সন্ধ্যায় লেক্সিংটনের শহরতলী

যুক্তরাষ্ট্রের লেক্সিংটন
লেক্সিংটন। ছবি: সংগৃহীত

নতুন কোনো দেশ বা অঞ্চল না, আজ না হয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লেক্সিংটন শহরের ডাউনটাউন কিংবা শহরতলী নিয়েই লিখি। নিজস্ব পরিসরে ছিমছাম এই শহরতলী। বড় শহরগুলোর মতো অট্টালিকা দিয়ে ঘেরা নয়।

স্টুডেন্ট সেন্টার থেকে বেরিয়ে সামনে এগুলে আমেরিকার সবচেয়ে পরিচিত ম্যাকডোনাল্ড'স দিয়ে শুরু। তারপর আছে নানা কফিশপ, রেস্তোরাঁ, পাব, একটি বিশাল অট্টালিকার অফিস। সন্ধ্যার বেগুনি-গোলাপি রঙের আকাশের নিচে আবার প্রশস্ত রাস্তা, দুপাশে একটু ভারিক্কি রেস্তোরাঁ, পার্ক।

লেক্সিংটন এমনিতেই অত ভিড়ের শহর নয়। আমরা মজার ছলেই বলতাম, 'একটা মফস্বল'। এই শহরের যেমন নিজের মতো ধীরগতিতে চলার বৈশিষ্ট্য আছে, তেমনি এর ডাউনটাউনেরও। তবে এই শান্ত পরিবেশটাই যেন বেশি ভালো লাগত। 

সারাদিন ক্লাস-কাজের পর্ব শেষে যখন সূর্য ডুবছে, সপ্তাহান্তের সেই সময়টায় আমুদে বাতাসে হেঁটে পৌঁছে যেতাম শহরতলী। নিজের গাড়ি না থাকায় কখনো ডর্ম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস, তারপর বাকিটুকু হেঁটে কোনো কফিশপে দেখা হতো বন্ধুদের সঙ্গে। এক কাপ কফি হাতে শুরু হতো আমাদের আড্ডা। শহরের ভিড়ে, রাস্তায় মানুষজনের কোলাহল আমাদের কথার সঙ্গে মিশে গিয়ে আরও রঙিন হয়ে উঠত। কফিশপের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়তেই সামনে দেখা মিলত মানুষদের হাসি-ঠাট্টা। এখানে আড্ডার মেজাজটাই আলাদা। বিশেষ করে 'থার্সডে নাইটে' কেন্টাকির বিখ্যাত সেই বার্বান হাতে নিয়ে বিভিন্ন গানের সুর, স্থানীয়দের নাচ এবং বিভিন্ন রকমের খাবার মিলিয়ে আমেজটা থাকত বেশ নির্ভার।

'ওল্ড স্কুল কফি' নামে আমাদের ছোটবেলার এলেমেন্টারি স্কুলের আদলে তৈরি কফি শপ দেখেছি অধিকাংশের পছন্দের। ঐতিহাসিক ড্যুডলি স্কয়ারে এই দালানটি তৈরি করা হয়েছিল সেই ১৮৮১ সালে। শুরুর দিকে পাবলিক স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এখন পুরোটাই ক্যাফে হিসেবেই বরাদ্দ।

কফি আর ভিন্ন কুইজিন ছাড়াও এ শহরতলীতে আছে দ্য বলিভার আর্ট গ্যালারি। সেখানকার দ্য ডাউনটাউন আর্টস সেন্টারে রয়েছে ভিস্যুয়াল আর্টের বিভিন্ন কলা, শিক্ষক, থিয়েটারের ব্যবস্থা। চলতে গিয়ে চোখে পড়বে আব্রাহাম লিংকনেরসহ প্রায় ৩০টির মতো রঙিন মুর‍্যাল, যেগুলো সন্ধ্যার আলোয় ইতিহাস-ফেলে আসা নানা শ্লোক নিয়ে আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

আছে পাবলিক লাইব্রেরিও। যদিও আমার এই পাঠাগারে যাওয়া হয়নি, তবে বন্ধুদের কাছে শুনেছি বিভিন্ন দেশের সাহিত্য, বহু পুরোনো আমলের চমৎকার সব বই সহজেই পাওয়া যায় এখানে। শিক্ষার্থীদের জন্য খরচাটাও তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

কখনো এই রাজপথেই মেক্সিকান, ইতালিয়ান বিশেষ বিশেষ দিবসের নানা আয়োজন হতো। তখন যানবাহন বন্ধ করে শুধুই পথচারীর জন্য ছেড়ে দেওয়া হতো এই পথ। নানা ছোট কার্ট, মেক্সিকান দোকানপাট ঘুরে আমরা বন্ধুরা দাঁড়াতাম সেই খাবার দোকানে।

সন্ধ্যার শেষদিকে আমরা যখন বাড়ির পথে হেঁটেছি, তখন লেক্সিংটনের রাতের আকাশের নিচে আমাদের একে অপরের সঙ্গে কেবল বন্ধুত্ব নয়, জীবনের অনন্য মুহূর্তগুলোও ভাগাভাগি হয়েছে। পুরোনো দিনের গল্প, বর্তমানের চ্যালেঞ্জ আর ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো সব একে একে উঠে এসেছে আমাদের কথার মাঝে। এই শহরতলী আমাদের দিয়েছে আনন্দ, স্মৃতি আর একসঙ্গে থাকার বেশ ভালো কিছু গল্প।

 

Comments

The Daily Star  | English
Rizvi criticizes PR system in elections

PR system a threat to democracy: Rizvi

Under the PR system, the party, not the people, will choose MPs, he says

2h ago