ঈদে চাহিদা বাড়ায় লিচুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন রংপুর-লালমনিরহাটের ব্যবসায়ীরা

ঈদকে কেন্দ্র করে রংপুর অঞ্চলে হঠাৎ করেই লিচুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একদিনের ব্যবধানে প্রতি ১০০ লিচুর দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীদের দাবি, লিচুর সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেড়েছে। তবে ভোক্তারা বলছেন, এই মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক এবং ইচ্ছাকৃত।
ঈদের আগের দিন রংপুর শহরের বাজারগুলোতে ভালো জাতের ১০০ লিচুর দাম ছিল ৮০০-১০০০ টাকা। মাঝারি মানের লিচু বিক্রি হয়েছে ৪০০-৫০০ টাকায়, আর নিম্নমানের লিচু পাওয়া গেছে ২০০-৩০০ টাকায়। কিন্তু ঈদের দিন থেকে সব শ্রেণির লিচুর দাম ৮০-১০০ টাকা করে বেড়েছে।
সাতমাথা এলাকার কলেজ শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, 'ঈদের আগের দিন ৮০০ টাকা দিয়ে যে লিচু কিনেছিলাম, ঈদের দিন একই লিচু নিতে গিয়ে দিতে হয়েছে ৯০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে গিয়ে তর্কে জড়াতে হচ্ছে।'
অন্যদিকে, লালমনিরহাট শহরের বিডিআর গেট এলাকার মুদিদোকানদার শরিফুল ইসলাম জানান, ঈদের আগে যে লিচুর দাম ২০০ টাকা ছিল, ঈদের দিন তা চাওয়া হয়েছে ৩০০ টাকা। বাধ্য হয়েই বেশি দামে কিনতে হয়েছে।
লিচুর এই মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে রংপুর শহরের ফল ব্যবসায়ী আহেদুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিন থেকে বাজারে ফলের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু লিচুর সরবরাহ কম। আমাদেরকেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামেই বিক্রি করছি।
লালমনিরহাটের ফল ব্যবসায়ী আরসাদ হোসেন বলেন, এখন তো লিচু পাচ্ছেন। এক সপ্তাহ পরে লিচু পাওয়াই যাবে না। তখন ১০০ লিচু কিনতে হবে দ্বিগুণ দরে।
লিচুর উৎপাদনের দিক থেকে রংপুর অঞ্চল অন্যতম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে এক হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে, উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ১২৫ টন লিচু। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ উৎকৃষ্ট, ৪০ শতাংশ মাঝারি এবং ৩০ শতাংশ নিম্নমানের লিচু।
লালমনিরহাটের এক লিচু বাগান মালিক শামসুল ইসলাম জানান, তার বাগানে ৩০০টি লিচুগাছ রয়েছে। তিন মাস আগেই পুরো বাগানের ফল আগাম বিক্রি করেছেন এক ব্যবসায়ীর কাছে।
'ফলন এবার ভালোই হয়েছে। বাগানে এখনো অন্তত ২০ শতাংশ লিচু রয়েছে। ঈদে শহরগুলো থেকে মানুষ গ্রামে ফিরে পরিবারের জন্য ফলমূল কেনে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা', যোগ করেন তিনি।
রংপুর বিভাগীয় কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এন এম আলমগীর বাদশা ডেইলি স্টারকে বলেন, লিচুর দাম বাড়ানোর বিষয়টি জেনেছি। এখন সরকারি ছুটি থাকায় অফিসের কাউকে অভিযানে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে একটি অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
Comments