সকালে খালি পেটে মাঠা খাওয়া কি ভালো?
খালি পেটে মাঠা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে। এটি দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং হজম ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এতে থাকে দইয়ের প্রোবায়োটিক উপাদান, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
চলুন খালি পেটে মাঠা খাওয়ার উপকারিতা এবং এর পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জেনে নেই এমএইচ সমরিতা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ আঞ্জুমান আরা শিমুলের কাছ থেকে।
এই পুষ্টিবিদ বলেন, খালি পেটে মাঠা খাওয়া ভালো বলে মনে করা হয়। এটি ব্যায়ামের পর কোষ পুনরুদ্ধারের জন্য বা দ্রুত শোষণ হারের কারণে সকালে প্রথম পানীয় হিসেবে খেতে বলা হয়। মাঠা পেশীতে দ্রুত প্রোটিন সরবরাহ করে।
মাঠার পুষ্টি উপাদান
টক দইকে ভালো করে ফেটে সেখান থেকে বাটার তুলে ফেলার পরে যে পাতলা পানি বা ঘোল থাকে, তাই মাঠা। মাঠায় লবণ, সামান্য চিনি ও লেবুর রস ব্যবহার করা হয়। এতে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন বি-১২, প্রোবায়োটিকস, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়াও মাঠা হালকা ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে।
মাঠায় থাকা প্রোবায়োটিকস অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব কমায়। ব্যাকটেরিয়া প্রধান দুগ্ধজাত প্রোটিন তথা ক্যাসেইনকে ঘনীভূত করে ফেলে বলে কার্যকরীভাবে তা দেহে শোষিত হয়। এক কাপ মাঠাতে প্রায় আট গ্রাম প্রয়োজনীয় প্রোটিন থাকে। এক কাপ মাঠায় দৈনিক চাহিদার ২২ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ২৯ শতাংশ রিবোফ্লাভিন ও ২২ শতাংশ ভিটামিন বি১২ থাকে।
খালি পেটে মাঠা খাওয়ার উপকারিতা
১। হজম শক্তি বাড়ায়
খালি পেটে মাঠা খাওয়া হজমশক্তি উন্নত করে। প্রোবায়োটিকস অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা হজমের সময় অ্যাসিডিটির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার প্রকোপ কমায় এবং অম্লতা বা গ্যাসের ঝুঁকি হ্রাস করে।
২। পেশী নির্মাণ
মাঠাতে থাকে দ্রুত হজমকারী প্রোটিন। তাই এটি খালি পেটে খেলে শরীরে দ্রুত অ্যামিনো অ্যাসিড শোষণ হতে পারে। এই দ্রুত শোষণ ব্যায়ামের পরে পেশী গঠন ও বৃদ্ধির জন্য উপকারী।
৩। অম্লতা দূর করে
খালি পেটে মাঠা খেলে পাকস্থলীর অম্লতার মাত্রা কমে। মাঠায় থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলো পাকস্থলীর এসিড কমায় এবং হালকা শীতলতা দেয়। তাই যাদের বারবার পেটে অম্লতার সমস্যা হয়, তাদের জন্য এটি খুব কার্যকর।
৪। ডিহাইড্রেশন দূর করে
মাঠা শরীরের পানিশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং শক্তি বাড়ায়। গরমের দিনে এটি খালি পেটে খাওয়া আরও বেশি কার্যকর। কারণ এটি শরীরকে শীতল রাখে।
৫। ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
মাঠা কম ক্যালোরিযুক্ত একটি পানীয়। এটি খেলে পেট ভর্তি থাকে এবং ক্ষুধা কম লাগে। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৬। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে
মাঠায় থাকা প্রোবায়োটিকস অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
৭। ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকর
মাঠায় থাকা পুষ্টি উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। এটি শরীরের টক্সিন দূর করে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এ ছাড়া, মাঠায় থাকা প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
৮। পাকস্থলীর বিষাক্ত পদার্থ দূর করে
মাঠা পাকস্থলীর টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে।
৯। লিভার ও হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো
ফ্রি রেডিকালের কারণে মায়কার্ডিয়াক বা হৃদপেশির ক্ষতি রোধে মাঠা একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক খাদ্য। এটি শুধু লিভারের জন্যই নয়, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাঠা খাওয়ার সময় সতর্কতা
মাঠা খাওয়ার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি বলে জানান পুষ্টিবিদ আঞ্জুমান আরা শিমুল।
- পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত মাঠা খাওয়া ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- তাজা মাঠা বেছে নিন: তাজা এবং ভালো মানের দই ব্যবহার করে মাঠা তৈরি করুন।
- লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: মাঠায় লবণের পরিমাণ বেশি হলে তা উচ্চ রক্তচাপের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- খালি পেটে মানিয়ে নিন: যদি প্রথমবার খালি পেটে মাঠা খান, তবে পরিমাণে সামান্য কম খান এবং দেহের প্রতিক্রিয়া দেখুন।
আঞ্জুমান আরা শিমুল জানান, খালি পেটে মাঠা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে সবার জন্য এটি সমান কার্যকর নাও হতে পারে। যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা বা দুধজাতীয় খাবারে সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে মাঠা উপযোগী নয়।
তবে নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে মাঠা খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়, শরীর ডিটক্সিফাই হয় ও পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। সাধারণত দৈনিক ২০০-২৫০ মিলিলিটার মাঠা স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী। দৈনিক মাঠা খাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে ব্যক্তির শরীরের অবস্থা, জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর। তাই ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে পরিমিত পরিমাণে মাঠা খেলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকার বয়ে আনতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাঠা যোগ করা যেতে পারে, বিশেষত সকালে খালি পেটে এটি খেলে দিনটি শুরু করার জন্য একটি চমৎকার উপায় হতে পারে।
Comments