নারকেল খেলে যেসব উপকার পাবেন
নারকেল একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপকারী ফল যা পুষ্টিগুণের দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ। নারকেল মূলত দুটি রূপে পাওয়া যায় কাঁচা বা সবুজ নারকেল, যা ডাব নামে পরিচিত এবং শুকনো বা পাকা নারকেল। উভয় ধরনের নারকেলের মধ্যেই রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান। নারকেল বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপ্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
নারকেল খেলে কী কী স্বাস্থ্য উপকারিতা মিলবে তা জানিয়েছেন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মাহফুজা নাসরিন শম্পা।
মাহফুজা নাসরিন শম্পা বলেন, নারকেল একটি প্রাকৃতিক খাদ্য যা শরীরের পুষ্টি জোগাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নারকেলের পানি, শাঁস এবং তেলের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সহায়ক। এটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর।
নারকেলের পানি
- নারকেলের পানি প্রাকৃতিকভাবে শীতল এবং হালকা মিষ্টি স্বাদযুক্ত। এটি শরীরের তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- নারকেলের পানিতে প্রচুর পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। নারকেলের পানি শরীরের জলীয় ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়ক এবং ডিহাইড্রেশন রোধ করতে সাহায্য করে।
- এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে।
- নারকেলের পানিতে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা এবং খনিজ পদার্থ যা শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
- নারকেলের পানি প্রাকৃতিকভাবে কম ক্যালরিযুক্ত এবং কোলেস্টেরলমুক্ত। যাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যা হয়, তাদের জন্য নারকেলের পানি উপকারী কারণ এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
নারকেলের শাঁস
নারকেলের শাঁস হচ্ছে নারকেলের মজ্জা যা খাবারে সরাসরি ব্যবহার করা যায়।
- নারকেলের শাঁসে প্রোটিন, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। নারকেলের শাঁসে প্রায় ৩৩% ফ্যাট থাকে, যা স্যাচুরেটেড ফ্যাট হিসাবে পরিচিত। তবে এই স্যাচুরেটেড ফ্যাট স্বাস্থ্যকর এবং শরীরের জন্য উপকারী। নারকেলের ফ্যাটে লৌরিক অ্যাসিড থাকে, যা শরীরের কোলেস্টেরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
- নারকেলের শাঁসে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, ফলে ওজন কমানোর প্রচেষ্টায় নারকেল উপকারী হতে পারে। এ ছাড়াও, নারকেলের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
নারকেলের তেল
- নারকেলের তেল প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং ত্বকের যত্নে অত্যন্ত কার্যকরী। এই তেল খাবারেও ব্যবহার করা যায় এবং এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। নারকেলের তেলে লৌরিক অ্যাসিড থাকে, যা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান। এটি শরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- নারকেলের তেল হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো, কারণ এটি কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়াও নারকেলের তেল হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
নারকেলের অন্যান্য উপকারিতা
- নারকেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর করে।
- এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
- নারকেল হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং থাইরয়েডের কার্যকারিতা উন্নত করে।
- নারকেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। নারকেলের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
সতর্কতা
নারকেল সাধারণত পুষ্টিকর এবং অনেকের জন্য স্বাস্থ্যকর হলেও, কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে বা কারো কারো জন্য নারকেল খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত হতে পারে। যেমন-
অ্যালার্জি: নারকেলে অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা অনেক সময় ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট, বা অ্যানাফাইল্যাক্সিসের মতো মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। নারকেল অ্যালার্জি থাকা ব্যক্তিদের নারকেল এবং নারকেল থেকে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ: নারকেলে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে উচ্চ কোলেস্টেরল, ওজন বৃদ্ধি, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কিডনি সমস্যা: নারকেল পানির উচ্চ পটাসিয়াম উপাদান কিডনির সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এ ছাড়া অন্য কোনো রোগ থাকলেও নারকেল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
Comments