‘নায়ক’ কেনো দেখতে হবে?
‘নায়ক’ ছবিটা কি নতুন কিছু দিয়েছে দর্শকদের? তাহলে চলুন উত্তরটির খোঁজ নেওয়া যাক। নতুন অনেক কিছু পাওয়া ছবিটির মধ্যে ডুব দিলে। প্রথমটি হলো বাপ্পীর নতুন লুক। এমনভাবে তাকে আগে দেখা যায়নি। ছবির চরিত্রে, পোশাকে রয়েছে আধুনিকতা। সময়কে ধরতে চাওয়ার একটা চেষ্টা করা হয়েছে।
অভিনয় করার অপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বাপ্পী। এই চেষ্টা হয়তো তাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে। তবে বাপ্পীকে সংলাপ বলার ক্ষেত্রে একটু না, অনেকখানি মনোযোগী হতে হবে। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠলে তার গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে আগামীতে।
ছবির গানগুলোর কোরিওগ্রাফি, দৃশ্যায়ন চোখ জুড়ায়। তবে এর সংলাপ রচনায় খুব বেশি মনোযোগী ছিলেন না সংলাপ রচয়িতা এটা স্পষ্ট। সংলাপে অহেতুক শব্দচয়ন ভীষণ বিরক্তিকর ঠেকেছে। গানের দৃশ্যায়নে এতো এতো বাজেট রাখা হয় কিন্তু ছবির গল্প, সংলাপের বিষয়ে এমন অবহেলা সত্যি দুঃখজনক। যতোদিন এই বিষয়গুলোর প্রতি বাণিজ্যিক ধারার ছবির পরিচালকরা মনোযোগী না হন ততদিন তাদের ছবি এখানেই আটকে থাকবে- খুব বেশি এগোবে না।
‘নায়ক’ ছবিতে যে গল্প বলা হয়েছে সেই তা আরও টানটান করে রূপালি পর্দায় বুনতে পারলে দর্শকরা বেশি মুগ্ধ হতেন। কিন্তু, পরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহান সেদিকে খুব বেশি মনোনিবেশ করেননি। যদি করতেন তাহলে তা অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতো ‘নায়ক’ ছবিটিকে। ছবির শেষ দৃশ্যে বাপ্পীর সংলাপগুলো আরও বেশি আবেগঘন করে রচনা করলে একটি ঘোর তৈরি হতে পারতো। আরও বেশি হাহাকার তৈরি হতো দর্শকদের মনের মধ্যে।
কিন্তু, পরিচালক সেই ঘোর বা হাহাকার তৈরি করতে পারেননি। এখানে সংলাপ রচনাকারী দায়ী বলে আমার ব্যক্তিগত ধারণা। একটি ছবির গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়টি পরিচালকরা কেনো এড়িয়ে যান তা ঠিক বোধগম্য হয় না।
‘নায়ক’ ছবির কিছু দৃশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে যাদের পর্দায় নিয়ে আসা হয়েছে তাদের অনেককেই ছাত্র-ছাত্রী মনে হয়নি। হয়তো পরিচালক ভেবেছেন কেউ এসব দিকে মনোযোগ দেবেন না। কিন্তু, বাস্তবে এগুলো ভীষণ দৃষ্টিকটু লেগেছে।
নবাগত অধরা খানের পর্দায় অভিষেক হলো ‘নায়ক’ ছবি দিয়েই। একজন নতুন নায়িকা হিসেবে তিনি অনেক নতুনের চেয়ে প্রাণবন্ত ছিলেন পর্দা জুড়ে। তবে কিছু জায়গায় উচ্চস্বরে সংলাপ বলায় তা অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। কয়েকটি দৃশ্যে তার মুখের অভিব্যক্তিতে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন তা বোঝা যায়নি। এগুলো চর্চার বিষয়। ছোট ছোট এই বিষয়গুলো চর্চার মাধ্যমে কাটিয়ে উঠলে আগামীতে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে অধরা খানের।
প্রথম ছবিতেই মৌসুমীর মতো বড় অভিনেত্রীর সঙ্গে স্ক্রিন ভাগাভাগি করা তার জন্য পরম পাওয়া। গানের দৃশ্যগুলোতে দুর্দান্ত লেগেছে অধরা খানকে।
সিনেমার এমন খারাপ দিনে ‘নায়ক’ ছবিটি দর্শকরা হলে গিয়ে দেখছেন। বেশ অনেকগুলো শো হাউজফুল গেছে। এটি সিনেমার জন্য দারুণ সংবাদ। ‘নায়ক’ বাণিজ্যিক ঘরানার ছবি। সব ধরনের চলচ্চিত্র দেখার চর্চা গড়ে উঠুক আমাদের দর্শকদের মধ্যে। এমনভাবে দর্শকরা হলে গিয়ে ছবি দেখলে বাংলা চলচ্চিত্র আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
Comments