জুতা শিল্পে বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ: বিডা

যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দেশের জুতা শিল্প। চামড়া ও নন-লেদার খাতে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। তবে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা ও সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সংকট থেকে গেছে বলে জানিয়েছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

গত সোমবার বিডার নিউজলেটারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়েছে।

বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, 'আমরা এ খাতে বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া গেলে জুতা শিল্প রপ্তানি আয়ের বড় উৎসে পরিণত হবে।'

বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে তারা রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।

বিডার মতে, ক্রেতাদের পছন্দ ও পরিবেশগত কারণে নন-লেদার জুতার চাহিদা নতুন বিনিয়োগের সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি, গত দশকে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে চামড়ার জুতার চাহিদাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য উল্লেখ করে বিডা বলছে, গত এক দশকে নন-লেদার জুতা রপ্তানি ১২০ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে চামড়ার জুতার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় শতাংশের বেশি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে নন-লেদার জুতা রপ্তানি বছরে ৪০ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে ৩১৮ দশমিক শূন্য নয় মিলিয়ন ডলার হয়েছে। অর্থবছর শেষে তা আধা বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ জুতা উৎপাদনকারী দেশ হলেও গত অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রপ্তানি হয়েছে এক দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার।

এই খাতকে 'দারুণ সম্ভাবনাময়' হিসেবে উল্লেখ করে ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শুনিভার্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান যদি নন-লেটার জুতায় বড় বিনিয়োগ করে, তাহলে তা লাভজনক হবে।'

তার মতে, দেশে নীতিমালা মেনে চলা মানসম্মত নন-লেদার জুতা কারখানা আছে মাত্র ১৫টি। একটি নীতিমালা মেনে চলা মানসম্মত কারখানা স্থাপনে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার দরকার হয়।

বিডার ভাষ্য, অনেক ট্যানারি ও জুতা কারখানা বিশ্বব্যাপী পরিবেশ এবং শ্রমমান পূরণে সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

রিয়াদ মাহমুদ মনে করেন, 'দক্ষ শ্রমিকের অভাবের পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য রপ্তানির সময় কাস্টমসে পদ্ধতিগত জটিলতা আছে।'

রংপুরের গ্রামাঞ্চলে নন-লেদার জুতা কারখানা ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কারখানার জুতা এখন পোল্যান্ড, তুরস্ক, আরব আমিরাত, জার্মানি, ভারত ও কানাডায় রপ্তানি হচ্ছে।'

২০২০ সালে তার কারখানা জুতা উৎপাদন শুরু করে। প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ৩০০ জোড়া জুতা উৎপাদন করে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি জুতা রপ্তানি শুরু করে।

নন-লেদার জুতার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গত অর্থবছরে নন-লেদার জুতা রপ্তানি করে আমরা ৩২০ কোটি টাকা আয় করেছি।'

উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সত্ত্বেও দেশের জুতা শিল্প বেশ কয়েকটি সংকট মোকাবিলা করতে হবে বিডা উল্লেখ করেছে।

দেশে সিনথেটিক উপকরণের সরবরাহ ব্যবস্থার অভাবে উত্পাদন খরচের পাশাপাশি রপ্তানির সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। শুল্ক বিভাগের অদক্ষতা, অপর্যাপ্ত বন্দর সুবিধা ও জাহাজীকরণে দেরি হওয়ায় রপ্তানিকারকদের ঝামেলায় পড়তে হয়।

এই শিল্পেও দক্ষ শ্রমিক দরকার। প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অভাবে শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ছে না।

এ ছাড়াও, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই), উচ্চ সুদের হার, ঋণ নেওয়ায় কঠোর শর্ত ও ঋণ পাওয়ায় নানান বাধা ছোট কারখানাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে বাধা সৃষ্টি করছে।

প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নীতি সংস্কার ও বিনিয়োগের দিকে নজর দিতে হবে বলে সুপারিশ করেছে বিডা।

আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা কমাতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সিস্টেম গড়ে তোলা ও রপ্তানি দক্ষতা বাড়াতে লজিস্টিকস ও কাস্টমস প্রক্রিয়া উন্নত করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago