মুক্তিযুদ্ধে রৌমারীর আফতাব বাহিনী

(১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা বাংলাদেশে একাধিক আঞ্চলিক বাহিনী গড়ে উঠেছিল। বেঙ্গল রেজিমেন্টের নিয়মিত বাহিনীর প্রশিক্ষিত ও সাব সেক্টরের অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি আঞ্চলিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারাও পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি যুদ্ধে অসীম বীরত্ব দেখিয়েছেন। বিজয়ের মাসে আমরা তুলে ধরছি সেইসব বাহিনীর কথা। অষ্টম পর্বে আজ থাকছে আফতাব বাহিনীর অনন্য বীরত্বগাঁথা।)

মুক্তিযুদ্ধে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গলের বাঙালি সুবেদার আফতাব আলীর নেতৃত্বে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাপাড়ের জনপদে গড়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য এক আঞ্চলিক গেরিলা বাহিনী। যা আফতাব বাহিনী নামে পরিচিত।

রণাঙ্গনে চারবার গুলিবিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মুহূর্তের জন্যও দমেননি সুবেদার আফতাব। বরং আবির্ভূত হয়েছিলেন আরও বেশি আগ্রাসী রূপে। আজও কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জনপদে লোকমুখে শোনা যায় এই বাহিনীর বীরত্ব ও সাহসিকতার বর্ণনা।

মুক্তিযুদ্ধে আফতাব বাহিনীর উপর বিস্তারিত প্রতিবেদনের কাজে চলতি বছরের মে মাসে কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজীবপুর, চিলমারী, উলিপুর, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও পলাশবাড়ি ঘুরে আফতাব বাহিনীর অন্তত ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলেছে ডেইলি স্টার।

'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: সেক্টর ভিত্তিক ইতিহাস, (সেক্টর-১১)' গ্রন্থ ও আফতাব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনার সূত্রে জানা যায়, একাত্তরের মার্চ মাসে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন সুবেদার আফতাব আলী। এর সদরদপ্তর ছিল সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে। মার্চের শুরুতে পাকিস্তানিরা তৃতীয় বেঙ্গলকে নিরস্ত্রকরণে ব্যর্থ হলে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের অজুহাতে ব্যাটেলিয়নের সব কোম্পানিকে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়।

সুবেদার আফতাবদের ডেল্টা কোম্পানিকে পাঠানো হয় গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে। ২৫ মার্চ গণহত্যা পরবর্তীতে ২৭ মার্চ ডেল্টা কোম্পানির বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে পলাশবাড়িতে অ্যামবুশ স্থাপন করেন। প্রাথমিক প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে সুবেদার আফতাবের নেতৃত্বে সেনারা পিছু হটে ফের সংগঠিত হওয়ার জন্য তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদী পাড়ি দিয়ে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে রৌমারীতে এসে অবস্থান নেন।

এরই মধ্যে মার্চের শুরুতেই গণপরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম পাপু মিয়ার নেতৃত্বে রৌমারীর সি জি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়েছিল। প্রথমদিকে প্রশিক্ষণ ঢিমেতালে চললেও সুবেদার আফতাবের আগমনের সঙ্গেই রৌমারীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়। এসময় স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণেরাও আফতাব বাহিনীতে যোগ দেন।

রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের সম্প্রতি তোলা ছবি। যুদ্ধের সময় এটিই ছিল দেশের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। এখানে প্রায় ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ছবি: আহমাদ ইশতিয়াক

প্রথমে রৌমারী হাইস্কুলে বাহিনীর প্রশিক্ষণ চললেও একপর্যায়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মাস্টারের বাড়িতে বাহিনীর হেডকোয়ার্টার স্থাপন করেন আফতাব আলী। পাশাপাশি হাবিলদার মনসুরের নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী যাদুরচর হাইস্কুলে খোলা হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পও।

মে মাসের প্রথম দিকে বাহিনীর প্রধান প্রশিক্ষণ ক্যাম্পটি রাজীবপুর হাইস্কুলে স্থানান্তরিত করা হয়। ক্রমেই স্থানীয় ছাত্র, যুবক, তরুণরা আফতাব বাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় স্বল্প সময়েই বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। ক্রমেই পার্শ্ববর্তী কোদালকাঠি, টাপুরচর, দাঁতভাঙ্গায় বাহিনীর একাধিক ক্যাম্প গড়ে উঠে।

ক্রমেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের আকার বাড়ায় দেশের অভ্যন্তরে সর্ববৃহৎ মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবির হয়ে উঠে রৌমারী। এ সময়েই জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের সবুজপুর ঘাট থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ হয়ে রাজীবপুর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। যা রৌমারী মুক্তাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। বিষয়টি পাকিস্তানিদের জন্য রীতিমতো আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

জুন-জুলাই মাসে রৌমারীর কোদালকাঠি চরে ছিল আফতাব বাহিনীর শক্ত অবস্থান। ৬ আগস্ট রৌমারী দখলের লক্ষ্যে প্রথমেই কোদালকাঠির চরে ব্যাপক গোলাবর্ষণ চালিয়ে চরের দখল নেয় পাকিস্তানি বাহিনী। তখন পিছু হটে কর্তিমারীর চরে চলে যেতে বাধ্য হন মুক্তিযোদ্ধারা।

এমতাবস্থায় মুক্তাঞ্চল হিসেবে রৌমারীর গুরুত্ব অনুধাবন ও বেদখলের আশঙ্কায় তৃতীয় বেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর শাফায়াত জামিলকে সাহায্যের অনুরোধ করেন সুবেদার আফতাব। তখন লেফটেন্যান্ট নুরুন্নবী খানের নেতৃত্বে একটি কোম্পানিকে রৌমারীতে পাঠিয়ে কোদালকাঠিকে সামনে রেখে চূড়ান্ত অবরোধের পদক্ষেপ নেয়া হয়। যেন পাকিস্তানিরা কোনভাবেই রাজীবপুরের সোনাভরী নদী ও জালছেঁড়া খাল দিয়ে রৌমারীতে ঢুকতে না পারে।

এ পর্যায়ে ৩য় বেঙ্গলের দুটি কোম্পানি ও আফতাব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজীবপুর থেকে ঘুঘুমারির চর পর্যন্ত ৪০ মাইল এলাকা ঘেরাও করে রাখেন। রৌমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হকের নেতৃত্বে গঠন করা হয় রৌমারী প্রতিরক্ষা নগর কমিটি।

৮ আগস্ট পাকিস্তানি সেনারা গানবোট ও কয়েকটি লঞ্চে জালছেঁড়া খালে ঢুকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে দিনভর যুদ্ধের পর কোদালকাঠিতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

আগস্ট মাসে একাধিক খণ্ডযুদ্ধ ও সেপ্টেম্বর মাসের ২১ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত পাকিস্তানিরা মোট ৬ বার আক্রমণ করলেও আফতাব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বক্ষণিক তৎপরতায় রৌমারীর অগ্রভাগেও পৌঁছাতে পারেনি। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে মেজর জিয়াউদ্দিন আফতাব বাহিনীকে কোদালকাঠির চর দখলের নির্দেশ দেন।

১ অক্টোবর সুবেদার আফতাবের নেতৃত্বে ২৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা কোদালকাঠি দখলের লক্ষ্যে নদী পার হয়ে শংকর মাধবপুর গ্রামে পৌঁছে রাতের মধ্যেই প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করেন। পরদিন ২ অক্টোবর সকালে পাকিস্তানিদের পেট্রোল টিম একইগ্রামে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

এসময় পাকিস্তানিদের দুটি দল খারুভাঞ্জ থেকে মর্টার দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ চালায়। দক্ষিণে হাবিলদার রিয়াজুলের প্লাটুন ও মাঝে থাকা হাবিলদার মনসুরের প্লাটুনের সঙ্গে পাকিস্তানিদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

যুদ্ধে হাবিলদার রিয়াজুলের প্লাটুন পিছু হটলে পাকিস্তানিরা তাদের ধাওয়া করে। কিন্তু অন্যদিকে মনসুরের অবস্থানের সামনে প্রবল কাদা থাকায় অগ্রসর হতে পারছিল না পাকিস্তানিরা। একপর্যায়ে রিয়াজুলের প্লাটুনকে ধাওয়া করা পাকিস্তানিরা মনসুরের প্লাটুনের পেছনে আক্রমণ করলে মনসুরের প্লাটুনও পিছু হটেন। কিন্তু এ পর্যায়ে বহু পাকিস্তানি সেনা কাদায় আটকে যায়।

কোদালকাঠির যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা সবুর ফারুকী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওরা দুটি দল মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। অন্যপক্ষকে মুক্তিযোদ্ধা মনে করে নিজেরাই নিজেদের গোলাবর্ষণ শুরু করলে। তখন সুযোগ বুঝে আমাদের রিয়াজুল ও মনসুরের প্লাটুনও দুইপাশ থেকে তাদের উপর গুলি শুরু করি। মুহূর্তেই পাকিস্তানিদের দুটি কোম্পানিই ধ্বংস হয়ে যায়। আনুমানিক দেড়শর বেশি পাকিস্তানি মারা যায়।'

অবস্থা বেগতিক দেখে কোদালকাঠি অবস্থান ছেড়ে পাকিস্তানিরা চিলমারী চলে গেলে ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব তীরে ৬০০ বর্গমাইল বিস্তৃত রৌমারীর মুক্তাঞ্চল থেকে পাকিস্তানিদের সম্পূর্ণ নিশানা মুছে যায়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জামালপুর মহকুমার দেওয়ানগঞ্জ থানার পশ্চিমাংশ থেকে কুড়িগ্রামের ঘুঘুমারির চর হয়ে উত্তরবর্তী ভারতীয় সীমান্ত রেখা পর্যন্ত এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে ছিল আফতাব বাহিনীর বিস্তৃতি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল রাখার লড়াইয়ের পাশাপাশি পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে ৩০টিরও বেশি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন আফতাব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা। এসব যুদ্ধে বহু পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার নিহত হয়েছিলেন। আফতাব বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর মধ্যে অন্যতম যুদ্ধ ছিল দুর্গাপুর ব্রিজ অপারেশন, গাইবান্ধার কামারজানির পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ, সুন্দরগঞ্জ থানা অপারেশন, কালীর বাজার পাট গুদাম দখল, উলিপুরের যুদ্ধ, চিলমারী রেইড, বালাবাড়ি যুদ্ধ প্রভৃতি।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার বালাবাড়ী রেলস্টেশন। ১৯৭১ সালের ১৭ অক্টোবর এখানে আফতাব বাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। ছবি: আহমাদ ইশতিয়াক

পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আফতাব বাহিনী কখনোই অস্ত্রশস্ত্রের মুখাপেক্ষী থাকেনি। একইসঙ্গে ভারতের উপরও তারা নির্ভরশীল ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে নুরুন্নবী খান বীর বিক্রম 'রৌমারী রণাঙ্গন' গ্রন্থে লিখেছেন, 'আফতাব বাহিনী বিভিন্ন থানা আক্রমণ করে অস্ত্রগুলো নিজেদের দখলে নিয়ে এসেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে তখন বেশ কিছু রাজাকার ঘাঁটি স্থাপিত হয়েছে। আফতাব বাহিনী তাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে তাদের হত্যা করেছে কিংবা জ্যান্ত ধরে নিয়ে এসেছে।'

আফতাব বাহিনী ও আফতাব আলীর বীরত্ব সম্পর্কে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের বীর উত্তম 'স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের ১০ খণ্ডে' লিখেছেন, 'রৌমারীর প্রতিরক্ষাব্যূহ আবার ঢেলে সাজাতে হবে। নেতৃত্বের পুরো ভার পড়ল সুবেদার আফতাবের উপর। আমি যখন পুরো পরিস্থিতি তাকে বুঝিয়ে বললাম সে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে স্যালুট করলো এবং বললো, স্যার, পাকিস্তানিরা শুধুমাত্র সুবেদার আফতাবের মৃতদেহের উপর দিয়েই রৌমারীতে প্রবেশ করতে পারে।'

আফতাব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুবেদার আফতাবের মধ্যে কঠিন জেদ, সাহস আর মনোবল ছিল। তার বাহিনীতে আমরা যারাই ছিলাম সবার মধ্যেই তিনি সেই জেদটা ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলেন।'

দুর্গাপুর ব্রিজ অপারেশন

মুক্তিযুদ্ধে আফতাব বাহিনীর অপারেশনগুলোর মধ্যে দুর্গাপুর ব্রিজ অপারেশন ছিল অন্যতম। ১২ জুলাই রাতে আফতাব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রামের উলিপুরের দুর্গাপুর ব্রিজ ধ্বংস করতে ব্যর্থ হলেও শেষপর্যন্ত তা স্মরণীয় হয়ে রয়েছে এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার কল্যাণে।

অপারেশনে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা আজিজার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অপারেশনের দিন ছালিপাড়া থেকে রওয়ানা দিয়ে রাত ১০টায় আমরা ভেলু বাবুর ঘাটে পৌঁছাই। ঘাটের পাশেই বিশাল এক বটগাছ ছিল। ঠিক করা হয়েছিলো অপারেশন শেষে আমরা এই বটগাছের সামনেই আবার ফিরে আসব। ব্রিজ যখন উড়িয়ে দেবো তখনই পাকিস্তানিরা গুলি শুরু করে। আমরা পাল্টা প্রতিরোধ করলে পাকিস্তানিদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। একপর্যায়ে আমি পিছু হটে শেষরাতে বটগাছের সামনে ফিরে এসে দেখি আমাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মহির নিখোঁজ। শেষপর্যন্ত সবার নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা নৌকায় করে ক্যাম্পে ফিরে আসি।'

সেই কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মহির দেওয়ানের সঙ্গে কথা হয়। সেদিন কীভাবে বেঁচে ফিরেছিলেন জানতে চাইলে মহির বলেন, 'পাকিস্তানিদের আক্রমণের সময়ে আমি পশ্চিম পার্শ্বে ছিলাম। আমাদের নির্দেশ ছিল কোনোভাবেই যেন অন্যপাশে না তাকাই। কোন ফাঁকে যে সহযোদ্ধারা চলে গেছে টেরই পাইনি।'

কীভাবে আবার ক্যাম্পে ফিরে এলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'একপর্যায়ে ভোর হয়ে আসে, আমি পাটখেতে লুকিয়ে পড়ি। সকালে দেখতে পাই, পাকিস্তানিরা ব্রিজের চারপাশ দেখছে। সারাদিন পাটক্ষেতে লুকিয়ে থেকে সন্ধ্যার পর আবার হাঁটতে শুরু করি। একসময় ভোর হয়ে যায়। তখন ভয় বাদ দিয়ে একটা ভাঙা কবরস্থানে গিয়ে লুকাই। পায়ের সাথেই লাশের হাড়গোড় লাগছে। কিন্তু আগে তো প্রাণ বাঁচাতে হবে। সন্ধ্যার পর হাঁটতে হাঁটতে একটি বাড়িতে গিয়ে উঠি। ভাগ্যক্রমে সেই বাড়িটি ছিল এক মুক্তিযোদ্ধার। তারাই আমাকে দুদিন আশ্রয় দিয়ে একপর্যায়ে ক্যাম্প অব্দি পৌঁছানোর জন্য নৌকার ব্যবস্থা করে দেয়।'

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আফতাব বাহিনীর প্রধান সুবেদার আফতাব আলীকে বীর উত্তম ও বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়া আফতাব বাহিনীর একাধিক মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Fire breaks out at Korail slum

Five fire engines are rushing to the spot after the blaze originated around 4:15pm

17m ago