সাবেক ৩০ ডিসি-ইউএনওকে তলব, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের বৈঠক আজ

দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রশ্নবিদ্ধ তিনটি নির্বাচনে কারচুপির তথ্য জানতে ৩০ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)।

উল্লিখিত তিনটি নির্বাচনই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় নির্ধারিত আছে।

গত ৪ ডিসেম্বর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বৈঠকে উপস্থিত থাকার ব্যবস্থা করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান বরাবর চিঠি দেন। সে অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কমিশনের প্রত্যাশিত কর্মকর্তাদের বৈঠকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে একাধিক সাবেক সচিব ও অন্তত একজন বর্তমান সচিব আছেন।

প্রশ্নবিদ্ধ তিনটি জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালনকারী দুই জন বিভাগীয় কমিশনার, ১৩ জন ডিসি, ১৪ জন ইউএনও এবং ডিডিএলজি হিসেবে দায়িত্বপালনকারী একজনসহ ৩০ কর্মকর্তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বৈঠক আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত অন্তত চারজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গত তিনটি নির্বাচনে কী ধরণের কারচুপি হয়েছে, কারা নির্দেশ দিয়েছে, নির্দেশ বাস্তবায়নে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা কী কী করেছেন, সে সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া হবে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ভবিষ্যৎ নির্বাচনে সেগুলো কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সেই সুপারিশ করবে।

এক কর্মকর্তা বলেন, 'গত তিনটি নির্বাচনে অন্তত ‍দুই হাজারের মতো কর্মকর্তা রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের সবার মতামত নেওয়া কমিশনের পক্ষ থেকে সম্ভব নয়। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩০ কর্মকর্তাকে বাছাই করা হয়েছে।'

দশম জাতীয় সংসদ

আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনও মিলিয়ে ১২ জনকে ডাকা হয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগরের ছয়টি সংসদীয় আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন। এরপর তিনি নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন।

দশম জাতীয় সংসদে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী তিন ডিসিকে ডাকা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন কুষ্টিয়ার সাবেক ডিসি সৈয়দ বেলাল হোসেন ও পিরোজপুরের সাবেক ডিসি এ, কে, এম, শামিমুল হক ছিদ্দিকী, যিনি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আট জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন ইসলামপুরের (জামালপুর) সাবেক ইউএনও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সরিষাবাড়ির (জামালপুর) ইউএনও আজিজুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদরের ইউএনও মো. আছাদুজ্জামান, বাউফলের (পটুয়াখালী) ইউএনও এ. বি. এম সাদিকুর রহমান, তজুমদ্দিন (ভোলা) ইউএনও মুহম্মদ কামরুজ্জামান, টেকনাফ (কক্সবাজার) ইউএনও শাহ্‌ মুজাহিদ উদ্দীন ও পটিয়া (চট্টগ্রাম) ইউএনও মোছাম্মৎ রোকেয়া পারভীন।

একাদশ জাতীয় সংসদ

একাদশ জাতীয় সংসদের মোট ১১ জন রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ডাকা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকার সাবেক বিভাগীয় কমিশনার কে এম আলী আজম, যিনি প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ছিলেন।

সর্বশেষ তিনি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন রংপুরের সাবেক ডিসি এনামুল হাবীব, বগুড়ার সাবেক ডিসি ফয়েজ আহাম্মদ, সাতক্ষীরার সাবেক ডিসি এস এম মোস্তফা কামাল ও ফেনীর সাবেক ডিসি মো. ওয়াহিদুজ্জামান।

অন্যদিকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মধ্যে রানীশৈংকলের (ঠাকুরগাঁও) সাবেক ইউএনও মৌসুমী আফরিদা, রাজশাহীর সাবেক ডিডিএলজি পারভেজ রায়হান, মনপুরার (ভোলা) সাবেক ইউএনও বশির আহাম্মদ, ঘাটাইলের (টাঙ্গাইল) সাবেক ইউএনও দিলরুবা আহমেদ ও সাভারের (ঢাকা) সাবেক ইউএনও শেখ রাসেল হাসানের নাম তালিকায় রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম অর্থাৎ সাত জন ডিসি ও ইউএনওকে ডাকা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন নীলফামারীর সাবেক ডিসি পঙ্কজ ঘোষ, বগুড়ার সাবেক ডিসি মো. সাইফুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের সাবেক ডিসি মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, কুষ্টিয়ার সাবেক ডিসি মো. এহেতেশাম রেজা ও বরগুনার সাবেক ডিসি মোহা. রফিকুল ইসলাম।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মধ্যে সিলেট সদর ও বাগেরহাট সদরের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ দুই কর্মকর্তার নাম জানা যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English
Banks deposit growth in 2024

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

12h ago