‘মুকুটবিহীন’ এক রানীর গল্প
প্রায় ৩০ বছর আগে যাত্রী রানী বর্মন পরিবারসহ গ্রাম থেকে সুনামগঞ্জ শহরে আসেন। কিশোর বয়সে বাবা হারানো রানী নতুন আশা নিয়ে শহরে এসেছিলেন।
বাবার মৃত্যুর পর পরিবার চালানোর সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন তিনি। কাজ নেন একটি স্থানীয় টেইলারিং দোকানে। দুই বোনের বিয়ের খরচও বহন করেন রানী।
একসময় নিজেও বিয়ে করেন। স্বামী মাদকাসক্ত হওয়ায় সংসার টিকেনি বেশিদিন।
রানী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিয়ের পর স্বামী আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। সে নিজে কোনো কাজ করত না এবং আমার উপার্জনের সব টাকা নিয়ে যেত।'
'আমি তাকে একটি ইজিবাইক কিনে দিয়েছিলাম রোজগারের জন্য। কিন্তু আমার সব প্রচেষ্টা বৃথা যায়,' যোগ করেন তিনি।
রানী বর্মন জানান, ২০১৮ সালে একদিন হৃদয় তাকে মারধর করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আর কখনো ফিরে আসেননি।
তিনি বলেন, 'স্বামী চলে যাওয়ার পর আমি আরও অসহায় হয়ে পড়ি। ধার করে কেনা ইজিবাইকটি বাড়িতেই ছিল। ধারের টাকা পরিশোধের কথা চিন্তা করলেই ভয় লাগত।'
'ভয়াবহ সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সবসময় মাথায় ছিল যে আমার সমস্যার সমাধান আমাকেই করতে হবে,' বলেন তিনি।
রানী বলেন, 'একদিন সকালে বাড়ি থেকে ইজিবাইক বের করে চালানোর চেষ্টা করি। তবে তা সহজ ছিল না। সরু রাস্তায় ইজিবাইক আটকে গিয়েছিল।'
ধীরে ধীরে তিনি ইজিবাইকটি চালানো শিখে যান। ৩৬ বছর বয়সী রানী সুনামগঞ্জ শহরের প্রথম নারী ইজিবাইকচালক।
রানী বলেন, 'শুরুতে খুব ঝামেলায় পড়েছিলাম। আশেপাশের সবাই আমাকে নিরুৎসাহিত করেছিল। অনেকে গালিগালাজও করেছিল। কিন্তু কারও কথায় থামিনি।'
'প্রায় ৬ বছর ধরে এই গাড়ি চালাচ্ছি। প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা ইজিবাইক চালাই। এখন শহরের বেশিরভাগ মানুষ আমাকে চেনেন এবং আমাকে সহযোগিতা করেন।'
১ ছেলে, ২ মেয়ে ও ৭৩ বয়সী মাকে নিয়ে রানী বর্মন এখন শহরের নবীনগর এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন।
তবে এত পরিশ্রম করে শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়েছে বলে জানান তিনি। ঋণের টাকা এখনো পরিশোধ হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে সুনামগঞ্জ জেলা নারী পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রানী এখন নারীদের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।'
Comments