এখন আমাদের র‍্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ-ছয়ে থাকা উচিত ছিলো: বিদ্যুৎ

shahriar hossain biddut

২৫ বছর আগে আজকের দিনে টেস্ট মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। ২০০০ সালের নভেম্বরের ১০ তারিখ খেলতে নামে প্রথম টেস্ট। দেশের অভিষেক টেস্টে প্রথম বলটিই মোকাবেলা করেছিলেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ। কাকতালীয়পভাবে বদলি কিপার হিসেবে প্রথম স্টাম্পিংয়ে লেখা তার নাম। বাংলাদেশের টেস্টের ২৫ বছর পূর্তিতে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাতকারে সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন বিদ্যুৎ।

বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন এবং আপনার প্রথম টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতার স্মৃতি কি আপনার মনে আছে?

শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ: টেস্ট ক্যাপ অর্জন করা যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য একটি স্বপ্ন। এটা একটা বড় অর্জন—আপনি একটি টেস্ট খেলেন বা একশোটি, আপনি কিন্তু একজন টেস্ট ক্রিকেটারই থাকবেন। প্রথম টেস্টের সেই অভিজ্ঞতা মনে করতে হলে আমাকে ২০০০ সালের শুরুতে ঢাকা স্টেডিয়ামে এমসিসি (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব)-এর বিপক্ষে তিন দিনের ম্যাচের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। আমি উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করে—১৩৩ এবং ১২১ রানে অপরাজিত ছিলাম। সেই সময়, আমরা দীর্ঘ সংস্করণের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলছিলাম এবং এর পরপরই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পাই। আমাদের প্রথম টেস্ট ছিল ভারতের বিপক্ষে, যারা সেই সময়ের বিশ্বের অন্যতম সেরা দল ছিল। তাদের দলে (শচীন) টেন্ডুলকার এবং (সৌরভ) গাঙ্গুলীর মতো খেলোয়াড় ছিল—যারা আমাদের কাছে আইকন ছিলেন। বিকেএসপিতে প্রায় ১৮ থেকে ২০ জন খেলোয়াড়কে প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাকা হয়, যেখানে আমরা একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলি। আমাদের বলা হয়েছিল সেরা পারফরমাররা টেস্ট দলে জায়গা পাবে। আমি সেই খেলার প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করি। পরের দিনই, সংবাদপত্রগুলোতে শিরোনাম এসেছিল যে সেঞ্চুরি আমার জায়গা নিশ্চিত করেছে, এবং এখন বিতর্ক ছিল আমার সঙ্গে ওপেনিংয়ে কে আসবে—গুল্লা [জাভেদ ওমর] নাকি অপি [মেহরাব হোসেন]। যখন চূড়ান্ত দল ঘোষণা করা হলো এবং আমি টেস্ট ক্যাপ পরলাম, তখন মনে হলো ক্রিকেটে আমি আমার জীবনের সমস্ত স্বপ্ন অর্জন করেছি। আমি এখনও গর্ববোধ করি যে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বলটি আমিই খেলেছিলাম।

আপনি যখন ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলেন, তখন বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস ছিল না। কখন থেকে আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে?

বিদ্যুৎ: আমরা ইতিমধ্যেই ওয়ানডে স্ট্যাটাস অর্জন করেছিলাম এবং ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলেছিলাম, তবে এত তাড়াতাড়ি টেস্ট স্ট্যাটাস পাবো আশা করিনি। আশরাফুল [সৈয়দ আশরাফুল হক] ভাই এবং সাবের [হোসেন চৌধুরী] ভাই বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং সেই মাইলফলক অর্জনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর সারা দেশ উদযাপন করেছে। আমার মনে হয় এমসিসি ম্যাচের আমাদের পারফরম্যান্স, যেখানে ইংল্যান্ডের কয়েকজন খেলোয়াড়ও ছিল, সেটাও একটি ভূমিকা পালন করেছিল। তখন থেকেই আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম যে আমরা টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারব।

কেউ কেউ বলেন বাংলাদেশ সময়ের আগেই টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। আপনি কি একমত?

বিদ্যুৎ: আমার মনে হয় আমরা ঠিক সময়েই এটা পেয়েছি। আমাদের অভিষেক টেস্টে, আমরা প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করেছিলাম। এর পরপরই আশরাফুল সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হয়। আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতান টেস্ট প্রায় জিতেই গিয়েছিলাম এবং পরে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে আমাদের প্রথম টেস্ট জয় রেকর্ড করি। আশরাফুল, মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব এবং তামিমের মতো খেলোয়াড়রা টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই উঠে আসে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সামর্থ্য ছিল—তবে আমরা তার যথাযথ ব্যবহার করতে পারিনি।

আপনার টেস্ট ক্যারিয়ার নিয়ে কি কোন আক্ষেপ আছে? আপনি মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছেন।

বিদ্যুৎ: আমার মনে হয় আমি আরও তিন-চার বছর খেলতে পারতাম। শেষ টেস্ট খেলার সময় আমার বয়স মাত্র ২৮ ছিল। তবে সেই সময়ে বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল না—আমি বেশ একরোখা ছিলাম। আমার বেশ কয়েকবার চোট লেগেছিল এবং আমি দলে যাওয়া-আসার মাঝে ছিলাম, তবে আমি সবসময় পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ফিরে আসার চেষ্টা করেছি। ২০০৪ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়, ফারুক [আহমেদ] ভাই নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজার দুটোই ছিলেন। প্রথম টেস্টের আগে আমি আহত হই এবং ফিজিও জন গ্লস্টার আমাকে সাত দিনের বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন যাতে আমি ওয়ানডের জন্য ফিট হতে পারি। কিন্তু প্রথম ওয়ানডের পর তারা আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। আমি সেই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলাম এবং দেশে ফিরে বোর্ডকে একটি অবসরপত্র পাঠিয়ে দেই। এরপর আমি আর কোনো ধরনের ক্রিকেট খেলিনি।

এই ২৫ বছরে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে আপনি কি খুশি?

বিদ্যুৎ: আমি সন্তুষ্ট নই। অন্যান্য দল টেস্ট ক্রিকেটে ২৫ বছর পর একটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। আমাদের এখন অন্তত পাঁচ বা ছয় নম্বরে থাকা উচিত ছিল। আমাদের কিছু দারুণ খেলোয়াড় এবং ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স আছে, কিন্তু দল হিসেবে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নতি করিনি। যখন অপি এবং আমি ওপেনিং করতাম, তখন মানুষ আমাদের উপর আস্থা রাখত। ২৫ বছর পরেও, আমরা এখনও আমাদের ওপেনিং জুটি নিয়ে লড়াই করছি—এটা একটা বড় ব্যর্থতা। ওয়ানডের ক্ষেত্রেও একই কথা। আমাদের উপরের দিকে কোন থিতু জুটি নেই।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতির জন্য আপনি কী পরামর্শ দেবেন?

বিদ্যুৎ: দল নির্বাচন একটি বড় সমস্যা। কিছু খেলোয়াড় অনেক সুযোগ পায়, অন্যরা একেবারেই পায় না। ঘরোয়া ক্রিকেটের মান কমে গেছে। সবাই বিপিএল নিয়ে উত্তেজিত, কিন্তু এটি আমাদের ক্রিকেটের উন্নতি করবে না। আমাদের দীর্ঘ সংস্করণের ঘরোয়া ম্যাচের উপর জোর দেওয়া দরকার। ভারতের মতো, আমাদের অ-১৫ এবং অ-১৬ দীর্ঘ ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট চালু করা উচিত যাতে তরুণ খেলোয়াড়রা লাল বলের ক্রিকেটের সাথে পরিচিত হতে পারে। প্রতিটি জেলায় আমাদের কোচ আছে, কিন্তু আমরা তার ফল দেখছি না। ভারত নতুন প্রতিভা তৈরি করে চলেছে; আমরা একই খেলোয়াড়দের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করছি। ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে এবং নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করতে তৃণমূল স্তর থেকে উন্নয়ন কাজ শুরু করতে হবে। অবকাঠামোর উন্নতি হয়েছে, তবে বিসিবির উচিত এটি ব্যবহারের জন্য আরও বেশি বিনিয়োগ করা। আমাদের ঘরোয়া কাঠামোতে এখনও একটি বিশাল ফাঁক রয়েছে যা সমাধান করা দরকার।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

11h ago