খাদ্যতালিকায় ঢেঁড়স রাখবেন যেসব কারণে

জানিয়েছেন ইবনে সিনা স্পেশালাইজড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ও ডায়াবেটিস এডুকেটর জান্নাতুন নেসা।
ঢেঁড়সের উপকারিতা
ছবি: সংগৃহীত

সুস্থ থাকতে আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি গ্রহণ করা উচিত। সবজি থেকে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়া যায় যা আমাদের দেহের ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। সব ধরনের সবজিতেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এরকমই পরিচিত একটি সবজি ঢেঁড়স।

আজকে জানব ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে। জানিয়েছেন ইবনে সিনা স্পেশালাইজড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ও ডায়াবেটিস এডুকেটর জান্নাতুন নেসা

জান্নাতুন নেসা বলেন, ঢেঁড়সে একটি পুষ্টিকর সবজি যা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। এটি শরীরের জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। ঢেঁড়স খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে এটি শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসতে পারে। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই সবজিটি শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়স থেকে ৩৩ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এতে প্রোটিনের পরিমাণ ২ গ্রাম এবং ফাইবারের পরিমাণ ৩.২ গ্রাম।

প্রোটিনের উৎস

ঢেঁড়সের মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য। শাক-সবজির মধ্যে যেসব খাবার প্রোটিনের ভালো উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়, ঢেঁড়স তাদের মধ্যে অন্যতম। এটি শরীরের পেশী গঠনে সহায়তা করে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত কোষ পুনর্গঠন করে।

খাদ্য আঁশ (ফাইবার)

ঢেঁড়স খাদ্য আঁশে পরিপূর্ণ, যা পরিপাক ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক এবং হজমের সমস্যা কমাতে ভূমিকা রাখে। আঁশ সমৃদ্ধ খাবার যেমন ঢেঁড়স  রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ২০ শতাংশ কমায়।

 ভিটামিন সির সমৃদ্ধ উৎস

ঢেঁড়স ভিটামিন সির চমৎকার উৎস। ভিটামিন সি একটি প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি-কাশি থেকে সুরক্ষা দেয়। এ ছাড়াও, এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে এবং ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।

ফোলেট

ঢেঁড়স ফোলেট (ভিটামিন বি৯)-এর ভালো উৎস, যা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফোলেট গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে সহায়ক। এ কারণে গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য ফোলেট গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভিটামিন এ এবং চোখের স্বাস্থ্য

ঢেঁড়সে ভিটামিন এ রয়েছে যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চোখের রেটিনাকে সুস্থ রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। এ ছাড়াও, ভিটামিন এ ত্বকের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।

পটাসিয়াম

ঢেঁড়স পটাসিয়াম সমৃদ্ধ একটি সবজি। পটাসিয়াম শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও, এটি মাংসপেশির কার্যকারিতা উন্নত করে।

ম্যাগনেসিয়াম

ঢেঁড়সে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব থেকে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এজন্য নিয়মিত ঢেঁড়স খাওয়া হাড়ের সুস্থতার জন্য উপকারী হতে পারে।

লৌহ (আয়রন)

ঢেঁড়সে কিছু পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়, যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন শরীরের অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

ঢেঁড়সে ক্যালরি কম হলেও পুষ্টিতে ভরপুর, যা ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের খাদ্যতালিকায় ঢেঁড়স রাখা উপকারী হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

ঢেঁড়সে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো শরীর থেকে ক্ষতিকারক ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল অপসারণ করে, যা ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এতে কোলেস্টেরল লেভেল খুবই কম। ফলে ঢেঁড়স হৃদরোগীদের ক্ষেত্রেও উপকারী। ঢেঁড়স রক্তে লোহিত কণিকা বাড়াতেও সাহায্য করে।

ঢেঁড়স নানাভাবে খাওয়া যেতে পারে। ভর্তা, ভাজি, ঝোলের তরকারি ইত্যাদি। তবে অল্প তেল এবং অল্প মসলায় রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় কম। ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েটে ঢেঁড়স অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হলেও যাদের ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা আছে, তাদের নিয়মিত ঢেঁড়স খাওয়ার আগে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Comments