চাঁদপুরে কার্গো জাহাজে নিহত ৭ জনের মরদেহ নিতে হাসপাতালে স্বজনরা

মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা। ছবি: স্টার

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবাহী কার্গো জাহাজে নিহত সাতজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়েছে।

গতরাতে তাদের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়। এ খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে তাদের মরদেহ নিতে হাসপাতালে ভিড় করেছেন স্বজনরা। কিন্তু এখনো ময়নাতদন্ত না হওয়ায় মরদেহ নিতে পারছেন না তারা। 

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফরিদ আহমেদ আখন্দ বলেন, 'রাতে মরদেহগুলো হাসপাতালে আসার পর সুরতহাল শেষে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করবে পুলিশ।'

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা।

ওই জাহাজের লস্কর নিহত শেখ সবুজের ছোট ভাই এবং জাহাজের মাস্টার নিহত গোলাম কিবরিয়ার ভাগ্নে ফরিদপুরের সাদিকুর রহমান বলেন, 'আমরা খবর পেয়ে মরদেহ নিতে এসে দেখি সবার মৃত্যু একই ধরনের আঘাতে হয়েছে। এতে আমরা মনে করছি এটি প্রফেশনাল কিলার দ্বারা পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা। এজন্য প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।'

ওই জাহাজের ইঞ্জিনচালক নড়াইলের নিহত সালাউদ্দিন মোল্লার চাচাতো ভাই আরেক জাহাজের মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আমরা গতকাল দুপুরে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি আল বাকেরা জাহাজে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ খবর পেয়ে আমরা আজ মরদেহ নিতে এসেছি। আমরা চাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।'

ছবি: স্টার

তার অভিযোগ, 'এটা কোনো ডাকাতি ছিল না। কারণ দুর্বৃত্তরা হত্যার সময় কোনো কিছু নেয়নি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা।'

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, 'চাঁদপুরের এই নৌ রুটে ব্যাপক চাঁদাবাজি চলে। বিশেষ করে যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই মাঝের চরে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয়। চাঁদা না দিলে মারধর করা হয়। বিষয়টি প্রশাসনও জানে, কিন্তু ব্যবস্থা নেয় না। এজন্য নিরুপায় হয়ে সবাই চাঁদা দিতে বাধ্য হয়। হয়তো সেই চাঁদাবাজরাই এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।'

ওই জাহাজটিতে নতুন চাকরি নেওয়া মাগুরার নিহত মাজেদুল ইসলামের বাবা আনিসুর রহমান হাসপাতালে সন্তানের মরদেহ দেখে চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি করছিলেন। 

এসময় মাজেদুলের চাচা রহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা শুনেছি এই ঘটনার পর সাতজনের মধ্যে তিনজন বিকেল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে দুপুরে গিয়েও তাদের হাসপাতালে আনে বিকেলে। সময়মত না আনার কারণে দুজন হাসপাতালে মারা যায়। এতে পুলিশের গাফিলতি ছিল।' 

এ ঘটনায় একই এলাকার নিহত সজিবুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম মুন্সি ও রানার পরিচয় পাওয়া গেছে।

স্বজনরা জানান, এ ঘটনায় বেঁচে থাকা ফরিদপুরের জুয়েলই শুধু বলতে পারবে এর সঙ্গে কারা জড়িত। তারা চান, প্রশাসন দ্রুত এর সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিচার করবে।

এদিকে, ওই জাহাজে থাকা ৭২০ টন সার ছাড়িয়ে নিতে বিসিআইসির এক কর্মকর্তা ও ঠিকাদার চাঁদপুরে এসে প্রশাসনের কাছে ধর্না দিয়েছেন। তবে আইনগত কারণে তারা তা নিতে পারছেন না।

চাঁদপুরের নৌপুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, 'আমরা এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা করতে পারিনি। তবে প্রক্রিয়া চলছে। জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও নৌপুলিশ পৃথক তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। দুপুরের মধ্যে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।'  
 

Comments