বন্যায় ধানের আবাদ ও উৎপাদন কমতে পারে

ফেনী সদর উপজেলায় বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ধান শুকাচ্ছেন এক নারী। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

দেশে সাম্প্রতিক বন্যার কারণে ধানের উৎপাদন কমে যেতে পারে। আউশ ও আমন ধানের আবাদে প্রভাব ফেলবে। গত সপ্তাহের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) এ তথ্য জানায়।

গত মে মাসে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ বিপণন বর্ষে প্রধান খাদ্যশস্য ধানের আবাদ এক দশমিক ১৫ কোটি হেক্টর হতে পারে। সংস্থাটির আগের পূর্বাভাস এক দশমিক ১৯ কোটি হেক্টরের তুলনায় তিন দশমিক চার শতাংশ কম।

বুধবার ইউএসডিএ বাংলাদেশের গ্রেইন অ্যান্ড ফিড আপডেটে বলা হয়—এর ফলে চাল উৎপাদন দুই দশমিক চার শতাংশ কমে তিন কোটি ৬৮ লাখ টন হতে পারে।

এই পূর্বাভাস এমন এক সময়ে এলো যখন দেশে চালের দাম বাড়ছে। মোটা চালের দামের তুলনায় আমদানি করা চালের দাম বেশি হবে এমন আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।

গত জুনে শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাল আমদানি হয়নি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্তও চাল আমদানি হয়নি।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বুধবার ঢাকায় খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। এক বছর আগের তুলনায় তা দুই দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।

চিকন চালের দামও বেড়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

চালের বর্তমান দাম এক বছর আগের তুলনায়ও বেশি।

আউশ ধানের আবাদ শুরু হয় এপ্রিল-মে মাসে। ফসল কাটা হয় আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। আমনের আবাদ আগস্ট-সেপ্টেম্বরে শুরু হয়। ধান কাটা হয় নভেম্বর-ডিসেম্বরে।

তবে জলবায়ুর বিবর্তন, বিলম্বিত বর্ষা ও বৃষ্টির হেরফেরের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান চাষ দেরি হচ্ছে।

মার্কিন সংস্থাটি বোরো মৌসুমের ধানকে বিপণন বছরের প্রথম ফসল হিসেবে ধরেছে। শুষ্ক মৌসুমের এই ফসল কাটা হয় এপ্রিল-মে মাসে।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে—চলতি বিপণন বছরে খরা, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড় ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও বোরো ও সাথী ফসলের ফলন খুব ভালো ছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এ বছর চালের মোট উৎপাদন দুই কোটি পাঁচ লাখ টন।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা আউশ আবাদের পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে নয় লাখ হেক্টর জমিতে। এটি আগের পূর্বাভাসের তুলনায় ১৮ দশমিক দুই শতাংশ কম।

সে অনুযায়ী উৎপাদন ২১ লাখ টন থেকে ১৬ শতাংশ কম হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইউএসডিএ বলেছে, গত জুন ও জুলাইয়ের শুরুতে আকস্মিক বন্যার কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ভারী বর্ষণ ও বাংলাদেশের উত্তরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক এলাকায় আউশের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইউএসডিএর প্রতিবেদন অনুসারে, কৃষকরাও আউশ চাষে কম আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কারণ অনেকে সরিষার পর বোরো আবাদ করেছেন। ফলে আউশ চাষে পর্যাপ্ত সময় থাকছে না।

এতে আরও বলা হয়, আউশ চাষে কৃষকদের আগ্রহ কম দেখানোর আরেক কারণ হচ্ছে ধানের রোগবালাই ও পোকার উপদ্রব বেড়ে যাওয়া। আউশের ভালো জাতের অভাবও আবাদ কমে যাওয়ার আরেক কারণ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আউশ চাষে উৎসাহিত করতে কৃষকদের বীজ ও সারসহ প্রণোদনা দিলেও খুব কম কৃষক তা গ্রহণ করেছেন।

'এর পরিবর্তে কৃষকরা আমন চাষকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন' বলে জানাচ্ছে ইউএসডিএ।

গত মাসে দেশের পূর্বাঞ্চলে অপ্রত্যাশিত বন্যায় বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় আমন চাষে জমির পরিমাণ তিন দশমিক চার শতাংশ কমে ৫৭ লাখ হেক্টরে দাঁড়াতে পারে।

গত আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যার কারণে সার্বিক ফলনও কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ।

এতে আরও বলা হয়, গত ১৮ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে ভারী বর্ষণ হলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বন্যা হয়।

গত ২০ আগস্ট থেকে মুহুরী, কাহুয়া, সিলোনিয়া ও গোমতী নদী দিয়ে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনী ও কুমিল্লাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোয় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।

ইউএসডিএ বলেছে, বন্যায় আমনের দুই লাখ হেক্টর বীজতলার ক্ষতি হয়েছে।

সংস্থাটি আরও বলছে, সাধারণত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমনের চারা রোপণ করা হয়।

এতে বলা হয়, বন্যার পানি নেমে গেলে ও গত ৩১ আগস্টের মধ্যে কৃষকরা যদি বীজতলা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত বীজ পান তাহলে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ আমন খেতে তারা আবার চারা রোপণ করতে পারবেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকার অধিকাংশ জেলায় আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে।

বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণের সময় গত তিন বছরের তুলনায় এ বছর বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব জেলার কিছু কৃষককে আংশিক সেচ দিতে হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোয় আমন চাষ চলছে।

ইউএসডিএ জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় কৃষকরা সাধারণত আবহাওয়ার কারণে প্রায় এক মাস পর আমন চাষ শুরু করেন। তারা মৌসুমি বন্যার পানি কমার অপেক্ষায় থাকেন।

এই জেলাগুলোয় সাধারণত আগস্টে আমন চাষ শুরু হয়। তা চলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

Comments

The Daily Star  | English

Stocks at record low, rebound expected later this year

The Dhaka Stock Exchange (DSE) has reached a point where its shares are record cheap due to the recent macroeconomic turbulence and higher interest rates, which have diverted investments away from securities, according to leading stockbroker IDLC Securities.

11h ago