ব্যাংককের যে ৭ স্থানে যেতে ভুলবেন না

ছবি: সংগৃহীত

বছরের পর বছর ধরে সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে ব্যাংকক এক অনন্য আকর্ষণের নাম। সংস্কৃতির নানা উপাদানে পরিপূর্ণ এ শহরে ঐতিহ্যের সঙ্গে রোজই দেখা হয় আধুনিকতার। ব্যাপক সুস্বাদু খাবার যেমন জিভে জল আনে, তেমনি মনের খোরাক মেটাতে ইতিহাসের বহু মাইলফলক ঘিরে আছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকককে।

আতিথেয়তায়ও ব্যাংককের জুড়ি মেলা ভার। ব্যাংককে ঘুরে বেড়ানোর জায়গার তালিকা করলে তা নিঃসন্দেহে দীর্ঘ হবে। আজ সেখান থেকে ৭টি স্থানের কথা উল্লেখ করলাম, যেগুলো মিস করা ঠিক হবে না!

বৌদ্ধ মন্দির

থাইল্যান্ডের ৯৫ শতাংশ মানুষই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। আর তাই পুরো ব্যাংকক জুড়ে মন্দিরের ছড়াছড়ি। থাই ভাষায় অবশ্য মন্দিরগুলোকে বলা হয় 'ওয়াট'। স্থানীয়দের প্রার্থনা ও বিশ্বাস নিয়ে জানাশোনা বা সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক অন্বেষণ করতে যারা ভালোবাসেন, তাদের কাছে এই মন্দিরগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনে হবে। এই মন্দিরগুলো অবশ্য একেবারে ট্যুরিস্ট হটস্পটে না। এগুলোর অবস্থান ভিড়ভাট্টা থেকে কিছুটা দূরে, কিছুটা নিরিবিলিতে। এই মন্দিরগুলোতে আছে বড়সড় হলরুম আর মূর্তি। এগুলো শুধু ধর্মীয় নয়, থাইল্যান্ডের ঐতিহাসিক-সামাজিক চিত্রও তুলে ধরে।

 

 

চাতুচাক উইকেন্ড মার্কেট

ব্যাংককের জাতুজাক বা চাতুচাক উইকেন্ড মার্কেট এশিয়ার অন্যতম বড় উইকেন্ড মার্কেট। ৩৫ একর জুড়ে অবস্থিত এ বাজারে হাজার হাজার বিক্রেতা পণ্য সাজিয়ে থাকে অপেক্ষায়। সপ্তাহান্তে প্রায় ২ লাখ মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে যায়। থাই হস্তশিল্প, শিল্পকর্ম, পোশাক, গৃহস্থালী সামগ্রী, এমনকি পোষা প্রাণীও মিলবে এখানে। এখানকার খারাপ দিক হচ্ছে গরম ও ভিড়। ভিড় এড়াতে চাইলে সকাল ৯টার আগে বা বিকেল ৪টার পর যেতে পারেন।

নাইট মার্কেট

ব্যাংককের রাতের জীবন নিঃসন্দেহে রহস্য-রোমাঞ্চে পরিপূর্ণ। আর তাই এর নাইট মার্কেট বা রাত্রিকালীন বাজার নিয়ে কথা বলতেই হয়। এই বাজারগুলো শুধু সামাজিক মিলনমেলাই নয়, থাই সংস্কৃতির অন্যতম অংশও বটে। রাত্রিকালীন এসব অনেক বাজারই বর্তমানে ব্যাংককের একেকটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

থাই স্ট্রিটফুড, হিপস্টার ও পুরনো ধাঁচের এসব বাজারে পোশাক-আশাক, হাতে তৈরি উপহারসামগ্রী, অ্যান্টিক জিনিসপত্র ও আরও অনেক কিছুই পাওয়া যায়। কেনাকাটা করতে ভালোবাসেন যারা, তাদের এখানে একবার ঢুঁ মারতে যেতেই হয়। তবে এত বেশি বাজার আছে যে কম সময়ে কোনো ১টি বা ২টিকে বেছে নেওয়াটা মুশকিল মনে হতে পারে।

যাদের হিপহপ, আধুনিক ঘরানার বাজার ঘোরার ইচ্ছে, তাদের জন্য আছে বিশাল পরিসরের রাচাদা ট্রেইন নাইট মার্কেট। নাইট মার্কেট আর শপিং মলের মিশেলে গড়ে উঠেছে অ্যাশিয়াটিক দ্য রিভারফ্রন্ট, ওখানেও ঘুরে আসা যায়। আবার সুন্দর সব দৃশ্যের জন্য যেতে পারেন চাং চুই প্লেন মার্কেট।

দ্য গ্র্যান্ড প্যালেস

ব্যাংককের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই গ্র্যান্ড প্যালেসে জড়িয়ে আছে থাইল্যান্ডের বহু ইতিহাস। এক সময় রত্তনাকোসিন রাজত্বের রাজা প্রথম রামা থেকে পঞ্চম রামার  বাসস্থান ছিল এটি। বর্তমানেও রাজকীয় অনুষ্ঠানাদি আয়োজন করা হয় এখানে। এই রাজকীয় প্রাসাদের মূল ২টি অংশ। ১টিতে দ্য টেম্পল অব এমারেল্ড বুদ্ধ এবং আরেকটি রাজকীয় আবাস। রাজকীয় আবাসের আবার ৩টি অঞ্চল– মোট ৩টি দরবার। দরবার যদিও এখন পরিণত হয়েছে অফিসঘরে, তবু এখনো পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা প্রায় আড়াইশো বছর পুরনো থাইল্যান্ডের এই গ্র্যান্ড প্যালেস।

প্রাচীন শহর

থাইল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখতে যেতে পারেন ব্যাংকক এনশিয়েন্ট সিটি বা প্রাচীন শহরে। মূল শহর থেকে প্রায় ৪৫ মিনিট ড্রাইভ করে সেখানে যেতে পারেন, উপভোগ করতে পারেন থাইল্যান্ডের ঐতিহ্য।

তবে প্রাচীন শহরের আকার এত বড় যে হাঁটা মুশকিল হয়ে যাবে। পার্কের চারপাশে ক্রুজ করার জন্য একটি গল্ফ কার্ট বা একটি বাইক ভাড়া করতে পারেন।

মিউজিয়াম অফ ফ্লোরাল কালচার

ব্যাংককের এই স্থানে গেলে মন নিজে থেকেই যেন গেয়ে উঠবে– 'ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে, বহে কিবা মৃদু বায়'। মৃদু বাতাস হোক বা ঝড়ো হাওয়া, ফুল নিয়েই যার কাজ– সেই ফুলেল শিল্পী সাকুল ইন্তাকুলের সৃষ্টি এই জাদুঘরটি তাদের জন্য যারা ফুল ভালোবাসেন এবং প্রকৃতিতে নিজেকে যাদের মনে হয় এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

থাই সংস্কৃতিতে ফুলের অবদান এবং এশিয়া জুড়ে বহু সভ্যতায় ফুলের সম্পর্ক বোঝার জন্য এই জাদুঘরটি অবশ্য দর্শনীয়। এশিয়ার এসব অঞ্চলের মাঝে রয়েছে ভারত, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি। একটি শতবর্ষী পুরনো ভবনে যত্ন করে সংরক্ষিত এই জাদুঘর। ভবনের স্থাপত্যে এখনো ভীষণ ঔপনিবেশিকতার ছাপ। থাই আর জেন– এই ২ ধাঁচ মিলিয়ে একটি মনোরম বাগান গড়ে তোলা হয়েছে এখানে।

ফ্লোটিং মার্কেট

এ শহরের চুম্বক আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম এই ভাসমান বাজারগুলো। এর রঙিন মনমাতানো ভাব, কোলাহলমুখরতা আর শহরের নির্যাস– সবমিলিয়ে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটিকে আরও ঋদ্ধ করে তোলে। পাশে ভাসতে থাকা নৌকা থেকে নাশতা কিনে খাওয়া বা দরদাম হাঁকানোর মজা কি আর থেমে থাকা দোকানে মেলে! তবে এ বাজার উপভোগ করতে চাইলে খুব ভোর ভোর উঠে যেতে হবে। নয়তো আসল মজাটা পাওয়া যাবে না। অনেকেই হয়তো অধিক মূল্য আর দূরত্বের জন্য ভ্রু কুঁচকাবেন, কিন্তু এমন অভিজ্ঞতার সুযোগ না হারানোই ভালো। ব্যাংককের ভাসমান বাজারগুলোর মধ্যে আমফাওয়া, তালিং চান, দামনোয়েন সাদুয়াক ইত্যাদি অন্যতম।

Comments

The Daily Star  | English

Kuet students set fire to symbolic VC chair

The ongoing protests stem from a clash between two student groups on February 18

53m ago