জীবনের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে তুলে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে

জীবনের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে
ছবি: ফ্রিপিক

মানুষের জীবনে সাফল্য, ব্যর্থতা, লাভ-লোকসান ইত্যাদি বিভিন্ন হিসেবের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়ার আগে একটি বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি। তার সমস্ত বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা তার নিজের হাতে আছে তো? নিজের অজান্তেই সমাজের অন্য সব লোকের হাতে নিজের জীবনের সমস্ত ভালোমন্দের নীতি নির্ধারণের দায় তুলে দিচ্ছেন না তো? আর যদি তা হয়েও থাকে, তবে বেরিয়ে আসার উপায় কী? চলুন জেনে নিই।

অযথা নিজেকে দোষ দেবেন না

কেউ যখন আপনাকে কোনো বিষয়ে দোষারোপ করে, আপনি খুব সহজেই মেনে নেন? এর কারণ হচ্ছে, আপনি নিজেও নিজেকে দোষীর কাঠগড়াতেই দাঁড় করিয়ে রাখেন। মনে রাখতে হবে, দোষ না করলে তার শাস্তি কখনো মাথা পেতে নিতে নেই এবং শুধুঅন্যের কথায় কান দিয়ে নিজেকে ছোট করবেন না। কেউ যদি আপনার সৌজন্যকে দুর্বলতা ভাবে, তাহলে প্রতিবাদ করুন। অপর পক্ষকে বুঝিয়ে দিন, নম্রতা আপনার শক্তি— দুর্বলতা নয়।

নিজের যোগ্যতা নিজে যাচাই করুন

প্রয়োজনে অন্য কারো কাছ থেকে পরামর্শ, দিক নির্দেশনা নিশ্চয়ই চাওয়া যায়। কিন্তু অন্য কারো বলে দেওয়া রাস্তাতেই অন্ধভাবে চলবেন না। আপনি কোন কাজে কতটা যোগ্য, আপনার সক্ষমতা কিংবা দুর্বলতাগুলো কী কী, তা পর্যবেক্ষণ করে নিজেকে নিজের কষ্টি পাথরে যাচাই করুন। আপনার মূল্য অন্য কেউ যেন নির্ধারণ করতে না পারে— তা সে ব্যক্তিজীবনে আপনার যতটাই কাছের হোক না কেন। কেউ আপনাকে প্রশংসা করলেও যেমন আকাশকুসুম ভেবে নিজেকে সপ্ত-আসমানে ওঠাবেন না, ঠিক তেমনি কারো খারাপ কথায় মুখ লুকিয়ে ফেলারও কিছু নেই।

সম্পর্কে সীমারেখা টানতে শিখুন

পরিবার, বন্ধু, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা অফিসের কলিগ— সম্পর্কগুলো যত কাছেরই হোক না কেন, সবসময় তাতে একটা হেলদি বাউন্ডারি, অর্থাৎ সুস্থ সীমারেখা টেনে চলতে শিখুন। কেউ যদি সে সীমারেখা লঙ্ঘন করার মতো কোনো আচরণ করে, তবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন। বারবার একই ভুল করলে কঠোর হতে শিখুন। শুধু সম্পর্কের আবদারে যা ইচ্ছে তা-ই করে যাবার মতো সুযোগ যেন কেউ না পায়, সেক্ষেত্রে সচেতন থাকুন।

নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিন

'অনেক কাজ করতে হবে, অনেক মানুষের অনেক কথা রাখতে হবে, অনেক জায়গায় যেতে হবে।'

এহেন 'অনেক অনেক' কিছু নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, এই অনেক কিছুর মধ্যে আদতে কতটুকু আপনার নিজের ভালোলাগার এবং কতটুকু আসলেই দরকার? আমরা নিশ্চয়ই আমাদের জীবনের মানুষের জন্য সময় বের করব, তাদের দরকারের সময় পাশে থাকব। কিন্তু এই বিষয়গুলো যদি কখনো একপাক্ষিক হয়ে যায়, কিংবা আপনার সক্ষমতা অনুযায়ী অতিরিক্ত মনে হয়— তবে কোন কাজটি আপনি করবেন এবং কোনটি না করলেও চলে, এসব বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্তটা নিজেই নিন।

ক্ষোভ পুষে রাখবেন না

ক্ষোভ পুষে রাখা, অনেকদিন পর্যন্ত কোনো বিষয়ে মনের মধ্যে অভিযোগ ধরে রাখা কোনোভাবেই একজন পরিপক্ব মনের মানুষের পরিচয় দেয় না। তাই অন্যের জন্য নয়, নিজেকে ভালো রাখতেই ক্ষোভের লাগাম ছেড়ে দিন। অন্য কাউকে এতটা বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলবেন না যে তার প্রতি ক্ষোভ তিলে তিলে আপনাকেই ধ্বংস করে দেবে। নিজের মনের যত্ন রাখুন।

প্রত্যাখ্যানে ভয় পাবেন না

সাফল্য ও ব্যর্থতা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাই ব্যক্তিজীবন বা কর্মজীবনে কোনোরকম প্রত্যাখ্যানের শিকার হলে ভগ্ন মনোরথে নিজের জীবনের রোডম্যাপটাই বদলে দেবেন না। বরং একটুখানি থেমে, নিজেকে আরো বেশি দক্ষ করে, দ্বিগুণ মনোবলে এগিয়ে যান। অন্যরা আপনার মূল্য না বুঝলেও নিজেকে সুযোগ দিন সফল হওয়ার।

অন্যকে ভুল প্রমাণ করারও কিছু নেই

যার যার জীবনের যাত্রা আলাদা। সাফল্যের সংজ্ঞাও এক নয় কারো জন্যই। তাই যদি কেউ আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেও– তবে আপনার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য কোনোভাবেই যাতে তাদেরকে 'ভুল' প্রমাণ করার জন্য না হয়। যা করবেন, যেভাবে করবেন, নিজের জন্য করুন। অন্যের দৃষ্টিতে ভালো হওয়ার জন্য নয়।

নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেই যথেষ্ট

কখনো কোনো তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়াঝাঁটির সময় যথাসম্ভব সংযত থাকুন। নিজের ওপর কাউকে এতটা প্রভাব ফেলতে দেবেন না যাতে আপনি নিজেই নিজেকে চিনতে না পারেন।

পরচর্চা-পরনিন্দা নৈব নৈব চ

আপনার আলোচনার বিষয় যদি বেশিরভাগ সময় আপনার অপছন্দের মানুষগুলোই হয়, তবে ধরে নিতে হবে আপনি তাদেরকে মাথা থেকে বের করতে পারছেন না। যত বেশি আপনি তাদের কথা ভাবছেন, তত বেশি তারা আপনার জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। তাই নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ঝেড়ে ফেলুন, পরনিন্দা এড়িয়ে চলুন।

সমালোচনা থাকবেই

সমালোচনাকে ভয় পাবেন না। অফিসে হোক বা অফিসের বাইরে— যেকোনো কাজে বিভিন্ন ধরনের ফিডব্যাক আসাটাই স্বাভাবিক। সেগুলো স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখুন।

 

Comments