নালায় পড়ে শিশুর মৃত্যু: পরিবারকে দায়ী করল চসিক তদন্ত কমিটি

চট্টগ্রামে খোলা নালায় পড়ে গত বুধবার তিন বছরের শিশু মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদনে মৃত্যুর ঘটনার জন্য শিশুটির পরিবারের 'অসতর্কতাকেই' মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ঘটনায় সিটি করপোরেশনের কোনো গাফলতি খুঁজে পায়নি কমিটি।
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবেদন জমা দেয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তথ্য দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, বুধবার বিকেল ৩টার দিকে নগরীর হালিশহর আনন্দিপুর এলাকায় বল কুড়াতে গিয়ে খোলা নালায় পড়ে যায় তিন বছরের হুমায়রা আক্তার।
পরে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে নালা থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপরই সিটি করপোরেশন দুর্ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যে নালায় শিশুটি পড়ে মারা যায় সেটি একটি বেসরকারি গার্মেন্টস কারখানার। ফলে এটি সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত নয়।
এতে আরও বলা হয়, ঘটনাস্থলে কোনো সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছিল না এবং শিশুটির মা যেখানেই ছিলেন, সেই কর্মস্থলেও ছিল না শিশুর নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা।
আরও উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনার জন্য একাধিক কারণ দায়ী—মায়ের কর্মস্থলে নিরাপত্তা ঘাটতি, পরিবারের অসতর্কতা, কারখানার মূল গেট খোলা থাকা এবং কোনো নিরাপত্তারক্ষীর অনুপস্থিতি।
এতে বলা হয়, প্রধান সড়ক ও গলির উচ্চতার পার্থক্য, কাঠামোগত অসামঞ্জস্যতাও দুর্ঘটনার সহায়ক হয়েছিল।
তবে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—কারখানায় শিশু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, জলাবদ্ধতার সময় শিশু ও বয়স্কদের বাড়তি নজরে রাখা, ঝুঁকিপূর্ণ নালা ঢেকে দেওয়া, নির্মাণে বিধি অনুসরণ নিশ্চিত করা এবং আবাসিক এলাকায় কারখানা চালুর নিয়মকানুন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'নালায় পড়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বড় কারণ অসতর্কতা। প্রবল বৃষ্টির সময় মেয়ের প্রতি নজর রাখা উচিত ছিল মায়ের, কিন্তু তিনি তা করেননি। এছাড়া যে ভবনে শিশুর মা কাজ করেন, সেখানে কোনো নিরাপত্তারক্ষী নেই। ফটকও খোলা ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'শিশুটি যে নালায় পড়ে মারা গেছে সেটা ব্যক্তি মালিকানাধীন নালা। সিটি করপোরেশনের নালা যেগুলো আছে সেগুলো স্লাব দিয়ে ঢাকা ছিল। তারপরও এমন দুর্ঘটনা কারো জন্য কাম্য নয়। সতর্কতার বিকল্প নেই।'
চট্টগ্রামে নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনা এটিই প্রথম না। গত ৬ বছরে নগরে খাল-নালায় পড়ে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে ২০২০ সালে ২ জন, ২০২১ সালে ৫, ২০২৩ সালে ৩, ২০২৪ সালে ৩ জন এবং চলতি বছর এ পর্যন্ত ২ জন।
সর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল হিজড়া খালে পড়ে ৬ মাস বয়সী সেহরিশের মৃত্যু হয়। সে সময়ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সে প্রতিবেদন এখনো জমা দেননি কমিটির সদস্যরা।
Comments