আসছে রেমিট্যান্স, চাঙ্গা ডলার বাজার

ডলার
সরকারের বকেয়া আমদানি বিল সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ করলে আন্তঃব্যাংক বাজার পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ সংকটের পর দেশের ডলার বাজার ও আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার আবার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।

সম্প্রতি দেশে বাড়তি রেমিট্যান্স আসা ও ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট গ্রহণের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করছে।

উচ্চ আমদানি বিল, প্রত্যাশার চেয়ে কম রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ডলার সংকটের কারণে আন্তঃব্যাংক মুদ্রার বাজার অনেক দিন থেকেই বিশাল চাপে ছিল।

ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ট্রেজারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. শাহীন ইকবাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ার ওপর ভিত্তি করে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ডলারের সংকট কমছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার আরও সহজভাবে কাজ করছে।'

দেশের ডলারের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স প্রবাহ গত জুলাইয়ে ১০ মাসের সর্বনিম্নে নেমে এসেছিল। তখন আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ দমনে পাঁচ দিন ইন্টারনেট বন্ধ রাখে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর অনেক প্রবাসী দেশ গঠনে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে ডলার পাঠানোর প্রচারণা শুরু করলে রেমিট্যান্স আবার বাড়তে শুরু করে।

গত আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের মাসের তুলনায় ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে দুই দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি সেপ্টেম্বরে প্রথম ১৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে এক দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।

'কৃষি ব্যাংকের মতো যেসব ব্যাংক বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পায় কিন্তু এলসি খোলার চাপে থাকে না, তারা আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার দিচ্ছে। এতে ডলার লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ কমছে।'

রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি থাকায় রিজার্ভও এখন চাঙ্গা হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ ক্যালকুলেশন স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত রিজার্ভ ছিল প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা গত সপ্তাহে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ার আরেকটি সুবিধা হলো ব্যাংকগুলো এখন নিজেদের মধ্যে সহজে ডলার লেনদেন করতে পারছে।

আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন সক্রিয় থাকায় ডলারের দামও স্থিতিশীল হবে।

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রেমিট্যান্স বাড়ার পাশাপাশি ক্রলিং পেগ চালুসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু উদ্যোগও আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।'

গত ৮ মে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে ডলার বিনিময় হার সমন্বয়ের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, 'এই উদ্যোগের ফলে বাজারে অস্থিরতা কমেছে। ব্যাংক ও খোলা বাজারে ডলারের দাম কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে।'

বর্তমানে ব্যাংক ও খোলা বাজারের মধ্যে ডলারের দামের পার্থক্য এক থেকে দুই টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, 'আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ১১৮-১২০ টাকায় বিক্রি হলেও খোলাবাজারে ১২০ থেকে ১২১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'

এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন।

রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তাও বন্ধ করে দেন তিনি।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম আরও বলেন, 'এসব উদ্যোগের ফলে ব্যাংকিং খাতে আমানতকারী, রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ও ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরেছে। ব্যাংকগুলোয় ডলারের প্রবাহ বেড়েছে।'

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, 'কৃষি ব্যাংকের মতো যেসব ব্যাংক বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পায় কিন্তু এলসি খোলার চাপে থাকে না, তারা আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার দিচ্ছে। এতে ডলার লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ কমছে।'

আন্তঃব্যাংক বাজারে পর্যাপ্ত ডলার আসায় এলসি খোলার চাপ অনেক কমেছে।

'এলসির চাহিদা মেটানোর পর এখন আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলার কিছুটা উদ্বৃত্ত আছে,' উল্লেখ করে ব্র্যাক ব্যাংকের শাহীন ইকবাল আরও বলেন, 'এটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রবণতা।'

আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে প্রতিদিন লেনদেন ৩০ মিলিয়ন ডলার থেকে ৯০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

সরকারের বকেয়া আমদানি বিল সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ করলে আন্তঃব্যাংক বাজার পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Dhanmondi 32 house demolition unfortunate: CA

The demolition of the house was a reaction to Hasina's violent behaviour, Chief Adviser's Press Wing said in a statement

31m ago