কুষ্টিয়ায় বিঘায় অর্ধলাখ টাকা লোকসানের মুখে পেঁয়াজ চাষিরা

ছবি: আনিস মণ্ডল/স্টার

মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে প্রতি বিঘায় ৫০-৬০ হাজার টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন কুষ্টিয়ার পেঁয়াজ চাষিরা।

এ অঞ্চলের কৃষকরা কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক অবরোধ করে দুই দফা বিক্ষোভও করেছেন।

তাদের দাবি, চলতি বছর প্রতিবিঘা পেঁয়াজ চাষে তাদের ব্যয় হয়েছে কমপক্ষে এক লাখ টাকা। রোপণ করার জন্য তারা আট হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজ কিনেছিলেন। এখন সেই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে।

তা ছাড়া, এবার আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ অতিবৃষ্টির কবলে পড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। প্রতি বিঘায় কাঙ্ক্ষিত ফলন আসার কথা ছিল ৬০-৭০ মণ। সেখানে তারা পাচ্ছেন ৩০-৪০ মণ।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম এ বছর এক বিঘা চার কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, '২৪ কাঠা জমি চাষ করতে আমার খরচ হয়েছে লাখ টাকার উপরে। বৃষ্টির কারণে কিছু জায়গায় পেঁয়াজ হয়নি। বাকি জমিতে ৪০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছি। এতে খরচের অর্ধেকও উঠবে না।'

প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন এই কৃষক।

বড়বাড়িয়া এলাকায় ফসলের মাঠে পেঁয়াজ সংগ্রহ করছিলেন শারমিন আখতার। এই নারী গরু বিক্রির টাকায় জমি লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। চাষে লোকসান হওয়ায় তিনি পুঁজি হারানোর পথে।

শারমিন বলছিলেন, 'গরুর খাবারের দাম বেশি হওয়ায় অন্যের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করলাম। এখন যে টাকার পেঁয়াজ পাচ্ছি, তাতে গরুটাও আর ফিরে পাওয়া হবে না। আম-ছালা সব গেল।'

পাশের জমিতেই কাজ করছিলেন আরেক কৃষক আজাদ আহমেদ। গত বছর ভালো দাম দেখে তিনি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে দেড় লাখ টাকা লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন। আজাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টির কারণে এবার পেঁয়াজের একদমই ফলন হয়নি। বিঘাতে ২০ মণ করে পেঁয়াজ পেয়েছি। অথচ রোপণ করা ছিল বিঘায় ১০ মণ করে।'

'এ বছর চাষ করে যে লোকসান হলো, তা তুলতে আরও পাঁচ বছর চলে যাবে। সরকার আমাদের না দেখলে আগামীবার আর পেঁয়াজ চাষ করতে পারব না,' বলেন আজাদ।

এর আগে গত বুধবার বিকেল ও বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পেঁয়াজ চাষিরা।

সেই কর্মসূচিতে আজাদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, 'শুনছি সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে। কৃষকের দিকে না তাকিয়ে সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ এনে ভালো করেনি।'

কুষ্টিয়া পৌরবাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই দিন পেঁয়াজের দাম ছিল এক হাজার ২০০ টাকা মণ। তবে শুক্রবার সেই দাম বেড়ে দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা মণে দাঁড়ায়।

ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিঘাতে ৭০ থকে ৮০ মণ কিংবা তারও বেশি ফলন হয়। কিন্তু যারা আগাম পেঁয়াজ রোপণ করেছিলেন, বৃষ্টির কারণে তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'ফলন ভালো পেলে ক্ষতি এতো বেশি হতো না। তা ছাড়া, গত বছরের তুলনায় এবার দামও কম পাচ্ছে কৃষক।'

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

5h ago