বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপে আবেদনের সুযোগ

বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপ
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপ উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন উন্নয়ন বিষয়ক ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে অধ্যয়নের সুযোগ।

জাপানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই স্কলারশিপ প্রোগ্রাম বিশ্বব্যাংকের সদস্য দেশগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান করে আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে। উন্নয়নশীল দেশের একজন সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারেন, কেননা এটি উন্মোচন করে দিতে পারে বিশ্বমানের শিক্ষা এবং পেশাগত উন্নয়নের সুযোগের প্রবেশদ্বার। এসব দিক বিবেচনা করে আবেদন করা যেতে পারে বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপে।

অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই স্কলারশিপটি পেতে অনেক দেশ থেকেই শিক্ষার্থীরা আবেদন করেন বিধায় নিজেকে এর জন্য তৈরি করে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে আত্মপ্রকাশই হতে পারে আপনার লক্ষ্য। এটি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের উন্নত গবেষণা, পেশাদারদের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক এবং উদ্ভাবনী কৌশল অনুশীলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়।

বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপ-২০২৫ 

বৃত্তি আয়োজক: জাপান ও বিশ্বব্যাংক
অর্থায়নকারী: জাপান সরকার এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক
কোর্স স্তর: স্নাতকোত্তর ডিগ্রি
আর্থিক কভারেজ: সম্পূর্ণ অর্থায়িত (যাতায়ত, টিউশন, ভিসা ফি এবং ভাতা)

আবেদনের যোগ্যতা

বিশ্বব্যাংকের সদস্য দেশের নাগরিক হতে হবে এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা যাবে না। এই স্কলারশিপে আবেদন করার কোনো সর্বোচ্চ অথবা সর্বনিম্ন বয়সসীমা নেই।

বিশ্বব্যাংকে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা অথবা কোনো কর্মকর্তার আত্মীয় হলে তিনি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এই স্কলারশিপে আবেদনের অন্তত তিন বছর আগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। উন্নয়ন সম্পর্কিত ক্ষেত্রে অন্তত তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সব প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করে, অফার করা নির্দিষ্ট মাস্টার্স প্রোগ্রামের একটিতে নিঃশর্তভাবে ভর্তি হতে হবে।

স্কলারশিপে অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপ পেলে বিশ্বের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থাকবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস, ইউনিভার্সিটি অব টোকিও, ইউনিভার্সিটি অব লিডস ও ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স। তবে যেকোনো একটি বাছাই করতে হবে প্রোগ্রাম অনুযায়ী। 

স্কলারশিপ প্রোগ্রামের বিষয় 
 
বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপে মাস্টার্স করতে চাইলে তাদের পূর্বঘোষিত ক্ষেত্রগুলোর যেকোনো একটিতে ডিগ্রি অথবা কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যেমন: অর্থায়ন, সুশাসন, সামষ্টিক অর্থনীতি, দারিদ্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ, নগরায়ন, পানি, শক্তি, অবকাঠামো, এবং ভঙ্গুরতা, দ্বন্দ্ব ও সহিংসতা। এই ক্ষেত্রগুলো বিবেচনায় রাখলে বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপ পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।

সুবিধা

বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপ পেলে নিজ দেশ এবং হোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাউন্ড ট্রিপ বিমান ভাড়া দেওয়া হবে। প্রতিটি ট্রিপের জন্য ৫০০ ডলার ভ্রমণ ভাতা দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের সব টিউশন ফি মওকুফ করা হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবীমার নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে। ক্যাম্পাসে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। একটি মাসিক ভাতা দেওয়া হবে, যা দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

আরও যা জানা প্রয়োজন

বিশ্বব্যাংক কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর মাস্টার্স করলে আপনাকে স্কলারশিপ প্রদান করবে। তাদের লিস্টের বাইরের কোনো বিষয়ে মাস্টার্স করতে চাইলে আপনাকে স্কলারশিপের জন্য গণ্য করা হবে না। এই লিস্টটি আপনি বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন।

শুধু স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য আপনাকে স্কলারশিপ প্রদান করা হবে। স্নাতক কিংবা পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য এই স্কলারশিপ প্রযোজ্য নয়। আপনি যদি পূর্বে মাস্টার্স প্রোগ্রাম অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করে থাকেন, কিন্তু এই স্কলারশিপ পাওয়ার সব শর্তাবলী পূরণ করে আরেকবার মাস্টার্স প্রোগ্রামে অংশ নিতে চান, তাতেও কোনো বাধা নেই। তবে এই স্কলারশিপে অধ্যয়নের সময় পরিবারের সদস্যদের আনা এবং তাদের খরচ বহন করা যাবে না।

আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর পিএইচডি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না। এই স্কলারশিপ আপনাকে পরবর্তীতে পিএইচডি করার জন্য কোনো বাধা দেবে না, এ ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী বিচার করা হবে। কিন্তু আপনার স্টেটমেন্ট অব পারপাসে আগেই উল্লেখ করতে হবে পরবর্তী ভাবনা সম্পর্কে। 

আবেদনের সময় যা প্রয়োজন

বিশ্বব্যাংক স্কলারশিপের আবেদনপত্র, স্নাতক প্রোগ্রামের ট্রান্সক্রিপ্টের কপি, কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট, ভাষার সার্টিফিকেট, দুটি প্রফেশনাল রেফারেন্স চিঠি, লেটার অব মোটিভেশন, সিভি, স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে নিঃশর্ত (অর্থায়ন ব্যতীত) ভর্তির চিঠি, ব্যক্তি হিসেবে আবেদনকারীকে শনাক্ত করার জন্য পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন অথবা বিবাহের সনদপত্র এবং চিকিৎসা সনদপত্র যুক্ত করতে হবে।

আবেদনের সময়সীমা

প্রতিবছর নির্দিষ্ট দুটি সময়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকে। অ্যাপ্লিকেশন উইন্ডো ১ জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে খুলবে। অ্যাপ্লিকেশন উইন্ডো ২ মার্চের শেষ থেকে মে ২০২৫ এর শেষ পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে আবেদনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনি কোন মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করতে চাচ্ছেন। প্রার্থীদের অবশ্যই সেই উইন্ডোতে আবেদন করতে হবে, যার অধীনে তাদের পছন্দসই মাস্টার্স প্রোগ্রাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

যেভাবে আবেদন করবেন

আবেদন করার জন্য প্রথমেই যাচাই করে নিন আপনি উল্লেখিত যোগ্যতার শর্তাবলী পূরণ করতে পেরেছেন কি না।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নির্দিষ্ট যেসব মাস্টার্স প্রোগ্রামে এই স্কলারশিপ প্রদান করা হয় প্রথমেই তার লিস্ট দেখে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিজের আগ্রহের বিষয় বেছে নেওয়াটাই উত্তম। এরপর সেই লিস্টের একটি প্রোগ্রামে যদি আপনি নিঃশর্ত অফার লেটার পেয়ে যান, তবেই আবেদন করতে পারবেন।

আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করুন এবং কোনো বিভ্রান্তি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইমেইল করতে পারেন। এরপর আবেদনপত্র প্রস্তুত করুন। এই আবেদনপত্র আপনি সেলফোন দিয়ে পূরণ করতে পারবেন না, এ ক্ষেত্রে ল্যাপটপ অথবা ডেস্কটপ ব্যবহার করুন। 

যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করছেন তাদের কোনো শর্তাবলী আছে কি না দেখে দিন। এরপর নির্দিষ্ট অনলাইন পোর্টালে গিয়ে আবেদন জমা দিন। এরপর আপনার কাজ শুধু ফলাফলের বিজ্ঞপ্তির জন্য অপেক্ষা করা। 

Comments

The Daily Star  | English

Jatrabari turns into battlefield as students clash

Scores of people were injured as students of three colleges clashed at Dhaka's Jatrabari today, turning the area into a battlefield

5h ago