যেখানে শুরু করেছিলেন, সেখানেই ইতি টানবেন করুনারত্নে
শততম ম্যাচ খেলে এক যুগের টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন দিমুথ করুনারত্নে। এই সংস্করণে শ্রীলঙ্কার বাঁহাতি ব্যাটারের অভিষেক হয়েছিল গলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০২১ সালের নভেম্বরে। সেই একই ভেন্যুতে মাইলফলক ছোঁয়া টেস্ট দিয়ে অবসর নেবেন তিনি।
আগামী বৃহস্পতিবার দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা। এটি হতে যাচ্ছে ৩৬ পেরিয়ে যাওয়া করুনারত্নের টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০০তম ও শেষ ম্যাচ।
বিদায়ী বার্তায় মঙ্গলবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে করুনারত্নে বলেছেন, 'বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগামী চক্রে তিন বা চারজন নতুন খেলোয়াড়ের আসার সুযোগ রয়েছে, তাই সরে যাওয়ার জন্য এটাই সঠিক সময়। তাছাড়া, এই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে গলে, যেখানে আমার অভিষেক হয়েছিল। তো সেখানে শেষ করতে পারাটা চমৎকার ব্যাপার হবে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের পরই আমি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে (এসএলসি) বলেছি যে, পরের টেস্টটি হবে আমার শেষ।'
মূলত তিনটি বিষয় ভূমিকা রেখেছে করুনারত্নের অবসরের পেছনে। প্রথমত, আগামী ২০২৬ সালের মে পর্যন্ত মাত্র দুটি টেস্ট খেলার সূচি রয়েছে শ্রীলঙ্কার। অর্থাৎ দলটির হয়ে কেবল দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেট খেলে যাওয়া করুনারত্নের পক্ষে মাঠে মনোযোগী থাকার রসদ নেই বললেই চলে। দ্বিতীয়ত, গত ১৪ মাস ধরে ব্যাট হাতে ফর্মে নেই তিনি। ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তার গড় মাত্র ২৭.০৫। তৃতীয়ত, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন ম্যাচটিই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি চক্রে তাদের শেষ।
শুরুর সংগ্রামের পর গত এক দশক ধরে লঙ্কানদের টেস্ট একাদশের নিয়মিত মুখ তিনি। ৯৯ টেস্টে ৩৯.৪০ গড়ে তার রান ৭১৭২। ১৬টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ৩৯টি ফিফটি করেছেন তিনি। এই সংস্করণে শ্রীলঙ্কার জার্সিতে শুধু ওপেনার হিসেবে তিনি করেছেন সর্বোচ্চ ৭০৭৯ রান।
শ্রীলঙ্কার সপ্তম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলার মাইলফলক গড়তে যাচ্ছেন করুনারত্নে। তার আগে এই কীর্তি গড়েছেন সনথ জয়সুরিয়া, মুত্তিয়া মুরালিধরন, চামিন্দা ভাস, মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।
আসন্ন অর্জন নিয়ে গর্বিত করুনারত্নে, '১০০ টেস্ট খেলা এমন একটি অর্জন যা কঠিন। বিশেষ করে, যখন আপনি একজন ওপেনিং ব্যাটার এবং আপনাকে দলের জন্য কষ্টকর কাজটা (নতুন বলের মুখোমুখি হওয়া) করতে হয়।'
পেছনে ফিরে তাকিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে আক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন তিনি, 'আমার যদি কোনো আফসোস থেকে থাকে, সেটা হলো টেস্টে ১০০০০ রান করতে না পারা। যেভাবে ২০২৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সাল কেটেছিল, আমি ভেবেছিলাম যে, আমার সেটা করার সুযোগ হবে। কিন্তু তারপর কোভিড আঘাত করল এবং শ্রীলঙ্কাও এখন আর বেশি টেস্ট খেলে না।'
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩০টি টেস্টে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ছিলেন করুনারত্নে। ২০১৯ সালে দীনেশ চান্দিমাল দল থেকে বাদ পড়ার পর অপ্রত্যাশিতভাবে তার কাঁধে উঠেছিল নেতৃত্ব। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল লঙ্কানরা। ওই বছর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপেও অধিনায়ক ছিলেন করুনারত্নে। ৫০ ওভারের সংস্করণে তিনি খেলেছেন ঠিক ৫০ ম্যাচ। তবে জাতীয় দলের হয়ে কোনো টি-টোয়েন্টি খেলেননি তিনি।
আপাতত অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে স্থায়ী হওয়া করুনারত্নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও জানিয়েছেন। কোচিংয়ে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা তার, 'এত বছর ক্রিকেট খেলার পর এখন আমি নিজের জন্য কিছু দিনের বিরতি নিব। কিন্তু দিনশেষে, আমি আবার (ক্রিকেটের সঙ্গে) যুক্ত হতে চাই।'
Comments