মিরপুর স্টেডিয়াম মার্কেট: ক্রিকেটের রাজ্যে ফার্নিচারের সমারোহ
ক্রিকেট ম্যাচের দিনগুলোতে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি মুখরিত থাকে দর্শকদের সরব উপস্থিতি আর উল্লাসধ্বনিতে, এর সঙ্গে চারদিকে থাকে কড়া নিরাপত্তার চাদর। তবে বাকি দিনগুলিতে স্টেডিয়ামের চিত্র একেবারেই আলাদা।
ক্রিকেট পিচ থেকে কিছুটা দূরে গেলেই দেখা মেলে স্তূপ করে রাখা বিভিন্ন ফার্নিচার আর নাকে ভেসে আসে কাঠের ঘ্রাণ। ক্রিকেটের ব্যাটসম্যান আর বোলারের বদলে দেখা যায় ক্রেতা আর বিক্রেতাদের। মিরপুর স্টেডিয়ামের নিচতলায় চারিদিক ঘিরে অবস্থিত এই ফার্নিচার মার্কেটে ৭০টিরও বেশি দোকান রয়েছে।
দোকানের ফুলেল নকশাদার ফার্নিচার আর বিভিন্ন রকম আলোর ব্যবহার ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। আর দোকানের বাইরে নতুন পণ্য আনা নেওয়া আর ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর ব্যস্ততা লেগে থাকে সবসময়। দক্ষ হাতে নিপুণভবে কাঠমিস্ত্রিদের
দেখা যায় আসবাবগুলো বার্নিশ করতে। মার্কেটের অলিগলিতে এই চিত্রটিই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। এর সঙ্গে পাওয়া যায় তারপিনের ঘ্রাণ।
প্রিমিয়াম ফার্নিচারের পুরনো বিক্রেতা খলিলুর রহমান বলেন, '২০০০ এর দশকের শুরু থেকে এই মার্কেটটি এখনে গড়ে উঠেছে। আমরা যেকোনো ধরনের ডিজাইনের আসবাব বানাতে পারি। ঠিকমতো যত্ন নিলে এগুলো ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত অনায়েসে টিকে যায়।'
প্রয়োজন থেকে শুরু করে বিলাসিতা- এখানে ড্রেসার, সোফা সেট, বিছানা, টিভি ক্যাবিনেট, ক্যাবিনেট সবকিছুই পাওয়া যায়।
এক দম্পতি বললেন, 'আমাদের যখনই কোনো ফার্নিচার দরকার হয় আমরা প্রথমেই এই স্টেডিয়াম মার্কেটে একবার ঢুঁ মেরে যাই। দামের কথা হিসাব করলে এখানকার কিছু জিনিস আসলেই খুব ভালো।'
বাচ্চাদের ফার্নিচার এখানে বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া রান্নাঘরের সামগ্রী যেমন- ডিশ র্যাক, পেনট্রি ক্যাবিনেট, ভেজিটেবল শেলফ, কন্টেইনার এসবও পেয়ে যাবেন এখানে।
ঢাকার বাসিন্দা পেশায় গৃহিণী নাজিয়া জানান, আগে এখান থেকে জিনিস কিনে তিনি সন্তুষ্ট, তাই রান্নাঘরের জিনিস তিনি এখান থেকেই কিনে থাকেন সবসময়।
এসব দোকানের ফ্যাক্টরিগুলো বাড্ডা, রায়েরবাজার, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুরে অবস্থিত। অভিজ্ঞ কাঠমিস্ত্রিরা নামিদামি ব্র্যান্ডের আসবাবপত্রকে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এখানকার ফার্নিচারগুলো তৈরি হয় চিটাগং সেগুন কাঠ (টিক), মালেয়শিয়ান প্রসেসড কাঠ অথবা কানাডিয়ান ওক কাঠ দিয়ে যা ওজনে হালকা ও সাধ্যের মধ্যে ভালো।
ফার্নিচারের দামটা হাতের নাগালে হলেও দোকান ভেদে বিরাট পার্থক্য হতে পারে। যেমন ডিজাইন ও সাইজভেদে চিটাগং টিক কাঠের বিছানার দাম হয় ৩০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ টাকার মধ্যে। আবার প্রসেসড কাঠের বিছানার মূল্য হয় ১৭,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকার মধ্যে। তাই প্রথমবার কেনাকাটা করতে গেলে খুব ভালো করে জিনিসের মান ও দাম যাচাই করে নিতে হবে।
স্থানীয় লোকজন ছাড়াও অফিসের ফার্নিচারের জন্য এই মার্কেট সবার কাছেই পরিচিত। ওহি ফার্নিচারের একজন বিক্রেতা বলেন, 'ঢাকার বাইরেও আমাদের অনেক ক্রেতা রয়েছেন। কেউ আছেন নামিদামি করপোরেট ক্লায়েন্ট আবার অনেকে পাইকারী বিক্রেতা।'
অফিস টেবিলগুলোর মাপ চার থেকে সাত ফিট এবং এগুলোর দাম পড়বে ৩৫০০ থেকে ৭৫০০ টাকার মধ্যে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়রিংয়ের শিক্ষার্থী রাফি বলেন, 'আমি আমার কম্পিউটার টেবিল এখান থেকে নিজের পছন্দমতো ডিজাইন করে নিয়েছি। এই ফার্নিচারগুলোর কিছুটা যত্নের প্রয়োজন হয়, তবে দাম হিসেবে ঠিকই আছে বলে আমি মনে করি।'
ফার্নিচার কিনে বোল্ড আউড হওয়া থেকে রক্ষা পেতে কেনার আগে ফার্নিচারের স্থায়িত্ব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
একজন বিক্রেতা বলেন, 'আমাদের ফার্নিচার দীর্ঘ সময় টিকে থাকে। তবে পানি পড়লে সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলতে হবে।'
বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে এই দোকানগুলো। তবে এক দশকের পুরনো এই ফার্নিচারের বাজার বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাই পরের বার ফার্নিচারের খোঁজে বের হওয়ার সময় মিরপুরের এই ফার্নিচারের সাম্রাজ্য অবশ্যই ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। ক্রিকেট ম্যাচের দিনগুলো ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই দোকানগুলো।
অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম
Comments