শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও বেড়েছে গিজার বিক্রি
মফস্বল ও শহরাঞ্চলে জীবনমানের পরিবর্তন এবং তুলনামূলক কম দামের কারণে গত বছরের মতো এই শীতেও বিদ্যুৎচালিত গরম পানির চাহিদা থাকায় দেশে গিজার বিক্রি বেড়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় নয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
ঢাকার উত্তরার টেকনিশিয়ান ফয়সাল মাহমুদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চলতি ডিসেম্বরের শুরু থেকেই তিনি প্রতিদিন অন্তত দুটি গিজার স্থাপন করছেন। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া না গেলেও সংশ্লিষ্টদের দাবি—গত নভেম্বর থেকে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে অন্তত চার লাখ গিজার বিক্রি হতে পারে। তিন বছর আগে এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ২০ হাজার।
এই শীতে ৩৮০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার গিজার বিক্রি হতে পারে। প্রায় এক ডজন স্থানীয় প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের গিজার বিক্রি করছে।
বছরে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার গিজার উৎপাদনে সক্ষম একটি প্রতিষ্ঠান করতে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়।
নিজস্ব ব্র্যান্ডের গিজার উৎপাদন ও বিক্রির দায়িত্বে থাকা ওয়ালটন গ্রুপের বিক্রি দৃশ্যত অনেক বেশি।
ওয়ালটনের হোম অ্যাপ্লায়েন্সের প্রোডাক্ট ম্যানেজার রিন্টো অগাস্টিন গোমেজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এখন ভালোমানের গিজার তৈরি করছে। দেশের চাহিদা মেটাতে পুরোপুরি সক্ষম।'
তবে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়ায় আমদানি করা কাঁচামালের দাম বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচও কিছুটা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ৩০ থেকে ৬৭ লিটার পানির গিজার পাওয়া যায় আট হাজার ৩৯০ থেকে ১৮ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে।'
'আমরা আইওটি (ওয়াইফাই নিয়ন্ত্রিত) ডিভাইসও চালু করেছি। এখন থেকে ওয়ালটন অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের গিজার ব্যবহার করতে পারবেন।'
গত দুই সপ্তাহে ট্রান্সকম ডিজিটাল ৭০০ গিজার বিক্রি করেছে।
ট্রান্সকম ডিজিটালের হেড অব বিজনেস রিতেশ রঞ্জন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তাপমাত্রা কমতে থাকায় গিজারের চাহিদা বেড়েছে। এমনকি, শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও রুম হিটারের চাহিদাও বেড়েছে।'
তার মতে, মধ্যমআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এ ধরনের আয়েশি পণ্যের বিক্রি বেড়েছে।
তাদের প্রতিষ্ঠানের ১৫ থেকে ৫০ লিটার পানির গিজার ১২ হাজার ৩০০ থেকে ১৫ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'এই মৌসুমে প্রথমবারের মতো হায়ার ব্র্যান্ডের গিজার বিক্রি শুরু করেছি।'
গত বছর একই সময়ের তুলনায় চলতি মাসে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের গিজার বিক্রির প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে পৌঁছেছে।
প্রাণ-আরএফএলের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলতি মৌসুমে কমপক্ষে দুই লাখ ২০ হাজার গিজার বিক্রির লক্ষ্য নিয়েছি।'
তার ভাষ্য, শীতে গিজারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আগামী দিনগুলোয় বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
'সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গিজার ব্যবহার বেড়েছে। গরম পানিতে গোসলের জন্য মানুষ গিজার কিনছেন।'
'দেশে গিজার উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় শহর, মফস্বল এমনকি গ্রামেও মধ্যমআয়ের মানুষের জন্য গিজার এখন আরও সাশ্রয়ী' উল্লেখ করে প্রাণ-আরএফএল কর্মকর্তা বলেন, 'দেশি গিজার তিন থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।'
রুম হিটার ও গিজারের মতো শীতকেন্দ্রিক পণ্যের চাহিদা শুধু সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকার মতো বড় শহরেই নয়, দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেও বেড়েছে।
এই পণ্য রংপুর, দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ের মতো উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় প্রায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ মানুষের কথা মাথায় রেখে মানুষ গিজার কিনছেন।
রংপুর ও দিনাজপুরে দেশি-বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের গিজার ও হিটার পাওয়া যাচ্ছে।
রুম হিটারের দাম এক হাজার ২০০ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং ২০ থেকে ৬৭ লিটার পানির গিজারের দাম পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার দেলোয়ার হোসেন সম্প্রতি তার পরিবারের জন্য গিজার কিনেছেন। তবে এর 'চড়া' দাম নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, 'গত বছর একই মডেলে গিজারের দাম অনেক কম ছিল। এখানে তীব্র শীতের কারণে গিজার জরুরি হলেও এর দাম বেড়ে যাওয়া হতাশাজনক।'
খুচরা বিক্রেতারা বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে একই কথা বলেছেন।
মিয়াকো, নোভা ও কংকার মতো ব্র্যান্ডগুলো বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে। তবে ক্রেতাদের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে।
গোপালগঞ্জের খুচরা বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কম বা অপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা তো দূরের কথা, মানুষের প্রতিদিনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।'
Comments