‘ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার’ দাবিতে ‘বঞ্চনা’র অবসান চান ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের আলোচনাসভা। ছবি: বাহরাম খান/স্টার

সরকারি চাকরি প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা 'ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার' দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

তারা মনে করেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নীতি নির্ধারণ, পদ না থাকলেও পদোন্নতি, বিদেশ সফর, বিশেষ ক্ষমতাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বেশি ভোগ করেন।

আজ শুক্রবার আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আয়োজনে রাজধানীর খামারবাড়িতে এক আলোচনাসভায় এমন মতামত প্রকাশ করেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

'জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে করণীয়: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, 'যে ক্যাডারের কর্মকর্তারা চাকরির শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তাদেরকেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে হবে। এর মাধ্যমে কার্যকর জনসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।'

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিবিদ আরিফ হোসেন, স্বাগত বক্তব্য দেন ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন ২৫ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ও প্রতিনিধিরা।

সড়ক ও জনপথ ক্যাডারের কর্মকর্তা প্রকৌশলী শাহে আরেফিন তার যুক্তি তুলে ধরে সভায় বলেন, 'একটি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের শত শত অফিসারের পদোন্নতির তোড়জোড় চলছে। অন্যদিকে আমাদের ক্যাডারের বিষয়ে আদালত নির্দেশ দিলেও কর্ণপাত করা হচ্ছে না। যেমন, হাইকোর্ট ২০১৫ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর পদটিকে গ্রেড-৩ এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদটিকে গ্রেড-২ তে উন্নীত করার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু আদালতের রায় বাস্তবায়ন করেনি মন্ত্রণালয়। এমন সব অবর্ণনীয় বৈষম্য নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের।'

সমবায় ক্যাডারের কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন ২৭ বছরের চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, 'প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা একেকটি মন্ত্রণালয়ে এসে নিজেরা বিদেশে ট্রেনিংয়ের সুবিধা নেন। অথচ তারা একটি মন্ত্রণালয়ে দুই বছরের বেশি থাকেন না। তাহলে ওইসব ট্রেনিং জনসেবার ক্ষেত্রে কী কাজে আসে?'

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'ক্যাডার সার্ভিস আছে বলে মেধাবীরা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেওয়ার আগ্রহ পান। তাই এই দুই ক্যাডারকে বিলুপ্ত করলে ভালো শিক্ষার্থীরা নিরুৎসাহিত হবে।'

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামিলুর রহমান বলেন, 'একজন সিনিয়র শিক্ষক মন্ত্রণালয়ে গেলে যুগ্ম-সচিবদের যে আচরণের শিকার হন ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।'

রেল ক্যাডারের কর্মকর্তা এফ এম মহিউদ্দিন বলেন, 'নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তে পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে, এটা দেশের উন্নয়নে অন্যতম অন্তরায়।'

কর ক্যাডারের কর্মকর্তা মহিউল ইসলাম বলেন, 'হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে যারা জমা করেন, তাদের ভাড়া বাড়িতে থেকে দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। আর যারা ভোগ-বিলাসে মত্ত তারা রাজা-মহারাজার মতো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।'

স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ডা. নেয়ামত হোসেন বলেন, 'সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালুর চেষ্টা ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ যারা সেবা দেবেন তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য ক্যাডার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এই উদ্যোগ নিলে মানুষের খরচ না বাড়িয়েই ভালো সেবা চালু করা সম্ভব।'

বক্তারা আরও বলেন, 'প্রশাসনের সব স্তরে অনিয়ম, কোটাবৈষম্য, অসমতা দূর করে একটি গতিশীল জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করতে চায় ২৫ ক্যাডারের সদস্যরা। কোটাবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় করে গঠিত হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। তাই ২৫ ক্যাডার বর্তমান সরকারের অনুভূতিকে ধারণ করে সব ধরনের কোটা বিলোপের মাধ্যমে মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে হবে।'

তারা আরও বলেন, 'প্রশাসনিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে এই ২৫ ক্যাডারের অনেকগুলোর শীর্ষ পদে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন নেই। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এর কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে যেন রিপোর্টে সুপারিশ করে, ২৫ ক্যাডার সেই প্রত্যাশা করে।'

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আরিফ হোসেন বলেন, 'যারা মেধার ক্রাইসিসে ভোগে তারাই নানাভাবে বলপ্রয়োগ করে সুবিধা আদায় করতে চায়।'

সভায় পরিষদের তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, আগামী এক মাস ভবিষ্যৎ সিভিল সার্ভিসের রূপরেখা বিষয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভা, জনবান্ধব রাষ্ট্রগঠনে সিভিল সার্ভিস সংস্কারের জন্য সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে জনগণের মতামত গ্রহণ।

সভা সঞ্চালনা করেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক  ফারহানা আক্তার ও ডা. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন।

Comments

The Daily Star  | English

Grameen Bank ownership, board to see major changes 

Grameen Bank, the Nobel-winning microfinance institution, is set for a major shake-up in its ownership structure and board as the government plans to reduce its stake to 5 percent from the current 25 percent.

51m ago