২০২৭ সালের মধ্যে ইস্পাতের ব্যবহার বাড়বে ২৫ শতাংশ: গবেষণা

বিগমিন্ট, ইস্পাত, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, পিএইচপি গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ,
স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশে ইস্পাতের ব্যবহার ২০২৪ সালের ৮৫ লাখ টন থেকে ২০২৭ সালে ২৫ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ টনে দাঁড়াবে বলে বিগমিন্টের এক গবেষণায় বলা হয়েছে। মূলত দেশে ক্রমবর্ধমান অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের কারণে ইস্পাতের ব্যবহার বাড়বে।

ভারতভিত্তিক বিগমিন্ট চতুর্থ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন-২০২৪ এ এই পূর্বাভাস দিয়েছে। বিগমিন্ট মূল্য সূচক প্রতিবেদন, বাজার গবেষণা এবং পণ্য পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে।

এই শিল্পের সঙ্গ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবহার বাড়ার বিষয়টি মাথায় রেখে ইতোমধ্যে বাংলাদেশি স্টিল নির্মাতারা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে শুরু করেছে এবং বিনিয়োগকারীরা নতুন ইস্পাত কারখানা তৈরি করতে অর্থ বিনিয়োগ করছেন।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, পিএইচপি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, বসুন্ধরা গ্রুপ ও আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন কারখানা স্থাপন ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে বলে জানা গেছে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বার্ষিক ১৪ লাখ টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইস্পাত কারখানা স্থাপনে আনুমানিক ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে (বিএসএমএসএন) ইস্পাত কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে পিএইচপি গ্রুপ। এখানে পিক সময়ে বছরে ৩০ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপ বিএসএমএসএনে মোট ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে দুটি স্টিল মিল স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ করেছে। এ দুটি মিলে বছরে ২০ লাখ টনের বেশি হট-রোল্ড কয়েল উৎপাদিত হবে।

মার্কেটে অংশীদারিত্ব বাড়াতে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নতুন কারখানা নির্মাণে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ রয়েছে আনোয়ার গ্রুপের।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪০টি স্টিল ওয়ার্কস সচল রয়েছে, যাদের সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ৯০ লাখ টন ইস্পাত। বাংলাদেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ৮৫ লাখ টন ইস্পাতের প্রয়োজন হয়।

বিগমিন্টের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা ১ কোটি ৩০ লাখ টনে উন্নীত হবে।

বিগমিন্ট আরও বলেছে, স্টিল মিল বেশি থাকলেও ঢাকা জোনের উৎপাদন ক্ষমতা চট্টগ্রামের চেয়ে কম

এতে বলা হয়, মোট ইস্পাত গলানোর সক্ষমতার ৬২ শতাংশ চট্টগ্রামে, যেখানে ঢাকাতে মাত্র ৩২ শতাংশ।

দেশের বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, 'দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে ইস্পাতের চাহিদা দিন দিন বাড়বে। আগামী তিন বছরের মধ্যে চাহিদা অন্তত ৩০ লাখ টন বাড়বে।'

তিনি আরও বলেন, 'কেবল রড তৈরির জন্য স্ক্র্যাপ স্টিলের প্রয়োজনীয়তাও প্রায় ২০ লাখ টন বাড়বে।'

মেট্রোসেম স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, 'বাংলাদেশ বর্তমানে স্টিল রড তৈরির জন্য প্রায় ৫৫ লাখ টন স্ক্র্যাপ স্টিল আমদানি করে। চাহিদা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে আমদানি বাড়বে।'

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে চতুর্থ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা, গতিশীলতা এবং ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আছে। জিডিপির নিরিখে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান দেশগুলোর একটি, যার গড় প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য টেকসই সমাধান গ্রহণের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে

বিএসআরএম বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহোসেন বলেন, 'ভবিষ্যতে আমাদের কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।'

'অবশ্যই, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ সুদের হারের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে আশা করি, ভবিষ্যতে এটি সহজ হবে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh, Pakistan, China launch trilateral cooperation mechanism

A working group will be formed to follow up on and implement the understandings reached during the meeting

1h ago