একাত্তরের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইব: জামায়াত আমির

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেই কেবল মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের দায় নেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

দেশের প্রাচীনতম ইসলামী এই দলের আমির জোর দিয়ে বলেছেন, তারা স্বীকার করেন যে তার দল 'এক পাকিস্তানের' পক্ষে ছিল এবং দলের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তবে এর জন্য সাংগঠনিকভাবে জামায়াতকে দায়ী করা যাবে না।

গত ১০ অক্টোবর দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, 'আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ওই সময়ের আমি সাক্ষী থাকি আর না থাকি, এটা জামায়াতে ইসলামী না। যদি সন্দেহাতীতভাবে এ ধরনের কোনো ভুল বা অপরাধ প্রমাণিত হয়, আমি দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমা চাইব জাতির কাছে। আমার কোনো রিজার্ভেশন নেই এ ব্যাপারে।'

'কিন্তু কোনো গোঁজামিল বা মিথ্যা চাপিয়ে দেওয়া হবে, আমি মিথ্যাকে সত্য বলব, এটা আমার পক্ষে সম্ভব না। আগে স্পষ্ট হতে হবে, কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা', যোগ করেন তিনি।

রাজাকার, আল বদর, আল শামসের মতো সংগঠনগুলো জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ছাত্র সংঘের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল, বিভিন্ন ঐতিহাসিক নথিতে এর উল্লেখ রয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দিলে জামায়াতের আমির বলেন যে, 'একটা কথা আছে, ইতিহাস বিজয়ীর পক্ষে।'

তিনি বলেন, 'সেখানে সকল দলের মানুষ ছিল। বাংলাদেশে, পূর্ব পাকিস্তানে তখন যারা ছিল, যারা ভালো মনে করেছে, সরকারের ডাকে সাড়া দিয়েছে। এটাকে দলের দায়বদ্ধতা বলা যাবে না। এটা ব্যক্তির দায়বদ্ধতা।'

'হ্যাঁ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা পূর্ব পাকিস্তান জামায়াত ইসলামীর কোনো রেজ্যুলুশনের মাধ্যমে যদি এরকম (মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী) কোনো দল গঠন হয়ে থাকে, আর সেই রেজ্যুলুশনের ডকুমেন্ট যদি আওয়ামী লীগের কাছে যায়, সেটা অবশ্যই জাতি গ্রহণ করবে। আমিও গ্রহণ করব', বলেন এই রাজনীতিবিদ।

এটা নথিভুক্ত যে, ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতের আমির ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আজম। তার নামে চাঁদা তোলা হয়েছে, তিনি বিভিন্ন জায়গায় ভাষণ দিয়ে বলেছেন পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিতে। রাজাকার সম্মেলন বা বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানের পক্ষে সক্রিয় অবস্থান নেওয়াকে তিনি উৎসাহিত করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুর রহমান বলেন, 'আমি এটা বলেছি আগেই, তারা এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। আমি তো বলিনি, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে চলে গিয়েছিলেন। তারা যেহেতু এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন, সুতরাং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য, স্থিতিশীলতার জন্য যেটা দরকার বলেছেন। তারা তো অস্বীকার করেনি তারা এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন না।'

'সহিংসতা যদি কেউ করে থাকে, স্বয়ং গোলাম আজম করে থাকলেও তার বিচার হোক। আমার কোনো আপত্তি নেই', বলেন তিনি।

কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া শফিকুর রহমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীন জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, '৪২ বছর পর এসে সবকিছু জামায়াতের ঘাড়ে ফেলে দেওয়া হলো। এটা কতটুকু জাস্টিস? যে ট্রায়ালটা হলো, সেটাও টোটালি ব্লারড। একটা ক্যাঙ্গারু ট্রায়াল।'

জামায়াতের আমির জানান, মুক্তিযুদ্ধের পরপরই যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ২৪ হাজার মামলা হয়েছে এবং অনেকে জেলে গেছেন।

তার ভাষ্য, '৪২ বছর পর যে লোকগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো, তাদের বিরুদ্ধে তখন একটা অভিযোগ দিতে পারল না কেন? কোনো একটা থানায় তাদের বিরুদ্ধে সামান্য একটা অভিযোগের ছোঁয়া থাকল না কেন?'

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

7h ago