কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র আজিমপুরে শায়িত

অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে অসংখ্যবার এখানে শুটিংয়ে এসেছেন তিনি। আড্ডা-গল্প-কাজে কাটিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অসুস্থ হয়ে যখন বাসায় ছিলেন, এখানে আসার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছিলেন। অবশেষে সেই প্রাণের এফডিসিতে তিনি গেলেন, তবে নীরব-নিথর হয়ে।

আজ সোমবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) নেওয়া হয় কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্রের নিষ্প্রাণ দেহ। ১টা ৪০ মিনিটে সেখানেই তার প্রথম জানাজা হয়। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে চ্যানেল আইয়ে দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে আজিমপুর কবরস্থানে শায়িত হন প্রবীর মিত্র।

গতকাল রোববার মারা যান এই অভিনেতা। তার মৃত্যুর পর থেকেই তিনি কোন ধর্ম পালন করতেন সেই প্রশ্ন উঠেছিল। উত্তর পাওয়া গেল এফডিসিতে অনুষ্ঠিত প্রথম জানাজার আগে।

প্রবীর মিত্রের বড় ছেলে মিঠুন বলেন, 'আমার বাবা একটি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আমার মাকে বিয়ে করার সময় মুসলিম হয়ে (হাসান ইমাম) নাম নেন। কিন্তু তিনি যেহেতু প্রবীর মিত্র নামেই বেশি খ্যাতিমান ছিলেন, সেই কারণে এই নামটা ব্যবহার করতেন। কিন্তু যেহেতু আমার মাকে বিয়ে করে মুসলিম হয়েছেন, সেই কারণে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।'

প্রবীর মিত্রের জানাজা। ছবি: স্টার

অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, 'সবাইকে চলে যেতে হবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু কে কীভাবে যাবে সেটাই হলো তার ভাগ্য। আখেরাত যার সুন্দর হবে, তিনি হলেন সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান। সেদিক দিয়ে আমাদের প্রবীর দা অনেক ভাগ্যবান। সহকর্মী হিসেবে আমরা তাকে দেখেছি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ। প্রবীর দা বিয়ের আগে মুসলমান হয়েছিলেন। তার জন্য দোয়া করবেন।'

মিশা সওদাগর বলেন, 'ব্যক্তিগত জীবনে প্রবীর দা ছিলেন চমৎকার একজন মানুষ। প্রেমকে তিনি স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। প্রেমের জন্য নিজের ধর্ম ত্যাগ করেছেন। ছেলে-মেয়েকে তিনি সেভাবেই মানুষ করেছেন। তার প্রেমের সঙ্গে লাইলি-মজনুর প্রেম তুলনা করলে মনে হয় ভুল হবে না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাদা মনের মানুষ। মাটি ব্যথা পাবে বলে তিনি ধীরে ধীরে হাঁটতেন। বলা চলে তিনি যখন হাঁটতেন মাটি চুপ থাকত। হয়তো মাটি বুঝতো প্রবীর মিত্র হাঁটছেন।'

বরেণ্য অভিনেতা প্রবীর মিত্রকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এফডিসিতে এসেছিলেন নায়ক আলমগীর, উজ্জ্বল, পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, ছটকু আহমেদ, মিশা সওদাগর, শাহীন সুমন, বাপ্পী চৌধুরী, নায়ক ইমন, আরজুসহ অনেকেই। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস), চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি ও পরিচালক সমিতিও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র গতকাল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতাসহ বেশ কিছু অসুস্থতার কারণে গত ২২ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তার পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। পুরাণ ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।

১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের 'জলছবি' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান প্রবীর মিত্র। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি।

প্রবীর মিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো 'তিতাস একটি নদীর নাম', 'জীবন তৃষ্ণা', 'সেয়ানা', 'জালিয়াত', 'ফরিয়াদ', 'রক্ত শপথ', 'চরিত্রহীন', 'জয় পরাজয়', 'অঙ্গার', 'মিন্টু আমার নাম', 'ফকির মজনু শাহ', 'মধুমিতা', 'অশান্ত ঢেউ', 'অলংকার', 'অনুরাগ', 'প্রতিজ্ঞা' ইত্যাদি

Comments

The Daily Star  | English

When students become guinea pigs

This rapid succession of reforms reveals a core problem: education has become an elaborate experiment

3h ago