বাসে-ট্রেনে যেসব আচরণে বিরক্ত হয় অন্যরা
গণপরিবহন বলতে বোঝায় বাস, রেল, মেট্রোরেল ইত্যাদি। অর্থাৎ যেসব পরিবহন ব্যবস্থার সুবিধা সব নাগরিকই পেতে পারেন। বাংলাদেশে গণপরিবহনের কথা বললে প্রথমেই মাথায় আসে বাসের কথা। এর সঙ্গে ঢাকায় প্রতিদিনের যাতায়াতে যুক্ত হয়েছে মেট্রোরেল। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণপরিবহন কথাটি শুনলে ভেসে ওঠে যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র।
গণপরিবহনে যেহেতু একসঙ্গে অনেক মানুষ ভ্রমণ করেন, তাই নিজের পাশাপাশি অন্যের কথাও চিন্তা করুন। অনেক সময়ে দেখা যায় কিছু যাত্রীর আচরণের জন্য অন্য যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন। গণপরিবহনে ভ্রমণের সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা নিয়েই আলোচনা করব আজ।
মোবাইল ফোনের ব্যবহার
মনে রাখতে হবে আপনি নিজের বাসায় নয়, বাইরে কোনো জায়গায় অবস্থান করছেন। আশেপাশে এত মানুষের মধ্যে চিৎকার করে মোবাইল ফোনে কথা বলবেন না। এতে আপনার আশেপাশের সবাই বিরক্ত হবেন। স্পিকারে কথা বলা, ভিডিও কলে কথা বলা এবং অনবরত মোবাইলের রিংটোন বাজা—এগুলো গণপরিবহনে ভীষণ দৃষ্টিকটু এবং সহযাত্রীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। মোবাইলে গান শুনতে চাইলে হেডফোন ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে মোবাইলের রিংটোন বন্ধ করে রাখা যেতে পারে।
অন্যকে বসার জায়গা করে দিন
যেকোনো গণপরিবহনে নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জায়গা নিয়ে বসবেন না। অনেকেই দেখা যায় অনেক জায়গাজুড়ে বসে থাকেন, অথবা কোনো স্থান থেকে নতুন যাত্রী উঠলে সরে গিয়ে জায়গা করে দেন না। এগুলো এক ধরনের অভদ্রতা। কেউ বাসে উঠলে একপাশে সরে বসে তাকে জায়গা করে দিন। কোনোভাবেই অন্যের বিরক্তির কারণ হবেন না।
অন্যকে নামার সুযোগ করে দিন
অনেক সময় দেখা যায় নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানোর পর সকলেই আগে আগে নামার জন্য তাড়াহুড়ো সৃষ্টি করে থাকেন। কে আগে নামতে পারবে এমন একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ফলে ধাক্কাধাক্কি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। কেউ নামতে চাইলে তাকে সাহায্য করুন। তার পথ রোধ করবেন না। অপরকে সহযোগিতা করে নিজের ভদ্রতার পরিচয় দিন।
সহযোগিতা ও সহমর্মিতা
বাংলাদেশে বাসগুলোতে যেই সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তা হচ্ছে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য সংরক্ষিত সিটে পুরুষদের বসে পড়া। এর ফলে গণপরিবহনে নারীদের নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এরকম পরিস্থিতির কারণে অনেক নারীই মনে করেন গণপরিবহন তাদের জন্য নিরাপদ নয়, যা ভীষণ হতাশাজনক। একটি দেশের সব নাগরিক গণপরিবহন ব্যবহার করার অধিকার রাখেন। সেখানে সহযাত্রীদের এমন আচরণ কাম্য নয়। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া খালি থাকলেও এই সিটগুলোতে বসবেন না। বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাসে ওঠা-নামার সময় অগ্রাধিকার দিন এবং সহযোগিতা করুন। আপনার এরকম সহযোগিতামূলক মনোভাবে সহযাত্রীরা আরামে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ময়লা ফেলবেন না
বাসে উঠলেই দেখা যায় চারিদিকে ময়লা, ভাঙ্গা সিট এবং চারিদিকে অবহেলার চিহ্ন। বাসটি আপনার নিজের না হলেও কখনো কি ভেবে দেখছেন আপনি নিজেই দ্বিতীয়বার বাসটি ব্যবহার করতে পারেন? আর অন্য সহযাত্রীদের দুর্ভোগ তো আছেই। তাই গণপরিবহন ব্যবহারের সময় নিজের কাছেই যেকোনো আবর্জনা যেমন: কোনো প্যাকেট, খাবারের খোসা, পানির বোতল এগুলো রাখুন। পরে নির্দিষ্ট স্থান বা ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন।
এগুলো ছাড়াও একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে গণপরিবহন ব্যবহারের সময় সবার প্রতি সহযোগিতামূলক আচরণ করুন। খেয়াল রাখুন আপনার ব্যাগ যেন কারো কোনো অসুবিধা সৃষ্টি না করে, এমনভাবে মালামাল রাখবেন না যার জন্য অন্যের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বাসে এমনভাবে নিজের সিট হেলাবেন না যেন পেছনের যাত্রীর অসুবিধা হয়, প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞেস করে নিন। হাঁচি-কাশির সময় মুখে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন। বাসের দরজার দিকে ভিড় করবেন না, হাঁটাচলার জায়গা রাখুন। গণপরিবহনে কেউ হেনস্থার শিকার হলে প্রতিবাদ করুন ও তাকে সহযোগিতা করুন। নিজের সহযোগিতামূলক মনোভাবের মাধ্যমে নিজের ও অন্যের যাত্রাকে সুন্দর ও আরামদায়ক করে তুলুন।
Comments