অনশনরত শিক্ষার্থী ও কুয়েট প্রশাসনের উদ্দেশ্যে যা বললেন শিক্ষা উপদেষ্টা

সি আর আবরার। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেছেন, আমার দিক থেকে পিতা হিসেবে, অভিভাবক হিসেবে যতটুকু বলার বলেছি। আমি খুশি হতাম— যদি তারা আমার কথা মেনে নিত। আবার এটাও বুঝি যে, বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তারা যা করছে, তা তাদের অধিকার।

আজ বুধবার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এসব বলেন তিনি।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, 'কুয়েটের পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। এই গরমে অনশনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি তাদের জন্য ভীষণভাবে শঙ্কিত। গতকাল আমরা তিনজনের একটি কমিটি করেছি। তারা এসে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের একটা সুপারিশ দেবেন। এরপর আমরা পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করব। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, পরিস্থিতি এই পর্যায়ে চলে গেছে যে— তাদের অনশন করতে হচ্ছে। তারা চাইছে আমরা এখনই কোনো ঘোষণা দেই, যেন তারা অনশন শেষ করতে পারে।'

'আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, এখানে আইনি বিষয় রয়েছে— আমরা যাই করি না কেন, সেটা আইন দ্বারা নির্দিষ্ট হতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার নির্দিষ্ট আইন রয়েছে এবং সেই আইনের মধ্যে থেকে আমাদের কমিটি সুপারিশ করবে বলে আশা করছি। সুপারিশ আমাদের হাতে এলে চেষ্টা করব যত দ্রুত সেটা কার্যকর করা যায়,' বলেন তিনি।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, 'আমি গতকাল রাতে শুনেছি অনশনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের অবস্থা ভালো না। তাই আমি তাদের অনশন ভাঙাতে এসেছি। আমার মনে হয়েছে, তাদের দিক থেকে একটা সন্দেহ আছে যে, বিভিন্ন সময়ে যে কমিটি হয়— তারা এসে সবকিছু করার কথা বলে। কিন্তু পরবর্তীতে রিপোর্ট পাওয়া যায় না, কার্যকর ভূমিকা তো দূরের কথা।'

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার পর যে পরিণতি হয়েছিল, তা নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, 'তারা কেউ কেউ বলেছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার পর তো তাদের জন্য কিছু করা হলো না। আমি বলেছি, তিনি (ড. জাফর ইকবাল) যেটা করেছিলেন তা কেন করেছিলেন জানি না। সেখানে তিনি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হয়ে, তাদের চেতনায় উজ্জীবিত একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে এটা করেছিলেন। তার ওপর অনেকে আস্থা রেখেছিলেন, ভেবেছিলেন হয়তো তিনি কথা রাখবেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। এটা তার বিষয়। এ বিষয়ে আমার আসলে কিছু বলার নেই।'

'এখানে আমি নিজে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে তোমাদের কাছে এসেছি। আমি তোমাদের বলতে পারি— কমিটির যে সুপারিশ আসবে, সেটা আমরা বিবেচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেব, তা আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করব', যোগ করেন তিনি।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, 'আমি তাদের সঙ্গে একমত হয়েছি- তাদের সন্দেহ অত্যন্ত বাস্তবভিত্তিক সন্দেহ। তবে আমার কাজ দেখে তারা জাজ করবে, ওই প্রতিশ্রুতি আর এই প্রতিশ্রুতির মধ্যে কোনো পার্থক্য হবে কিনা।'

শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙার বিষয়ে কী বলেছে জানতে চাইলে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, 'আমি তাদের বলেছি— তোমরা তো অনশন ভাঙতে চাচ্ছো না, তবে তোমাদের মধ্যে যারা অনেক অসুস্থ হয়ে গেছো তাদের আন্দোলন তো অন্যরা অব্যাহত রাখবে, তাই তোমরা অল্প একটু পানি খাও, নিজেদের সুস্থ করে তোলো। তখন তারা বলল, না, তারা এটা করবে না।'

'আমার দিক থেকে পিতা হিসেবে, অভিভাবক হিসেবে যতটুকু বলার বলেছি। আমি খুশি হতাম— যদি তারা আমার কথা মেনে নিত। আবার এটাও বুঝি যে, বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তারা যা করছে, তা তাদের অধিকার,' বলেন তিনি।

এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ারের সামনে অপেক্ষারত শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

সেখানে তিনি বলেন, 'আপনাদের দিক থেকে যা করার সেগুলো নিশ্চিত করেন। তবে কোনো রকমের বাড়তি উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে। আপনারা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের ক্ষোভ আছে— যারা এখানে অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে এখনো নাকি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তাদের কাউকে নাকি গ্রেপ্তার করা হয়নি। কেউ যদি আইন ভেঙে কিছু করে থাকে, তাহলে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, আমি বুঝতে পারছি না। এটা আমি আমার সিনিয়র কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করব যে, দিস ইজ এ ল্যাপস।'

আলোচনার বিষয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এক দফা দাবিতে অনড়। উপাচার্য পদত্যাগ করবেন, তারপর আমরা অনশন ভাঙব। আমাদের একটাই দাবি, উপাচার্যের অপসারণ। এর বাইরে আমরা অন্য কিছু ভাবছি না।'

শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পরপরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখানে তারা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

6h ago