উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) এক জরিপে দেখা গেছে, পণ্য উৎপাদন খরচের ক্রমাগত উচ্চ মূল্য, অদক্ষ বাজার ব্যবস্থা, পণ্য পরিবহনের উচ্চ হার, বাজার আধিপত্য ও উৎপাদনকারীদের খুচরা বাজারে প্রবেশাধিকার স্বল্প সুযোগ ইত্যাদি কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার 'খাদ্য মূল্যস্ফীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণে গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ' শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে।
এছাড়া ২০২৩ সালের মার্চ থেকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে ঘোরাফেরা করছে, যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক দফায় নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে নীতি সুদহার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ, বর্তমানে তা ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ডিসিসিআইয়ের জরিপে সুপারিশ করা হয়, মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতা কমিয়ে ও অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে যেসব পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য নেই।
ছাড়া স্থানীয় ও আমদানি করা খাদ্যপণ্যের নগদ মেমোর জন্য ট্র্যাকিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমাতে সার, তেল ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডিসিসিআইয়ের নির্বাহী সচিব (পলিসি অ্যাডভোকেসি বিভাগের গবেষণা ও উন্নয়ন) একেএম আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী।
জরিপ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কৃষকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় উৎপাদক পর্যায়ে অধিকাংশ দেশীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে- মোটা ও চিকন চাল, পেঁয়াজ, আলু, মসুর ডাল, কাঁচা ও লাল মরিচ, হলুদ, আদা, রসুন ও রুই মাছ।
অন্যদিকে আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ, আদা, মসুর ডাল, চিনি, গুঁড়া দুধ ও লাল মরিচের দাম বেড়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে মোটা চাল, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস ও ডিম উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে খুব সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরবরাহ কম থাকা। যার প্রভাব গিয়ে পড়ে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দামে।
জরিপে ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস ও কাঁচা ও লাল মরিচের অদক্ষ বাজার ব্যবস্থার বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে গরুর মাংস, রুই মাছ, মসুর ডাল, লবণ ও হলুদের দামে প্রভাব ফেলে উচ্চ পরিবহন খরচ।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, উৎপাদনকারীরা যে দাম পান এবং ভোক্তারা যে দামে কেনেন, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। মধ্যস্থতাকারীদের কারণে উৎপাদনকারীরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। কখনো কখনো কিছু পরোক্ষ খরচ দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, আমরা যদি মজুত, পরিবহন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যায়ে খরচ কমাতে পারি, তাহলে দাম কমতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) সায়েরা ইউনুস বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলো মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা। সাম্প্রতিক সময়ে নীতি সুদহারে পরিবর্তন এনেও মূল্যস্ফীতি কমানো যায়নি, কারণ এর পেছনে অর্থনীতি বহির্ভূত কিছু কারণ রয়েছে।
তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারের গতিশীলতা, বিনিময় হারের অস্থিরতা ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির মতো আরও কিছু কারণও মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী।
দামের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে জোরালো মনিটরিং ব্যবস্থা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্রেড সাপোর্ট মেজার্স উইংয়ের যুগ্ম সচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যথাযথ নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সঠিক বাজার তথ্য বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃত চাহিদা, সরবরাহ, উৎপাদন ক্ষমতা, মৌসুমি চাহিদা, তারতম্য ইত্যাদি খুঁজে বের করতে আমাদের গবেষণা করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপ-পরিচালক স্বজন হায়দার বলেন, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান অনেক সময় দাম বাড়ায়। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির ওপর পরিবহন ব্যয়ের প্রভাব নিয়ে পৃথক গবেষণা হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মশিউল আলম বলেন, সরকার সম্প্রতি অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। তবে পরিকল্পিতভাবে আমদানি করা দরকার।
Comments