সংকটে ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেল

ঢাকার একটি ফাইভ স্টার হোটেল। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার একটি ফাইভ স্টার হোটেল। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার কারণে অনেক অনুষ্ঠান ও ভ্রমণ স্থগিত হওয়ায় ঢাকার বেশিরভাগ পাঁচ তারকা হোটেলগুলোয় অতিথি খরা কাটছে না।

সংশ্লিষ্টরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আকস্মিক বিক্ষোভ ও অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে রাজধানীর ভেতরে যাতায়াত সমস্যা হয়ে পড়ায় ঢাকার নয়টি পাঁচ তারকা হোটেলের এই দুরবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপান তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে।

অতিথিসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, নয়টি পাঁচ তারকা হোটেলে প্রতি রাতে প্রায় আড়াই হাজার অতিথি থাকতে পারেন।

গত অক্টোবরে ব্যবসায় কিছুটা উন্নতি হলেও হঠাৎ অস্থিরতার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় গত নভেম্বরে তা গতি হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব হোটেলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

গত অক্টোবরে ব্যবসায় কিছুটা উন্নতি হলেও হঠাৎ অস্থিরতার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় গত নভেম্বরে তা গতি হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব হোটেলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকার জনসংযোগ ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাফেউজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জুলাই ও আগস্টের তুলনায় পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হলেও ব্যবসা এখনো বাড়েনি।'

তিনি জানান, বর্তমানে এই হোটেলে অতিথির সংখ্যা ৩০ শতাংশ। স্বাভাবিক সময়ে ছিল ৬৫ শতাংশ।

'ডিসেম্বরে অতিথির সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবুও ব্যবসা প্রত্যাশার তুলনায় কম।'

২৭৮টি কক্ষের এই হোটেলটি ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে। ব্যবসায়ীদের অনেক পছন্দের।

'হোটেল শিল্পে আয় কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক' উল্লেখ করে নাফেউজ্জামান আরও বলেন, 'আমাদের ব্যবসা শুধু কক্ষ ভাড়ার ওপর নির্ভর করে না। অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে।' তার আশা, আগামীতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

'জুলাই ও আগস্টের তুলনায় এখন ব্যবসা ভালো। অক্টোবরে মুনাফা হয়েছে।'

ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের বিক্রয় ও বিপণন পরিচালক মাহমুদ হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নভেম্বরের মাঝামাঝি অতিথির অভাবে হোটেলটি অনিশ্চিত অবস্থায় পড়ে যায়।'

'অক্টোবরে প্রতিদিন অতিথি ৮০ থেকে ১০০ জন হলেও এখন তা মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন।'

বর্তমানে এয়ারলাইনস কর্মীদের ক্যাটারিং দিয়ে এ ব্যবসা চলছে বলে জানান তিনি।

আরও বলেন, 'চলমান পরিস্থিতির কারণে ভারত থেকে ব্যবসায়ী আসার সংখ্যা অনেক কমেছে।'

'তাছাড়া খুব কম ব্যবসায়িক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক অতিথি নেই বললেই চলে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে শীতে, অতিথির সংখ্যা শতভাগ হয়ে যায়। এবার এই সংখ্যা বাড়বে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।'

তার মতে, দেশি বা বিদেশিদের নতুন বিনিয়োগের অভাব বিলাসবহুল হোটেল শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান এদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে সতর্কতা দেওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে হোটেল ও আতিথেয়তা খাতেও।

'সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা দেওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে।'

তিনি মনে করেন, তাদের বেশিরভাগ অতিথি চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসেন। এখন এই দেশগুলোর নাগরিকরা আসতে রাজি হচ্ছেন না।'

রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনের বিপণন ও বিক্রয় পরিচালক নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নভেম্বরে অতিথির সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ থেকে এখন ৪০ শতাংশ বা ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাভাবিক সময়ে আমাদের অতিথির সংখ্যা ৭৮ থেকে ৮০ শতাংশ।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের হোটেলের ৭০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ কক্ষ ব্যবসায়ীরা ভাড়া নেন। তাদের সংখ্যা অনেক কমেছে। ফলে হোটেল ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করছে।'

তিনি জানান, অক্টোবরে ভ্রমণকারীদের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও পরে নানান ঘটনায় তা কমেছে।

তবে ধীরে ধীরে অতিথির সংখ্যা ও ব্যবসা বাড়তে পারে।

'বর্তমানে মাত্র ১০ শতাংশ কক্ষে বিদেশি ব্যবসায়ী অতিথি পাচ্ছি। যদিও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী বিদেশ থেকে আসছেন, তবে তাদের সংখ্যা কম। হোটেলের ২০০ কক্ষের মধ্যে ৫০টি এয়ারলাইনসগুলো ভাড়া নেয়।'

ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কম ছেড়ে যাওয়ায় সেই সংখ্যাও কমেছে জানান তিনি বলেন, 'সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে হোটেলটির পরিচালন খরচ মেটানোর মতো আয় হচ্ছে না। শুধু রেডিসন নয়, প্রায় সব পাঁচ তারকা হোটেলের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।'

তবে ওয়েস্টিন ঢাকার ক্লাস্টার পাবলিক রিলেশন্স ম্যানেজার তুহিনূর সুলতানা বেশ আশাবাদী। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সামগ্রিক পরিস্থিতি বিদেশিদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হলেও ইউরোপ ও চীন থেকে অনেক অতিথি পাচ্ছি।'

তিনি আরও বলেন, 'গত দুই মাসে আমাদের হোটেলে অনুষ্ঠান, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের জন্য কর্পোরেট বুকিং বেড়েছে। ব্যবসা কিছুটা ফিরছে।'

তার মতে, জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ওয়েস্টিন ঢাকায় অতিথি ছিল ১০ শতাংশ। এখন তা ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

15h ago