নেত্রকোণার ৫০ গ্রাম প্লাবিত, খাদ্য সংকটে ধোবাউড়া-হালুয়াঘাটের বন্যার্তরা

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াখাটের বন্যার্তরা খাদ ও বিশুদ্ধ সংকটে আছেন। ছবি: সংগৃহীত

দুই দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার পূর্বধলা, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্লাবিত ৫০ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

অন্যদিকে, ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ও হালুয়াঘাটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন দুই উপজেলার প্রায় দুই লাখ পানিবন্দি মানুষ।

নেত্রকোণা

গত রোববার ভোর থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধ ভেঙে নেত্রকোণার পূর্বধলা, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

পাশাপাশি তীব্র স্রোতে রাস্তা ও বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিন উপজেলার ৫০ গ্রামের পানিবন্দি মানুষ। পানির তোড়ে ভেসে গেছে অনেক বসতভিটার মাটি ও আসবাবপত্র।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান আজ সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সোমেশ্বরী ও কংস নদীর পানি দুর্গাপুর ও জারিয়া পয়েন্টে কমেছে। তবে উপদাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাহাড়ি ঢলের কারণে নেত্রকোণার প্রায় ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ঢলের পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। 

কলমাকান্দা উপজেলায় রংছাতি ইউনিয়নের পাঁচগাও এলাকায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পানির স্রোতে বেশ কিছু জায়গায় ভেঙে গেছে এবং এতে ওই এলাকা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এছাড়া উঠতি আমন ফসল ও পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও মাছের খামারিরা। 

চন্দ্রডিগা এলাকার বাসিন্দা সাহেব আলী ডেইলি স্টারকে জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় শুকনো খাবার ও গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। 

রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান পাঠান বাবুল বলেন, 'সার্বিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ। পাঁচগাঁও-কলমাকান্দা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হাজার হাজার একর আমন জমি এখনো পানির নিচে।'

জানতে চাইলে কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. শহীদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। উপজেলায় ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।' 

ধোবাউড়া-হালুয়াঘাট

নেতাই নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেওয়ায় এবং গত তিন দিন ধরে দফায় দফায় ভারী বর্ষণের কারণে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাটের অন্তত ৬০ হাজার পরিবারের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। 

ধোবাউড়ার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, কালিকাপুর জিগাতলা, ঘোঁষগাও, পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়ন এবং হালুয়াঘাটের ১২ ইউনিয়নের সবকয়টি প্লাবিত হয়েছে।

তবে, দুই উপজেলার পানিবন্দি লোকজনের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের চরম সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। 

হালুয়াঘাটের বিলডোরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হামিদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার এলাকার অন্তত ১০০ পরিবার চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। তিনি বলেন, 'আমার এলাকায় সিংহভাগ পরিবার দিন আনে দিন খায়। এখন পর্যন্ত এখানে কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি।'

একই এলাকার বাসিন্দা যতীন্দ্র বর্মন বলেন, 'বন্যার কারণে গত কয়েকদিন ধরে মাছ না ধরতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে খাদ্য সংকটে পড়েছি।'

একই কথা জানান বর্মনপাড়ার আরও কয়েকজন।

ধোবাউড়ার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর জানান, তার এলাকায় ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি কমতে শুরু করলেও খেটে খাওয়া মানুষেরা খাদ্য সংকটে পড়েছেন। পানিবন্দি পরিবার প্রায় ১৫ হাজার হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৮০ পরিবারকে ত্রাণের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। 

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন র‌্যাপিড রেসপন্স বিডি'র সাংগঠনিক সম্পাদক তাসফিক হক নাফিও বলেন, 'প্রায় সব জায়গায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলেছে। দ্রুত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা দরকার।'

বন্যায় ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাটে রোপা আমনের প্রায় ২০ হাজার একর জমি সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, প্রায় ১০ হাজার ৮৮০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজিম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দুই উপজেলায় ২০ মেট্রিকটন চাল এবং দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজ থেকে তা বিতরণ করা হচ্ছে।'

পানিবন্দিদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। 

এদিকে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ফুলপুর উপজেলার হাটপাগলা এলাকা থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। মৃত উজ্জ্বল মিয়া (৪৫) শেরপুর জেলার নকলা পৌর এলাকার মৃত আজমত আলীর ছেলে।

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হাদী জানান, উজ্জ্বলের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Big relief for BCB as media rights for Ban-Pak T20I series sold

The Bangladesh Cricket Board (BCB) heaved a sigh of relief after managing to sell its worldwide media rights for the national team's upcoming three-match home T20I series against Pakistan.

Now