খাদ্যতালিকায় ক্যাপসিকাম রাখবেন যে কারণে

ক্যাপসিকামের উপকারিতা
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে অতি জনপ্রিয় একটি সবজি ক্যাপসিকাম। ক্যাপসিকাম মূলত বেল পেপার বা মিষ্টি মরিচ নামে পরিচিত। ক্যাপসিকাম লাল, হলুদ, সবুজ, কমলা ও বেগুনি রঙের হতে পারে এবং এর স্বাদ সাধারণত মিষ্টি ও হালকা ঝালযুক্ত হয়। এটি বিভিন্নভাবে রান্না করা হয়ে থাকে, সালাদ, স্যুপ ও চাইনিজ খাবারে ব্যবহৃত হয়। এটি শুধু খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে না, স্বাস্থ্য রক্ষায়ও অসাধারণ ভূমিকা রাখে।

চলুন জেনে নিই স্বাস্থ্যরক্ষায় ক্যাপসিকামের ভূমিকা। এ বিষয় সম্পর্কে জানিয়েছেন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মাহফুজা নাসরিন শম্পা।

তিনি জানান, ক্যাপসিকাম খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শরীর পাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং অনেক রোগের ঝুঁকি কমবে। তাই সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে এটি খাদ্যতালিকার রাখা উচিত।

ক্যাপসিকামের পুষ্টি উপাদান

পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকাম)

ক্যালরি: ৩১ কিলোক্যালরি

প্রোটিন: ১.০ গ্রাম

কার্বোহাইড্রেট: ৬.০ গ্রাম

ফাইবার: ২.১ গ্রাম

চিনি: ৪.২ গ্রাম

ফ্যাট: ০.৩ গ্রাম

ভিটামিন সি: ১২৭.৭ মিগ্রা

ভিটামিন এ: ৩১৩১ আইইউ

ভিটামিন বি৬: ০.২ মিগ্রা

 ফলিক অ্যাসিড বি৯: ১০ মাইক্রোগ্রাম

 পটাসিয়াম: ২১১ মিগ্রা

 ম্যাগনেসিয়াম: ১২ মিগ্রা

 ক্যালসিয়াম: ১০ মিগ্রা

ক্যাপসিকাম কম ক্যালোরিযুক্ত ও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ একটি স্বাস্থ্যকর সবজি।

ক্যাপসিকামের উপকারিতা

১. ভিটামিন সির চমৎকার উৎস

ক্যাপসিকামে ভিটামিন সির পরিমাণ অত্যন্ত বেশি, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন সি দেহের সেল মেরামত করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি কোলাজেন উৎপাদনেও ভূমিকা রাখে, যা ত্বক ও হাড়কে মজবুত করে।

২. অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ

ক্যাপসিকামে ক্যারোটিনয়েড, লাইকোপিন এবং বিটা-ক্যারোটিনের মতো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো শরীরে ফ্রি-র‍্যাডিক্যালের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে, যা ক্যানসার, হৃদরোগ এবং বার্ধক্যের মতো সমস্যার ঝুঁকি কমায়।

৩. চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি

ক্যাপসিক্যামে লুটেইন এবং জেক্সানথিন নামক উপাদান থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এগুলো দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যাগুলো যেমন ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৪. ওজন কমাতে সহায়ক

ক্যাপসিক্যাম কম ক্যালরি এবং উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি খাওয়ার পরে দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূতি দেয়, যা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ কমাতে সহায়তা করে।

৫. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

ক্যাপসিক্যামে থাকা পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি রক্তনালীগুলোকে সুস্থ রাখে এবং খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

৬. হজমে সহায়তা করে

ক্যাপসিকামে থাকা ফাইবার হজমপ্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি কোলন ক্লিনজিংয়ে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

৭. অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য

ক্যাপসাইসিন নামক সক্রিয় যৌগ ক্যাপসিক্যামে উপস্থিত থাকে, যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এটি বাতজ্বর, আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায় কার্যকরী।

৮. ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী

ক্যাপসিকামে থাকা ভিটামিন এ এবং সি ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের কোষ মেরামত করে এবং চুলের গ্রোথে সাহায্য করে।

৯. মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে

ক্যাপসিকামে থাকা ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায়, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি বিষণ্নতা ও উদ্বেগ দূর করতে সহায়ক।

১০. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

ক্যাপসিকামে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

১১. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে

ক্যাপসিকামে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

১২. ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক

ক্যাপসিকামে থাকা ক্যারোটিনয়েড এবং লাইকোপিন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। বিশেষত প্রোস্টেট, ফুসফুস এবং পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে এটি কার্যকরী।

১৩. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে

ক্যাপসিকামে ক্যাপসাইসিন রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা ত্বক এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে। এটি ঠান্ডা হাত-পায়ের সমস্যাও দূর করতে সাহায্য করে।

১৪. শ্বাসযন্ত্রের জন্য উপকারী

ক্যাপসিকাম শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাগুলো যেমন হাঁপানি এবং সাইনাসের সমস্যা উপশমে কার্যকর। এটি শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসকে সহজ করে।

১৫. হাড়ের গঠন মজবুত করে

ক্যাপসিকামে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন কে হাড়কে মজবুত করে। এটি অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।

১৬. শক্তি বাড়ায় এবং ক্লান্তি কমায়

ক্যাপসিকামে থাকা ভিটামিন বি৬ এবং আয়রন শরীরে শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি কমায়। এটি লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।

১৭. ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত করে

ক্যাপসিকাম লিভারকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে সুস্থ রাখে।

১৮. গর্ভাবস্থায় উপকারী

গর্ভাবস্থায় ক্যাপসিক্যাম অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা ফলেট ভ্রূণের সঠিক বিকাশে সহায়তা করে এবং জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি কমায়।

ক্যাপসিকামের এ সব উপকারিতা নির্ভর করে রান্না করার পদ্ধতির ওপর। অতিরিক্ত তেল,মসলা দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে রান্না করলে পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে।

সতর্কতা

ক্যাপসিকাম সাধারণত নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর, তবে কিছু মানুষের জন্য এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

১. কিছু মানুষের ক্যাপসিকামের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা চুলকানি, ফুসকুড়ি বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।

২. ক্যাপসিকামে থাকা ফাইবার বেশি পরিমাণে খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা ডায়রিয়া হতে পারে। অতিরিক্ত ঝালযুক্ত ক্যাপসিকাম (যেমন লাল ক্যাপসিকাম) পাকস্থলীতে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। যাদের অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তারা বেশি পরিমাণ ক্যাপসিকাম খেলে অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন।

৩. কিছু ওষুধ, বিশেষ করে রক্ত পাতলা করার ওষুধ নেওয়া ব্যক্তিদের বেশি ক্যাপসিকাম খাওয়া এড়ানো উচিত। কারণ এতে রক্ত পাতলা হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

৪. কাঁচা ক্যাপসিকাম খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত, কারণ এতে কীটনাশক বা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।

৫. ছোট শিশুদের ক্যাপসিকাম খাওয়ানোর সময় সাবধান থাকতে হবে, কারণ এটি গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

5h ago