বন্যার পানি নামার পর তিস্তাপাড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন

সোমবার বিকেল থেকে হরিণচড়া গ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও কৃষি জমি। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের গ্রাম হরিণচড়ার সুফিয়া বেগমের পরিবার বসতভিটা ও দুই বিঘা জমি হারিয়ে এখন প্রায় নিঃস্ব। সোমবার বিকেলে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় দুটি টিনের ঘর সরিয়ে নিতে পারলেও চোখের সামনে ১০ শতাংশ জমির বসতিভটা নদীতে চলে যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এই গ্রামে তীব্র আকার ধারণ করেছে তিস্তার ভাঙন।

সুফিয়া বেগম(৪৮) কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, 'বাস্তু ভিটাটাও তিসআ নদীত চলি গ্যাইল এ্যালা হামরা কোনটে থাকমো। ক্যাং করি হামরাগুলা বাঁচমো। কাইও হামার খবর নিবার নাইকছে না।'

সুফিয়া বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সোমবার সকালে তাদের ঘরে দুই-তিন ফুট বন্যার পানি উঠে। সোমবার দুপুরের পর পানি নেমে যায়। সোমবার বিকেল থেকে শুরু হয় নদী ভাঙন। মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে তাদের দুই বিঘা জমি ও বসতভিটা তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

'সোককিছু শ্যাষ হয়া গ্যোইছে হামার। ছওয়া পোয়া নিয়া মাইনসের বাড়িত ঠাঁই নিছি। এ্যালা হামরা খামো কি। ক্যাং করি হামার সংসার চইলবে,' বলছিলেন তিনি।

সুফিয়া বেগমের মতোই কাঁদছিলেন মোসলেমা খাতুন (৫৫)। মোসলেমা খাতুনের পরিবারও বসতভিটা হারিয়ে এখন বিপদের মুখে। নিজেদের দুটি টিনের ঘর সরিয়ে সরকারি রাস্তার ওপর তুলেছেন। কিন্তু নিজেদের বসতভিটা বলতে আর কিছু থাকল না তাদের।

হরিণচড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার সকাল থেকে হরিণচড়া গ্রামের প্রায় ২০টি বসতভিটা ও ১০০ বিঘা জমি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। এখানে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। একের পর এক বসতভিটা ও কৃষি জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো আশ্রয় নিচ্ছে রাস্তার ওপর, অন্যের জমিতে ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। এই মুহূর্তে তিস্তার ভাঙন রোধ করা না গেলে বহু মানুষ হতদরিদ্র হয়ে পড়বে।

জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই লালমনিরহাট সদর উপজেলার হরিণচড়া, খলাইঘাট ও খুনিয়াগাছ, আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড়, কালীগঞ্জ উপজেলার শোলমারী ও হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ও সিন্দুর্ণা গ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছেন। হরিণচড়া গ্রামে তিস্তার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই গ্রামটি আগে থেকেই ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল। এর আগে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো হয়েছিল। সোমবার বিকেল থেকে ভাঙন বেড়েছে। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। আপাতত এসব পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Bad loans hit alarming record

Awami League-affiliated businesses had already put the country’s banking sector in trouble with huge bad debts, but the loans disbursed through irregularities to these companies turned sour even at a more alarming pace after the party’s ouster.

5h ago