ভারতের বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ডের দিকে ঝুঁকছেন বাংলাদেশি রোগীরা

থাইল্যান্ড, ভারত, থাইল্যান্ড ভ্রমণ, ব্যাংকক,

বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু সীমিত করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। ফলে বাংলাদেশি রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ডের দিকে ঝুঁকছেন। এছাড়া থাইল্যান্ডের হাসপাতালের কর্মীদের আন্তরিকতা ও সহজ ই-ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা বাড়ছে।

'বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার মান ও থাইল্যান্ডে বহির্মুখী চিকিৎসা ভ্রমণ' বিষয়ক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশি রোগীদের থাইল্যান্ডের চিকিৎসা সেবা নিয়ে ইতিবাচক ধারণা রয়েছে। তাই তারা চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডকে বেছে নিচ্ছেন।

গবেষণাটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব আলী এবং অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির সিনিয়র লেকচারার ড. অনিতা মেধেকার।

তারা বলেন, চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডকে পছন্দের প্রধান কারণ হলো রোগীরা বিশ্বাস করেন, দেশটি তুলনামূলক উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে।

যেসব প্রতিষ্ঠান ভিসা নিয়ে কাজ করে এবং বিদেশি হাসপাতালে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই থেকে তিন মাসে থাইল্যান্ডে মেডিকেল ভিসা পেতে আগ্রহী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন ৪২ বছর বয়সী সাবিনা আক্তার। তিনি ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করলেও পাননি। তাই কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য বিকল্প হিসেবে ব্যাংককে বেছে নেনে।

সাবিনা আক্তার জানান, তিনি থাই মেডিকিউরের পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছেন। তিনি সামিটেজ সুখুমভিট হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে যান।

'যদিও চিকিৎসার খরচ বাংলাদেশের শীর্ষ বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় একটু বেশি ছিল। তবে সেখানকার মেডিকেল কর্মীদের আন্তরিকতা ও চিকিৎসার মান অনেক ভালো ছিল,' বলেন তিনি।

একই কথা বলেন লাবিবা, যার এক আত্মীয় সম্প্রতি ভারতের ভিসা না পেয়ে চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলেন।

তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লাবিবা বলেন, 'যদিও থাইল্যান্ডে চিকিৎসার খরচ বাংলাদেশের তুলনায় সামান্য বেশি, তবুও বাংলাদেশি রোগীদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প।'

ঢাকায় থাই মেডিকিউর অফিসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ নাজনীন আক্তার সৃষ্টি বলেন, 'সেপ্টেম্বর থেকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যেতে ইচ্ছুক রোগীর সংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশের বেশি।'

তিনি জানান, আগস্টের আগে তারা প্রতি মাসে গড়ে ২০ জন রোগীর মেডিকেল ভিসা প্রসেস করতে পারত। কিন্তু অক্টোবর থেকে এই সংখ্যা বেড়ে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জনে দাঁড়িয়েছে।

নাজনীন আক্তার সৃষ্টি উল্লেখ করেন, গুরুতর অসুস্থ রোগীরা ভারতীয় ভিসা না পেলে প্রাথমিকভাবে থাইল্যান্ডকে বেছে নিচ্ছেন।

তার ধারণা, হয়তো থাই সরকার হয়তো এটি বুঝতে পেরেছে। তাই ই-ভিসা চালু করে বাংলাদেশি পর্যটক ও রোগীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে।

তিনি আরও বলেন, থাইল্যান্ডের জন্য ভিসা পেতে ইচ্ছুকরা এখন আবেদনের ১০ দিনের মধ্যে ই-মেইলের মাধ্যমে ভিসা পেতে পারেন।

'যদি আবেদনকারী বৈধ কাগজপত্র দেয় ও তাদের ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা থাকে, তাহলে সাধারণত থাইল্যান্ডের দূতাবাস ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে না,' যোগ করেন তিনি।

থাইল্যান্ডের বুমরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের বাংলাদেশি অংশীদার থাই মেডি এক্সপ্রেসের নির্বাহী (প্যাশেন্ট রিলেশনস) ইশতিয়াক আহমেদ ইমন বলেন, গত তিন-চার মাসে রোগীর প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে।

তবে সম্ভাব্য সংখ্যা নিয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি।

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত বিধিনিষেধ আরোপ করায় থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি রোগী যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে।

বুমরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৬০ জন বাংলাদেশি রোগী ভর্তি করা হয়েছে। যেখানে আগের মাসিক গড় ছিল প্রায় ৪০ জন।

'সুতরাং, বাংলাদেশ থেকে রোগীর আগমন প্রায় ৬৭ শতাংশ বেড়েছে,' বলেন তিনি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশি রোগীরা সাধারণত বুমরুনগ্রাদ ও ব্যাংকক হাসপাতাল পছন্দ করেন। কারণ ডেডিকেটেড হেল্প ডেস্ক থাকার কারণে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা নিতে পারেন।

ব্যাংকক হাসপাতাল বাংলাদেশ অফিসের অপারেশন ম্যানেজার আব্দুল কাইউম বলেন, এটা সত্য যে—সম্প্রতি মেডিকেল ভিসা প্রত্যাশীদের সংখ্যা বাড়ায় ভিসা প্রসেসিংয়ের চাপ বেশ বেড়েছে।

তিনি জানান, তারা আগে প্রতি মাসে চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ ২০টি ভিসা প্রসেস করত। কিন্তু এখন তা বেড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩০টিতে পৌঁছেছে।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, তারা বুঝতে পেরেছেন যে—ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে ভ্রমণকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

'এ কারণে আমরা প্রতি সপ্তাহে দুটি অতিরিক্ত ফ্লাইট যোগ করেছি। এখন আমরা প্রতি সপ্তাহে নয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করি,' বলেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের খরচ কমেছে, তবে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে বাড়ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Unclaimed import boxes clog 18% of Ctg port capacity

Around 200,000 tonnes of imported goods, stuffed in 9,644 containers, have been abandoned at Chattogram port for years – occupying 18 percent of its capacity, as customs officials point the finger at lengthy auction processes for the backlog.

12h ago