বাতিঘর
যারা বইয়ের পাতায় ওম খুঁজে পান জীবনের, তাদের একান্ত ঠিকানা বাতিঘর। এক কাপ ধূমায়িত কফির সঙ্গে আনকোরা বইয়ের গন্ধ উপভোগ্য করে তোলে অবসরের সময়টুকু। সে পরিতৃপ্তির লোভে প্রতিদিন মানুষের ভিড় লেগে থাকে জামাল খান রোডের প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলায় বাতিঘরে। বাতিঘর এখন শুধু একটি বই বিপণন কেন্দ্র নয়, চট্টগ্রামের মানুষের সুরুচির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন কেবল বইয়ের বিশাল সাম্রাজ্য দেখতে এখানে আসেন। এই বাতিঘরের বয়ান চট্টগ্রাম থেকে দিয়েছেন কমল দাশ
এখানে কেউ আপনাকে বই কেনার জন্য পীড়াপীড়ি করবে না। কেউ সন্দেহের চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকবে না আপনার দিকে। আপন মনে আপনি উল্টে যান বইয়ের পাতা। মন চাইলে চুমুক দিন কফির কাপে। বই কেনার জন্য কেউ তাড়া দেবে না আপনাকে। না কিনলেও কিছু যায়-আসে না যেন। আপনমনে উড়ে বেড়ান গ্রন্থকাননে। বই পড়ার এই মুক্ত পরিবেশকে উপভোগ করতে নগরীর প্রথিতযশা শিল্পী-সাহিত্যিকরা প্রতিদিনই আড্ডা জমান এখানে। বইপত্র ও লেখকদের নিয়ে প্রায়ই লেগে থাকে ছোটখাটো অনুষ্ঠান। এছাড়া বাতিঘরের রয়েছে নিজস্ব প্রকাশনা। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ত্রিশের অধিক বই। দেশ-বিদেশের সমাদৃত ও সদ্য প্রকাশিত বইগুলো সংগ্রহ করে বাতিঘর পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করে। আবার প্রেরণ করে সারাদেশের পাঠকদের কাছে। সম্প্রতি ঘরে বসেই বাতিঘরের বই পাওয়ার ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। মোট কথা, বাতিঘর মানে বইকে ঘিরে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। সারাদেশে বইয়ের দোকানগুলোর মধ্যে অনন্য বাতিঘর।
গোড়ার কথা
২০০৫ সালের ১৭ জুন চেরাগী মোড়ের ১০০ বর্গফুটের এক ছোট্ট দোকান থেকে বাতিঘরের যাত্রা শুরু। মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে সেদিন বাতিঘরের উদ্বোধন করেছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। যে চেরাগীতে শিল্পী-সাহিত্যিকরা নিছক আড্ডায় জড়ো হতেন, সেই চেরাগীতে যোগ হলো বইয়ের আলো। ছোট্ট দোকানটার পিদিমের মতো নিবু নিবু আলো অল্পদিনেই জ্বলজ্বল করে উঠল। বইয়ে ঠাসা ছোট্ট দোকানটি দৃষ্টি কাড়ে চট্টগ্রামের সুধী মহলের। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বইয়ের যেন একটা পোতাশ্রয় হয়ে উঠল দোকানটি। বইবিমুখতা নিয়ে যেখানে মানুষের প্রায় কটুকথা শোনা যায়, সেখানে বাতিঘর হয়ে উঠল এক সুখকর ব্যতিক্রম।
সাত বছরের মাথায় প্রায় দু’হাজার বর্গফুটের সুবিশাল পরিসরে উঠে এলো গ্রন্থবিপণিটি। শিল্পী শাহীনুর রহমানের করা অপূর্ব নকশায় প্রেসক্লাবের নিচতলাটি রূপ পেল এক প্রমোদতরীর। জাহাজের মতো করে বৃত্তাকার জানালা। মধ্যে একটা বাতিঘর। মেঝেতে কাঠের পাটাতন। কন্টেইনারের মতো করে টেবিল। ঝুলে আছে প্রাচীন জাহাজের মতো মোটা মোটা দড়ি। প্রথম দর্শনে যে কেউ চমকে যাবেন। বহিরাঙ্গের এই বিস্ময় কাটতে না কাটতেই চোখ যাবে বইয়ের রাজ্যে। রবীন্দ্রনাথ থেকে হুমায়ূন আহমেদ, পামুক থেকে সার্ত্রে- কে নেই এই বইয়ের জাহাজে।
মনে পড়ে, প্রেসক্লাব ভবনে হাজারো উৎসাহী পাঠকের ভিড়ে নবযাত্রায় বাতিঘরের আলোকবর্তিকা প্রজ্বালন করেছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। উপস্থিত ছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, প্রয়াত বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামসহ চট্টগ্রামের বিদ্যোৎসাহী অনেক মানুষ। ছোট্ট বাতিঘরের বৃহৎ কলেবরের এই যাত্রায় অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, এই বিপণি টিকবে তো? চট্টগ্রামের পাঠকদের ভালোবাসায় বাতিঘরকে একদিনের জন্যও ঝুঁকিতে পড়তে হয়নি। বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে বাতিঘর একটি স্বপ্নের নাম। চট্টগ্রামের বাইরের অনেক পাঠক স্বপ্ন দেখেন, তাদের শহরেও একদিন এ রকম একটি বুকশপ হবে।
বাতিঘরে এখন রয়েছে শতাধিক বিষয়, ৮০০০ লেখক ও ২৫০০ প্রকাশনা সংস্থার প্রায় ৯০ হাজার বইয়ের সংগ্রহ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। কী নেই এখানে। প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস, অন্য ভাষার সাহিত্য, জীবনী ও আত্মজীবনী, ধর্মীয় বই, আত্মউন্নয়নমূলক বই, আইন, রান্নার বই, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, মনোবিজ্ঞান, দর্শন, গণিত ও বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান, ভূতের বই, প্রকৃতি, চারুকলা, স্থাপত্যশিল্প, নাট্যতত্ত্ব, চলচ্চিত্র, ইতিহাস, রাজনীতি, সাংবাদিকতা ছাড়াও রয়েছে ইংরেজি বইয়ের বিশাল সম্ভার। এছাড়া আছে নির্বাচিত লেখক, প্রকাশক কর্নার, শিশু-কিশোর কর্নার, লিটল ম্যাগাজিন ও সাহিত্য সাময়িকী কর্নার এবং ক্যাফে কর্নার-
নির্বাচিত লেখক : নির্বাচিত লেখক কর্নারে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রায় সব বই। এই শেলফগুলোয় স্থান দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রকাশক কর্নার : বাতিঘর সবসময় দেশীয় প্রকাশনাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এখানে আছে বাংলাদেশের প্রকাশকদের আলাদা শেলফ। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, কথাপ্রকাশ, সময় প্রকাশন, বাংলাপ্রকাশ, অবসর ও প্রতীক প্রকাশনা সংস্থার কর্নার। এছাড়াও বাতিঘর শীর্ষস্থানীয় প্রকাশকদের বই গুরুত্বের সঙ্গে বিপণন করে।
শিশু-কিশোর কর্নার : বাতিঘর শুরু থেকেই শিশু-কিশোরদের বই পড়ায় উৎসাহী করে তোলার চেষ্টা করে আসছে। বাতিঘরে রয়েছে তাদের বয়সের উপযোগী দেশি-বিদেশি বইয়ে সমৃদ্ধ শিশু-কিশোর কর্নার।
লিটল ম্যাগাজিন ও সাহিত্য সাময়িকী কর্নার : বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাতিঘর নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত দুই বাংলার নির্বাচিত লিটল ম্যাগাজিন, সাহিত্য সাময়িকী ও জার্নালগুলো সংগ্রহ করে পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করে। এছাড়া দেশি-বিদেশি বিখ্যাত ম্যাগাজিনও এখানে পাওয়া যায়।
ক্যাফে কর্নার : বইপ্রেমীরা যাতে বাতিঘরে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন এ জন্য রয়েছে ছোট্ট একটা ক্যাফে। এখানে চা, কফি, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ও হালকা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।
অন্য সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে, কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ, গিফট ভাউচার, এছাড়া গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী দেশ-বিদেশ থেকে বই সংগ্রহ এবং কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বই পাঠানো হয়।
গ্রন্থপ্রেমীদের জন্য এ যেন এক টুকরো স্বর্গ। বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ হয়তো বইয়ের লেখককেই পেয়ে যাবেন এখানে। বাতিঘর আয়োজিত বিভিন্ন আয়োজনে এসে এখানকার লেখক-পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ, মোহাম্মদ রফিক, মামুনুর রশীদ, হেলাল হাফিজ, সেলিনা হোসেন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, শাহাদুজ্জামান, আসাদুজ্জামান নূর, বিপ্রদাশ বড়–য়া, নাসরীন জাহানসহ আরো অনেকে। পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান লেখকদের মধ্যে ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র, কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, কবি রণজিৎ দাশ, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার এসেছিলেন বাতিঘরের আমন্ত্রণে। এসের্ছিলেন ইংরেজি ভাষার খ্যাতিমান লেখক বিক্রম শেঠ ও জিয়া হায়দার রহমান। বাতিঘর দেখতে এসে তারাও জানিয়েছেন মুগ্ধতার কথা।
একজন দীপঙ্কর
দীপঙ্করের জন্ম ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।
কিশোরকাল থেকে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহী। পটিয়ার শিশু-কিশোর সংগঠন কুসুম কলি আসর-এর সঙ্গে যুক্ত হন ১৯৯১ সালে। ১৯৯৪-এ সচেতন সাহিত্য গোষ্ঠী মালঞ্চ’র সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯৯৬ থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র পটিয়া শাখার সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের অনুপ্রেরণায় ১৯৯৯ সালে ঢাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্পে যোগ দেন। ২০০১ সালে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম সম্প্রসারিত হলে চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালু করার দায়িত্ব পান।
২০০১ সালে নীল রঙের একটা বড় বাস ভর্তি বই নিয়ে দীপঙ্কর হাজির হলেন চট্টগ্রামে, তার নিজ এলাকায়। জল পেয়ে চাঙ্গা হয়ে ওঠা মাছের মতো তিনি আবার তার স্বপ্ন নিয়ে শুরু করলেন উন্মাদনা। কীভাবে বাড়ানো যায় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির পাঠক। কীভাবে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিকে নিয়ে যাওয়া যায় এই শহরের প্রতিটি অলিগলিতে। সেই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সূত্র ধরে তিনি পরিচিত হতে লাগলেন চট্টগ্রামের পাঠক মহলের সঙ্গে। অনেক পাঠক বই সংগ্রহ করতে চান। কিন্তু এ শহরের বুকশপগুলোতে পাওয়া যেত না পাঠকদের প্রত্যাশিত সেসব বই। অভাব অনুভব করলেন চট্টগ্রামে একটা সমৃদ্ধ গ্রন্থবিপণির।
যে বয়সে তরুণরা স্বপ্ন দেখে রাতারাতি ধনী হয়ে যাওয়ার, লাখ টাকার গাড়ি আর কোটি টাকার বাড়ি করার- তিনি তখন বই ভর্তি একটা বইয়ের দোকানের স্বপ্নে বিভোর। যে দোকানে এসে এ শহরের রুচিশীল পাঠকরা মুগ্ধ হয়ে যাবেন। বছর চারেক লাগল প্রস্তুতির। যখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থবিপণিগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তখন যাত্রা শুরু করল ‘বাতিঘর’ মাসের বেতন থেকে অল্প অল্প করে সঞ্চিত অর্থ আর বন্ধু-বান্ধব থেকে ধার করে সাজালেন দোকানটা। অনেকেই ভাবল উত্তেজনা কেটে গেলেই সব চুকে-বুকে যাবে, তখন পথে বসবে ছেলেটা- ‘সওদাগর-আড়তদারদের’ শহরে আর যা-ই হোক বই বিক্রি হবে না। আড়ালে অনেকে আফসোসও করলেন এই স্বপ্নবান যুবকের পরিণতির কথা ভেবে। কিন্তু দীপঙ্কর বাতিঘরের দীপশিখাটি ঠিকই তার স্বপ্নের শক্তিতে জ্বালিয়ে রাখলেন। প্রমাণ করলেন স্বপ্নের শক্তিমত্তা।
২০০৫ সালে নগরীর চেরাগীপাহাড় মোড়ে ছোট্ট পরিসরে সৃজনশীল গ্রন্থবিপণি বাতিঘর-এর কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে বাতিঘরকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলায় বড় পরিসরে সম্প্রসারিত করেন। বাতিঘর এখন দেশে-বিদেশে লেখক-পাঠক-সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবেও যাত্রা শুরু করেছে বাতিঘর।
সময়ের সঙ্গে বাতিঘর
সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বাতিঘর। কিছুদিন পরপরই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অনুষঙ্গ। এখন ফেসবুকে বাতিঘরের পেজে পাবেন নতুন আসা বইগুলোর বিবরণ। সেখান থেকে বই নির্বাচন করে ফোন করলে ঘরে বসেই বই সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া নিয়মিত গ্রাহকদের জন্য প্রিভিলেজ কার্ড প্রবর্তনেরও চিন্তাভাবনা চলছে।
বাতিঘরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হলো দীপঙ্কর দাশের সঙ্গে। তিনি জানালেন, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় সদরে একটি মানসম্মত বুকশপ চালু করার ইচ্ছে আছে তার। প্রথম পর্যায়ে আগামী বছরের শুরুতে রাজধানী ঢাকায় চালু হতে যাচ্ছে বাতিঘর। পরবর্তীতে চালু হবে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে। এভাবে পর্যায়ক্রমে গ্রন্থবিপণিগুলোকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে পাঠক-সমাজ গড়ে তুলতে চান তিনি। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অনলাইন সুবিধা চালু করতে যাচ্ছে বাতিঘর। পাঠকরা ঘরে বসে বই দেখা ও সংগ্রহের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। অনেকে পুরনো ও দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহ ও বিক্রি করতে চান। এজন্য বাতিঘরে চালু হচ্ছে ‘পুরনো ও দুষ্প্রাপ্য বই’ কর্নার।
প্রকাশনার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, চট্টগ্রামে একসময় প্রকাশনার গৌরবোজ্বল সময় ছিল। পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রামে সৈয়দ মোহাম্মদ শফি প্রতিষ্ঠিত বইঘরের সুনাম ছিল দুই বাংলায়। বইয়ের হরফ থেকে শুরু করে লেখক ও বিষয় নির্বাচন, প্রচ্ছদ, অলঙ্করণ ও মুদ্রণসৌকর্যে বইঘরের প্রকাশনাগুলো ছিল অতুলনীয়। বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ লেখকদের বই প্রকাশিত হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে। প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণে কাজ করেছেন দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ শিল্পীরা। বাংলা ভাষায় সৃজনশীল বই প্রকাশনাকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বইঘরের নামে এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে পাঠকরা। প্রকাশনা জগতে চট্টগ্রামের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চায় বাতিঘর। এজন্য দেশ-বিদেশের কয়েকজন লেখকের কয়েকটি বই ইতোমধ্যে বাতিঘর থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আরো অনেক লেখকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাতিঘর। প্রকাশনার কাজ চলছে বেশ কিছু বইয়ের। নবীন লেখকদের পাশাপাশি বাংলা সাহিত্য ও বিশ্বসাহিত্যের চিরায়ত বইয়ের অনুবাদ প্রকাশ ছাড়াও বাংলা সাহিত্যের দুষ্প্রাপ্য বইগুলো মানসম্পন্নভাবে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করতে চায় বাতিঘর।
আগামী বছর বাতিঘর প্রতিষ্ঠার এক যুগ পূর্ণ হবে। এ উপলক্ষে বাতিঘর লেখক-পাঠকদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়ার পরিকল্পনা আছে। এ শহরের ‘বাতিঘর’-এর আলো ছড়িয়ে পড়–ক দিকে দিকে। চট্টগ্রামের এক যুবকের স্বপ্ন-সংগ্রামে ঘুচে যাক জাতির রুচির খরা। শুভ কামনা বাতিঘর, শুভ কামনা দীপঙ্কর।
Comments