জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের নির্বাহী আদেশে সই করলেন ট্রাম্প
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণ করেই যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের জন্মসূত্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিল করতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই বিতর্কিত উদ্যোগ তাৎক্ষণিকভাবে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, এই সিদ্ধান্তটি চতুর্দশ সংশোধনীর পর থেকে ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রচলিত সাংবিধানিক ব্যাখ্যার বিপরীতে যায়।
'প্রোটেকটিং দ্য মিনিং অ্যান্ড ভ্যালু অব আমেরিকান সিটিজেনশিপ' নামের এই নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না— যদি তাদের মা অবৈধভাবে দেশটিতে থাকেন বা অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য অনুমোদিত হন এবং বাবা মার্কিন নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা না হন।
সোমবার ওভাল অফিসে ওই আদেশে সই করার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, 'এটি একটি বড় বিষয়। দশকের পর দশক ধরে মানুষ এটা করতে চাইছে।'
তিনি প্রশাসনের আইনি অবস্থানের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, নীতি রক্ষার জন্য তাদের কাছে 'খুব ভালো যুক্তি' রয়েছে।
তবে এই উদ্যোগটিকে চতুর্দশ সংশোধনীর প্রচলিত ব্যাখ্যা থেকে একটি উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ওই সংশোধনীর মাধ্যমে নিশ্চয়তা দেওয়া হয় যে 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী বা নাগরিকত্বপ্রাপ্ত সমস্ত ব্যক্তিই' দেশটির নাগরিক। আইন বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে এই ধারাটিকে পিতামাতার মর্যাদা নির্বিশেষে জন্মগত নাগরিকত্বের ভিত্তি হিসাবে সমর্থন করে আসছেন।
আইনি ও সামাজিক জটিলতা
নীতিটির সম্ভাব্য পরিণতি ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন, এটি অনিবন্ধিত পিতামাতার নবজাতক সন্তানকে আইনি জটিলতার মুখে ঠেলে দেবে আর যারা ইতোমধ্যে দুর্বল বা ভঙ্গুড় পরিস্থিতি আছেন, তাদের মধ্যে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক সারাহ মিলার বলেন, 'এই নির্বাহী আদেশটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত নীতিগুলোকে ক্ষুণ্ন করে।'
তিনি বলেন, 'এটা শুধু অনিবন্ধিত পরিবারের ওপর আঘাত নয়, এটি আমেরিকান সমাজকে আবদ্ধ করে এমন আইনি কাঠামোকে অস্থিতিশীল করার হুমকিতে ফেলবে।'
অভিবাসন আইনজীবীরা এই আদেশকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি সংস্থা ইতোমধ্যে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে, নির্বাহী পদক্ষেপের মাধ্যমে জন্মগত নাগরিকত্ব পরিবর্তন করা অসাংবিধানিক। এ জাতীয় যেকোনো পরিবর্তনের জন্য সংবিধানের সংশোধনী প্রয়োজন। একই সঙ্গে এটি এমন একটি প্রক্রিয়া— যাতে উল্লেখযোগ্য আইনি এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সমর্থন প্রয়োজন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পরই এই আদেশে সই করেন ট্রাম্প।
এটি তার প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি বারবার জন্মগত নাগরিকত্বের 'অপব্যবহারের' সমালোচনা করে বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।
ডেমোক্র্যাট ও কিছু মধ্যপন্থী রিপাবলিকান এই উদ্যোগকে রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্বের বাড়াবাড়ি হিসাবে বিরোধিতা করে বলেছেন, নির্বাহী আদেশটি ওয়াশিংটনে পক্ষপাতমূলক বিভাজনকে আরও গভীর করতে পারে।
অন্যদিকে নীতিটি অভিবাসন সম্পর্কে দীর্ঘদিনের উদ্বেগের সমাধান করবে বলে পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন ট্রাম্পের সমর্থকরা।
এগিয়ে যাওয়ার পথ
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিষয়টি নিয়ে মার্কিন জাতি দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপাতত জন্মগত নাগরিকত্বের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলেই মত দেন তারা।
এই নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিতর্কে জটিলতার আরও একটি স্তর যুক্ত করেছে।
১৮৬৮ সাল থেকে আমেরিকান নাগরিকত্বের মূল ভিত্তি হয়ে থাকা সাংবিধানিক নিশ্চয়তাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টাকে আদালত কীভাবে ব্যাখ্যা করবে— সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা
Comments