ব্যাটিংয়ের ‘দৃশ্যমান সমস্যা’ দূর হওয়ার আশা নিয়ে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ
ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে দুই দলের অধিনায়কই ছিলেন বেশ চনমনে। বিসিবি নতুনত্ব আনতে সিরিজের ট্রফি উন্মোচন করল একটু ভিন্নভাবে। কাগজের বক্স থেকে ট্রফি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উঠল নিচ থেকে উপরে, তার সঙ্গে ছন্দ রেখে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ক্যামেরা পারসনদের হাস্যোজ্জ্বল অভিব্যক্তি দিলেন দুই অধিনায়ক। এরপর কনফেটি মেশিন থেকে রঙিন কাগজ উড়তে দেখে হাসি যেন আর ধরে না আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক গ্যাবি লুইসের। শেষে দুই অধিনায়কই ট্রফিটা শক্ত হাতে ধরে ছবি তোলার আনুষ্ঠানিকতা সারলেন। তবে সিরিজের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি এই ট্রফির পাশে আর লুইসকে চাইবেন না নিশ্চিত। সেরকম প্রত্যাশা আর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়েই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নামছে বাংলাদেশ।
বুধবার থেকে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি আইসিসি উইমেন চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। এই তিন ম্যাচ ও পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে আরও তিন ম্যাচ জিততে পারলে সরাসরি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করবেন জ্যোতিরা। না হয় বরাবরের মতন খেলতে হবে বাছাইপর্ব।
গত মার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রায় ৮ মাস পর ওয়ানডেতে নামায় আড়ষ্টতা কিছু থাকা স্বাভাবিক। তবে ঘরের মাঠের কন্ডিশনে খেলা বলেই আইরিশদের বিপক্ষে পরিষ্কার ফেভারিট বাংলাদেশ। পরিসংখ্যানে আয়ারল্যান্ড থেকে বেশ এগিয়ে স্বাগতিক দল। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এখন অবধি ৬টি ওয়ানডে খেলে তিনটা জয় আছে, হেরেছে কেবল এক ম্যাচ। বাকি দুটির ফল হয়নি।
কদিন আগে নিজেদের মাঠে ইংল্যান্ডের মতন দলকে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড। তবে বাংলাদেশের কন্ডিশনে খেলাটা যেন ভিন্ন মনে করিয়ে দিয়েছেন জ্যোতি। মঙ্গলবার মিরপুরে অনুশীলন সেরে গণমাধ্যমকে প্রবল আত্মবিশ্বাসের কথা শোনান তিনি, 'আয়ারল্যান্ড যেসব ম্যাচ জিতেছে, সবগুলো ঘরের মাঠের কন্ডিশনে জিতেছে। এই কন্ডিশনে ওদের তেমন ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। ওদের সঙ্গে যতবার খেলেছি, আমাদের জয়ের হার অনেক বেশি। যেহেতু ঘরের মাঠে খেলা, যে কেউ নিজের ঘরের মাঠের কন্ডিশনে বেশিই শক্তিশালী হয়। সাম্প্রতিক সময়ের সিরিজগুলো যদি দেখেন, অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আমরা ভালোই খেলেছি। তাদের রেকর্ডটা কিন্তু তাদের মাঠেই। তবে এটা নিয়ে... আমি বলব প্রতিপক্ষকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু আমাদের ৬ পয়েন্ট নিতে হবে, খুব গুরুত্বপূর্ণ সিরিজটা। প্রতিটা ম্যাচ মূল্যবান। আমরা চেষ্টা করব দাপট দেখিয়ে খেলতে। আয়ারল্যান্ড আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে নিচে। যদি আমরা তাদের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে খেলতে না পারি, তাহলে বড় দলগুলোর বিপক্ষে কীভাবে চোখে চোখ রেখে লড়াই করব।'
দাপট দেখাতে গেলে জ্বলে উঠতে হবে সব বিভাগে। বাংলাদেশের নারী দলের সেদিক থেকে বড় সমস্যা ব্যাটিং। এটা স্বীকার করে নেন জ্যোতি, 'ব্যাটিং দৃশ্যমান সমস্যা। অনেক সময় যেটা হয়, আমরা টপ-অর্ডাররা রান করছি না। ফলে মিডল-অর্ডার থেকে আর সামাল দেওয়া হচ্ছে না। আধুনিক ক্রিকেটে আসলে কখনও কাভার করার সুযোগ থাকে না। যেটা চলে যায় সেটা কাভার করা যায় না।'
তবে এবার সিরিজের আগে ব্যাটিং নিয়ে আলাদা কাজ করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'ব্যাটিংটার প্রস্তুতির জন্য আমি বলব যে, আমরা কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। যেখানে কম-বেশি দল বাছাইয়ের দিকে মনোযোগ ছিল। যে কারণে প্রতিটা ক্রিকেটার নিজের জায়গা থেকে সেরাটা খেলার চেষ্টা করেছে। ওইভাবেই দল ঠিক করা হয়েছে। লম্বা সময় পর ওয়ানডে খেলা। ঘরের মাঠের কন্ডিশনে আমাদের যেসব ক্রিকেটাররা ধারাবাহিক রান করে, তারা সেসব (প্রস্তুতি) ম্যাচগুলোতে ভালো খেলেছে। তাই আমি দল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।'
রান করতে হলে, ভালো খেলতে হলে কাদের উপর ভরসা সেটাও স্পষ্ট করে জানান জ্যোতি, 'আমাদের এমন কিছু ক্রিকেটার আছে ওয়ানডে নিয়মিত খেলে, ধারাবাহিক যারা। নাম উল্লেখ করতে হবে ফারজানা হক পিংকির ওয়ানডে রেকর্ড খুবই ভালো। মুর্শিদা খাতুনও অনেক ভালো ওয়ানডে খেলছে। সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন শারমিন আক্তার সুপ্তা, তাকে নেওয়া হয়েছে। এই সংস্করণে আমাদের যে ব্যাটিং আছে, একটু সময় নিয়ে ব্যাটিংটা করলে... যেহেতু ব্যাটিংটাই বেশি সমস্যা দেখা যায়, তাই এখানে তো সময় নিলে খুব বেশি সমস্যা নেই।'
বুধবার সকাল ১০টায় শুরু হবে প্রথম ওয়ানডে। ৩০ নভেম্বর দ্বিতীয় ও ২ ডিসেম্বর শেষ ম্যাচই একই ভেন্যুতে। পরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
Comments