২০-২১ অর্থবছরে এস আলমের দুই ছেলের ৭৫ কোটি টাকা কর ফাঁকি

আশরাফুল আলম, আসাদুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলমের দুই ছেলেকে ৫০০ কোটি টাকার অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার সঙ্গে তৎকালীন কর কমিশনারসহ অন্তত ছয়জন কর কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন বলে উঠে এসেছে কর গোয়েন্দাদের তদন্তে।

আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কর কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুর রকিবের তৈরি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এস আলমের ছেলে আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৫ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন এবং ওই কর কর্মকর্তারা এই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

গত ১৫ অক্টোবর এই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় তিন কর কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে।

বরখাস্তকৃত কর্মকর্তারা হলেন—ঢাকা কর অঞ্চল-১৪ এর যুগ্ম কর কমিশনার একেএম শামসুজ্জামান, চট্টগ্রাম কর আপিল অঞ্চলের অতিরিক্ত কর কমিশনার সাইফুল আলম এবং চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-২ এর সহকারী কর কমিশনার আমিনুল ইসলাম।

তারা ২০২০-২১ অর্থবছেরে চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এ কর্মরত ছিলেন।

কর গোয়েন্দা তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর কর্মকর্তা ও তৎকালীন এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা ৫০০ কোটি টাকা কালো থেকে সাদা করার করার জন্য 'নাটক' সাজিয়েছিলেন।

'কালো টাকা সাদা করতে "ভুয়া" পে অর্ডার দিয়েছিলেন এস আলমের দুই পুত্র' শিরোনামে দ্য ডেইলি স্টারে প্রতিবেদন প্রকাশের দুই দিন পর গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ গত ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য চিঠি দেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন কর কমিশনার সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ, কর সার্কেল ২২ (পটিয়া) এর প্রধান সহকারী জমির আহমেদ এবং কর পরিদর্শক লোকমান হোসেনও এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কালো টাকা সাদা করতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ভুয়া পে-অর্ডার তৈরি ও অনলাইন ব্যাংক রেকর্ড কারচুপির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

নথি এবং কর কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এস আলমের দুই ছেলেকে ৫০ কোটি টাকা কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয়ের ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যেখানে প্রকৃত কর হওয়ার কথা ১২৫ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে তারা ২৫ কোটি টাকার দুটি অবৈধ পে-অর্ডারও তৈরি করেছিল, যা পরে সংশোধন করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল শনিবার কল করা হলে ঢাকা কর অঞ্চল-১৪ এর যুগ্ম কর কমিশনার একেএম শামসুজ্জামান নিজে কল রিসিভ করেননি। এক নারী কল রিসিভ করে নিজেকে শামসুজ্জামানের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্বামী এখন কথা বলতে পারবেন না। তিনি অসুস্থ।'

চট্টগ্রাম কর আপিল অঞ্চলের অতিরিক্ত কর কমিশনার সাইফুল আলম এ ঘটনার সঙ্গে নিজের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, সেই সময়ে তিনি বিকল্প হিসেবে পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকলেও করোনাক্রান্ত হওয়ায় অফিস করেননি।

চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-২ এর সহকারী কর কমিশনার আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি নির্দোষ এবং তাকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

তৎকালীন কর কমিশনার সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, 'এই ঘটনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আমি কোনো নথিতে সই করিনি এবং তখন কেউ আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে জানায়নি।'

 

Comments