বিক্রি কমে যাওয়ায় মূলধন সংকটে ইস্পাত খাত

ইস্পাত
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পণ্যের বিক্রি কমে যাওয়ায় দেশের ইস্পাত কারখানার মালিকরা মারাত্মক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) মহাসচিব সুমন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলমান অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যস্ফীতির চাপ, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ইস্পাত প্রস্তুতকারকদের আর্থিক ঝুঁকিতে ফেলেছে।'

দেশের ৪০টিরও বেশি প্রধান ইস্পাত উৎপাদকদের নিয়ে এই সংগঠনের মহাসচিব জানান, এখন বেশিরভাগ কারখানা কর্মীদের বেতন ও ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে সমস্যায় পড়েছে।

বিএসএমএ'র তথ্য অনুসারে, দেশের ইস্পাত খাত প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ।

সুমন চৌধুরী ভাষ্য, মোট বিনিয়োগের প্রায় ৬৫ শতাংশ এসেছে ব্যাংক থেকে। এখন আয় কম হওয়ায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

ফলে এ অবস্থা চলতে থাকলে ইস্পাত খাত টিকতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তার মতে, গত দুই বছরে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২২ থেকে ১২৫ টাকা হওয়ায় ইস্পাত প্রস্তুতকারকরা এখন কার্যকরী মূলধন ঘাটতিতে পড়েছেন।

'এই অপ্রত্যাশিত অবস্থা ইস্পাত খাতের স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।'

গত ১৬ অক্টোবর বিএসএমএ ইস্পাত খাতকে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়।

চিঠিতে বিএসএমএ'র সভাপতি ও জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য লোকসানে থাকা ইস্পাত কারখানাগুলোকে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়ার জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের অনুরোধ জানানো হয়।

তিনি ব্যাংকগুলোকে ঋণের সীমা ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ ও স্বল্প সুদে অতিরিক্ত তহবিল দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান।

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, 'বিশ্ববাজারে আমদানি মূল্য বাড়লেও স্থানীয় বাজারে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান অনিচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছে।'

এ ছাড়াও, পুনঃতফসিল ও বকেয়া ঋণ পরিশোধ ১৬ বছর পর্যন্ত বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত সোমবার ৬০ গ্রেডের মাইল্ড স্টিলের দাম টনপ্রতি ৯৩ হাজার টাকা থেকে কমে হয়েছে সাড়ে ৯২ হাজার টাকা।

দেশব্যাপী বিক্ষোভ, কারফিউ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও পরবর্তী আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে গত তিন মাস ইস্পাত খাতের জন্য ভয়াবহ ছিল। বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) ও আনোয়ার ইস্পাতের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটময় পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছিল।

সংশ্লিষ্টদের মতে, কারখানাগুলো আর্থিক ক্ষতিতে পড়ায় অনেকে চুল্লি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় অন্তত দুই বছরের জন্য গ্রুপ সিআইবি প্রতিবেদন স্থগিতের দাবি জানাচ্ছেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা।

বিএসএমএ'র মতে, এ ধরনের স্থগিতাদেশ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

এক ইস্পাত কারখানার শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের এক পরিচালক ব্যক্তিগত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় পরপর দুটি এলসি আটকে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রায় দুই হাজার কর্মী চাকরি ঝুঁকিতে পড়েছেন।'

বিএসএমএ'র তথ্য অনুসারে, ১৯০ ইস্পাত কারখানার মধ্যে প্রায় ৪০টির অবস্থা তুলনামূলক ভালো।

বিএসআরএম উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে প্রতি টন রড উৎপাদনে কারখানাগুলোকে লোকসান দিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কয়েকটি ছোট কারখানা চুল্লি বন্ধ করে দিচ্ছে।'

'কারণ কারখানার মালিকরা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করছেন শুধুমাত্র শ্রমিকদের বেতন ও ইউটিলিটি বিল মেটাতে।'

তিনি আরও বলেন, 'রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় অনেক নতুন নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। জানি না পরিস্থিতির কবে উন্নতি হবে।'

স্থানীয় ইস্পাত চাহিদার প্রায় ৬৭ শতাংশ পূরণ করে এমন প্রকল্পের কাজ গত জুলাই থেকে কমতে থাকে। গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তা পুরোপুরি বন্ধ আছে।

এ ছাড়াও, উচ্চ মূল্যস্ফীতি আবাসন খাতকে দুর্বল করেছে। এটি ইস্পাতের চাহিদাকে আরও কমিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসএমএ।

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

6h ago