিক দল দিয়ে কী হবে
নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯। সম্প্রতি আরও ৯৮টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে মুসকিল লীগ, বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি, বৈরাবরী পার্টি, নাকফুল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ গরীব পার্টি, বাংলাদেশ সৎ সংগ্রামী ভোটার পার্টি নামে কিছু দলও রয়েছে।
বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ বলে পরিচিত ভারতের জাতীয়, রাজ্য ও জেলা পর্যায়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি হলেও প্রধান বা জাতীয় দল হিসেবে বিবেচনা করা হয় ৮টি দলকে। এগুলো হলো ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (কংগ্রেস), সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি), বহুজন সমাজ পার্টি, ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) সিপিআইএম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) নামে বাংলাদেশেও একটি নিবন্ধিত দল রয়েছে, যার নিবন্ধন নম্বর ২২। ২০০৮ সালে নিবন্ধন পাওয়া এই দলের প্রতীক আম।
এবার যেসব দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি) নামে একটি দলও রয়েছে। ভারতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের নামও বিজেপি, মানে ভারতীয় জনতা পার্টি। এবার নিবন্ধনের আবেদনকারী দলের মধ্যে একটির নাম তৃণমূল কংগ্রেস। এই নামের দলটি বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আছে। বাংলাদেশ আম জনতা পার্টিও নিবন্ধনের আবেদন করেছে। ভারতে আম আদমি পার্টি নামে একটি দল বেশ জনপ্রিয়। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বর্তমানে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। আম আদমি শব্দের অর্থও আম জনতা।
বাংলাদেশ এলডিপি নামে একটি দলও নিবন্ধনের আবেদন করেছে। যদিও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি–এলডিপি নামে একটি দল নির্বাচন কমিশনে এরইমধ্যে নিবন্ধিত, যার নিবন্ধন নম্বর ১।
এবার নিবন্ধন চেয়েছে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ)। যদিও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (নিবন্ধন নম্বর ৯) এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ (নিবন্ধন নম্বর ২৭) নামে দুটি দল এরই মধ্যে কমিশনে নিবন্ধিত।
প্রসঙ্গত, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে হলে আবেদনকারী দলকে অতীতের যেকোনো একটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে অন্তত একটি আসন পেতে হবে; অথবা যেকোনো নির্বাচনের একটিতে ৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে; অথবা দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলা (২১টি) ও ১০০ উপজেলা বা থানা পর্যায়ে দলের কমিটি ও কার্যালয় থাকতে হবে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে ড. এটিএম শামসুল হুদা কমিশন ৩৯টি দলকে নিবন্ধন দিলেও পরে জামায়াত, ফ্রিডম পার্টি ও ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধন বাতিল হয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ। ওই বছর নিবন্ধনের আবেদন বাতিল হওয়ার পর এবারও যেসব দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে তার মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণ অধিকার পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি এবং বাংলাদেশ হিন্দু লীগ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে ২০১৯ সালে নিবন্ধন পায় দুটি দল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস।
যদিও রাজপথ ও টেলিভিশনের টকশোতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে পরিচিত ও আলোচিত জোনায়েদ সাকির দল গণসংহতি আন্দোলন নিবন্ধনের জন্য বছরের পর বছর নির্বাচন কমিশনে ঘুরছে। তাদের নিবন্ধনের বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
এবার যেসব দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি সম্প্রতি রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেননা দলটি জামায়াতের লোকেরা গঠন করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। যেহেতু জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, তাই তারা নতুন দল গঠন করেছেন। এরইমধ্যে নানা ফোরামে দলটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই এই দলকে 'নতুন বোতলে পুরোনো মদ' বলে অভিহিত করছেন। দলটির নেতারা দাবি করছেন, এই দল যারা গঠন করেছেন তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পরের প্রজন্ম এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড তারা সমর্থন করেন না। যদিও এই দলটি শেষ পর্যন্ত জামায়াতের ছায়া থেকে কতটুকু বের হয়ে আসতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) গঠনের আগে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহলের সৃষ্টি করেছিল 'আমার বাংলাদেশ পার্টি' বা সংক্ষেপে এবি পার্টি। ২০২০ সালের ২ মে এবি পার্টির আত্মপ্রকাশ হয়। এর উদ্যোক্তা জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের একদল সংস্কারপন্থী নেতা-কর্মী, যারা একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য জামায়াতের ক্ষমা না চাওয়া এবং দলটির বাস্তবভিত্তিক সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ কারণে রাজনৈতিক মহলে অনেকের ধারণা ছিল, জামায়াত থেকে অনেকে এবি পার্টিতে যোগ দেবেন। কিন্তু ২ বছরেও এই দলটি জামায়াতকে সেভাবে টানতে পারেনি এবং রাজনীতির মাঠেও সাড়া ফেলতে পারেনি। অবশেষে বিডিপি নামে নতুন দল গঠনের খবর আসে। এবার এবি পার্টিও নিবন্ধনের আবেদন করেছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরুল হক নুর। তার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ছাত্র অধিকার পরিষদের নামের সঙ্গে মিল রেখে 'গণঅধিকার পরিষদ গঠন' করেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া। গণঅধিকার পরিষদও এবার নিবন্ধনের আবেদন করেছে। এই দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী—যিনি সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও নানা ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করেন। 'ভাসানির অনুসারি পরিষদ' নামে যে সংগঠনের তিনি চেয়ারম্যান, সেটিও এবার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।
আওয়ামী লীগের সাবেক ডাকসাইটে নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, যিনি অনেক দিন ধরেই সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ, তার দল নাগরিক ঐক্যও নিবন্ধনের আবেদন করেছে। যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই করে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করার কথা রয়েছে।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মতো আয়তনে ছোট্ট এবং এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার দেশে কতগুলো রাজনৈতিক দল প্রয়োজন? এ মুহূর্তে যে ৩৯টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত তার মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সিপিবি, জাসদ ও বাসদের বাইরে আর কোনো দলের নাম কি সাধারণ মানুষ জানে?
চরমোনাই পীরের দল ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো ইসলামি দলের নাম সাধারণ মানুষের মধ্যে সেভাবে আলোচিত নয়। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া অন্য অনেক দলের প্রার্থীর জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও এত এত দল কেন গড়ে ওঠে এবং তারা কেন নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বিতা করে? আবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দুটি দল একাই যেখানে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা রাখে, সেখানে তারাও বা কেন অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট দল নিয়ে জোট গড়ে তোলে?
বস্তুত রাজনীতি একটা বিরাট ব্যবসা। দল ছোট হোক আর বড়; পদ-পদবি বিক্রি হয় মোটামুটি সব দলেই। টাকা দিয়ে দলীয় পদ কিনে ওই পরিচয় দিয়ে ব্যবসা করা সহজ। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানা সুযোগ-সুবিধা নেওয়া যায়। আবার ছোট দল হলেও বড় দলের আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নেওয়া যায়। বড় দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে ভবিষ্যতে বড় নেতা হওয়া, এমপি ও মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখা যায়।
যেহেতু বড় দলগুলো তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে বড় জোট গঠন করে নিজেদের ক্ষমতার প্রদর্শন করে, ফলে সেই জোটে যুক্ত হয়ে বড় দলের শরিক বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে ভবিষ্যত রাজনীতির পথ পরিষ্কার করা যায়। আবার অপেক্ষাকৃত ছোট দল হলে তারা নিজেরা না জিতলেও শরিকদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোট কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। এরকম নানা সমীকরন কাজ করে ছোট ছোট দল গঠনের পেছনে।
যেমন সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি কিংবা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতারা যে আওয়ামী লীগের মতো বিরাট দলের মন্ত্রিসভায় জায়গা পাবেন, সেটি একসময় কারো কল্পনাতেও ছিল না। যেমন মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য; যেমন রেজা কিবরিয়া ও নুরের গণঅধিকার পরিষদ। ভবিষ্যতে যদি বিএনপি সরকার গঠন করে তাহলে এই দলের শীর্ষ নেতারা যে মন্ত্রিসভায় জায়গা পাবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ কম। যদিও একক দল হিসেবে ভোটে দাঁড়ালে নাগরিক ঐক্য বা গণঅধিকার পরিষদ খুব বেশি ভোট পাবে বলে মনে হয় না। কারণ এখনও দেশের মানুষ ভোট দেয় মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। অর্থাৎ নৌকা ও ধানের শীষে।
অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলো মূলত বড় দুটি দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কিছু আসন দাবি করে। তাদের কেউ কেউ জিতেও যান মূল দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায়। অথচ তাদের নিজের দলের প্রতীকে ভোটে দাঁড়ালে হয়তো জামানতও বাজেয়াপ্ত হবে। ফলে রাজনীতিতে জোটের একটা গুরুত্ব আছে। বিশেষ করে আন্দোলনের মাঠে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কতগুলো এবং বিএনপির সঙ্গে কতগুলো দল জোটবদ্ধ হলো; প্রধান দুটি দলের নির্বাচনী জোটে কারা কারা গেলো—এসব বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
যে কারণে দেশের প্রধান ২ দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করলেও তাদের জয়ী হওয়ার কথা। কিন্তু তারপরও তাদের ১৪ দলীয় জোট, মহাজোট, ১৮ দল বা বিশ দলীয় জোট করতে হয়। বড় দলগুলোর এই জোট গঠনের পেছনে সম্ভবত একধরনের ভীতি কাজ করে যে, যদি একটি দল তাদের সমমনা অন্য ছোট বা মাঝারি দলগুলোর সঙ্গে জোট না করে, তাহলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে কিংবা ছোট ছোট দলগুলো মিলে একটি বড় শক্তি গড়ে তুলবে, যা বড় দলগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।
দেশের রাজনীতিতে, বিশেষ করে ভোটের মাঠে ইসলামি দলগুলোর খুব বেশি গুরুত্ব না থাকলেও জনমতের ওপর ইসলাম, মুসলমান, চেতনা, অনুভূতি ইত্যাদি শব্দ যেহেতু বেশ প্রভাব বিস্তার করে, ফলে সব বড় দলেরই একটা টার্গেট থাকে ইসলাম নামধারী দলগুলোকে নিজেদের বলয়ে রাখা। অনেক দিন ধরেই হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের সখ্য বা সমঝোতা তার বড় প্রমাণ। এরইমধ্যে কোনো কোনো ইসলামি দলের নেতা গণমাধ্যমে বলেছেন, বড় সব দল থেকেই তারা জোটে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব পাচ্ছেন।
এ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে ধর্মীয় নামধারী বা আপাতদৃষ্টিতে ধর্মীয় দল বলে মনে হয়, এরকম দলের সংখ্যা অন্তত ১২টি। এগুলো হচ্ছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আটরশির পীরের দল জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট।
এবার যে ৮০টি দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে তার মধ্যে ধর্মীয় নামধারী বা নাম দেখে ধর্মীয় ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ বলে মনে হয় এরকম দলের সংখ্যা অন্তত ৮টি। এগুলো হচ্ছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি (বি.ইউ.আই.পি), বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বি এম জে পি), বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি এবং বাংলাদেশ হিন্দু লীগ।
এবার যে ৮০টি দল নিবন্ধনের আবেদন করলো, তাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কতগুলো নিবন্ধন পাবে, তা এখনই বলা মুশকিল। তবে অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, অধিকাংশ দলের আবেদনই বাতিল হয়ে যাবে। কেননা সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৭৬টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। নিবন্ধন পায় মাত্র দুটি দল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পায় মাত্র তিনটি দল। অথচ আবেদন করেছিল ৪৩টি দল। আর ২০০৮ সালে দেশে প্রথম বারের মতো যখন দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া শুরু হয়, তখন আবেদন করেছিল ১১৭টি দল। নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল।
তারপরও এবার কয়েকটি দল বিশেষ করে নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানি অনুসারি পরিষদ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও এবি পার্টির নিবন্ধনের দিকে দেশবাসীর নজর থাকবে। সেইসঙ্গে ধর্মীয় নামধারী কতগুলো দল নিবন্ধন পেলো, তার মধ্য দিয়েও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের রাজনীতি কেমন হবে—সে বিষয়ে কিছুটা ধারণা হয়তো পাওয়া যাবে।
আমীন আল রশীদ: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments