পুঁজিবাজারে রেকর্ড সস্তা শেয়ারের দাম, বছরের মাঝামাঝি চাঙ্গা হওয়ার আশা

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও উচ্চ সুদহারের কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম রেকর্ড পরিমাণে সস্তা হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশের শীর্ষ স্টক ব্রোকার আইডিএলসি সিকিউরিটিজ।

মূল্যস্ফীতি ও সুদহার কমলে পুঁজিবাজার আবার চাঙ্গা হতে পারে। প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

'আর রিপলস অব রিফর্ম প্রাইস ইন?' শিরোনামে আইডিএলসি সিকিউরিটিজের ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারে দেশের পুঁজিবাজার।

ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানটি ভাষ্য, সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সাল শেষে ডিএসইতে শেয়ারের মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক তিন। এটি অন্তত গত ১০ বছরে সর্বনিম্ন।

আইডিএলসি সিকিউরিটিজের হেড অব ইক্যুইটি রিসার্চ তনয় কুমার রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই হার ভীষণভাবে কম।'

১০ দশমিক তিন এই হারটি গড়ে সব সময় যে গড়ে থাকে তা হলো ১৪ দশমিক পাঁচ সেই গড় পি/ই অনুপাতেরও নিচে।

দাম-আয় অনুপাত হলো একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামের সঙ্গে এর শেয়ার প্রতি আয়ের অনুপাত।

উচ্চ অনুপাত একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের অতিমূল্যায়ন তুলে ধরে। বিপরীতে, একটি নিম্ন পি/ই অনুপাত শেয়ারের দামে তাদের আয়ের তুলনায় অবমূল্যায়িত হয়।

ডিএসইতে শেয়ারের দাম কম থাকলেও ব্যাংকে সুদহার বেশি হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মুদ্রাবাজারের দিকে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার মতে, বর্তমান ব্যবসায়িক পরিবেশ শেয়ারে বিনিয়োগে মানুষকে দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলছে। সংস্কারের সময় মানুষ বিনিয়োগ করতে চান না। এ সময় তারা অপেক্ষা করেন।

তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে করপোরেট আয় প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।'

এমনকি যদি পরবর্তী তিন প্রান্তিকে কর্পোরেট আয় এই হারে কমতে থাকে তবে শেয়ারগুলো অতিমূল্যায়িত হবে না। কারণ পি/ই অনুপাত তখন ১২-র কাছাকাছি থাকতে পারে।

বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিতে, নিম্ন পি/ই বিনিয়োগের উপযুক্ত বলে মনে হতে পারে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মনে করেন, 'শুধু পি/ই হার কম হলে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন না। সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।'

তার মতে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে প্রশাসন, নজরদারি ও আইন প্রয়োগে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রয়োজন। পুঁজিবাজারে অর্থবহ প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা দ্বিগুণ করা দরকার।

আর্থিকশৃঙ্খলা ফিরে আসতে শুরু করেছে। টাকার মানের অবক্ষয় বন্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আইডিএলসি সিকিউরিটিজ পূর্বাভাস দিয়ে বলছে, আগামীতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক বাড়বে।

এতে বলা হয়, পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ, রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে অর্থনৈতিক বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রপ্তানি দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

'বিদেশে মূল্যস্ফীতি ও সুদহার কমে যাওয়ায় রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি) সুদহার চার শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র স্বল্পমেয়াদি সুদের হার সাড়ে চার শতাংশ থেকে কমিয়ে সোয়া চার শতাংশ করেছে।'

এ ছাড়াও, রেমিট্যান্সে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি চলছে বলে জানিয়েছে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানটি।

আইডিএলসি সিকিউরিটিজ মনে করে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে কালো টাকা ও সম্পদ পাচার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানি কমানোর উদ্যোগ, ক্রমবর্ধমান রপ্তানি ও স্থিতিশীল রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে। পুরো অর্থবছর এটি কম থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে ঋণ পরিশোধ বাড়বে বলা হলেও ঋণ হিসেবে চার দশমিক নয় বিলিয়ন ডলার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি আছে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে তা পাওয়া যাবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

টাকার দাম ও চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় যে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে টাকার দাম খুব কমে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।

ফসলের মৌসুমের ওপর নির্ভর করে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে বলেও প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক বন্যায় আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। আগামীতে বোরো ধান কাটার পর ধানের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে পরিবহন ও পণ্যের দাম কমে যাওয়াও তা দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

আইডিএলসি সিকিউরিটিজ বলছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে সুদের হারও কমবে। সম্প্রতি সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিহার।

গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেছিলেন, 'সংস্কারমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী জুনের মধ্যে পুঁজিবাজারের উন্নতি হবে বলে আশা করছি।'

আইডিএলসি সিকিউরিটিজ বলেছে, সংস্কার হলে পুঁজিবাজারের সূচক বাড়বে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে তা দেখা গেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles; properties vandalised

3h ago